SlideShare a Scribd company logo
1 of 38
Download to read offline
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 1/43
উপনিষদ (Upanishad in Bengali)
ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা
সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language
with original texts, annotaions, meanings, etymolgies and
explanation.)
December 12, 2023
ঈশোপনিষদ্‌
।
ব্রহ্মখণ্ড (সারাংশ)।
যিনি ভিন্ন অন্য কেউ নেই, যাঁর থেকে আমাদের জন্ম, যাঁতে স্থিতি এবং যাঁতে আমরা লীন হই, যিনি আততম (আতত
+ম), অর্থাৎ যিনি সব কিছু তে বিস্তৃ ত (আতত) এবং সকলকে অতিক্রম করে বিস্তৃ ত (*ম), তিনি সকলের মধ্যে স্থিত
আত্মা। (* 'ম' অর্থে 'চরম' বা 'আত্যন্তিক' বোঝায়।)
এই আত্মা একদিকে অসঙ্গ, নির্লেপ, নিষ্কল, নিষ্ক্রিয় আবার ইনি প্রাণময়, কামময়, সকল কিছু র কর্ত্তা, সকল কিছু র
বিজ্ঞাতা। 'কে আত্মা' , এই প্রশ্নের উত্তরে, ঋষি বলেছেন, ' যিনি আমাদের প্রাণ সকলের মধ্যে বিজ্ঞানময় এবং হৃদয়ে
অন্তর্জ্যোতি'।(বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ৪।৩।৭ দ্রষ্টব্য। )
আত্মা জ্ঞানময়। ইনি একই সাথে বিশুদ্ধ নিজ বা আত্মবোধ স্বরূপ এবং প্রাণময়, বোধময়, চিৎ-চাঞ্চল্যময়। সমস্ত বিশ্ব
এই আত্মার জ্ঞান বা বোধক্রিয়ার থেকে জাত। আমার নিজেরাও জ্ঞানময় বা অনুভূ তিময়। আমরা যা কিছু জানি তা
এই জ্ঞান বা বোধেরই মূর্ত্তি এবং এর নাম বেঁচে থাকা। এই আত্মা আছেন বলেই বা এঁর নিজত্ব নিয়েই আমরা আত্ম-
পরিচয় দিই বা আমরা নিজবোধ-যুক্ত। আমি বা অহং বোধ এই নিজবোধের উপরই ফু টে আছে এবং নিদ্রা বা মৃত্যুর
সময় এই নিজেতেই 'আমি' বিলীন হই। আমরা যে জ্ঞান বা বোধের বিশ্বে রয়েছি, এইটি দেখা অভ্যাস হতে থাকলে,
প্রতি জ্ঞান বা বোধের মূলে এই অরিণামী, চিরস্থির নিজ বা আত্মবোধের দিকে দৃষ্টি পড়ে যায়। আমাতে যত বোধ বা
অনুভূ তি ফু টছে, তার সাথে আমি বা যে 'অহং' অভিমানী সে জড়িয়ে থাকে বা সঙ্গত হয়ে থাকে।প্রতি মুহূ র্ত্তে আমি
নানা বোধময় হয়ে নিজের অন্তরে জ্ঞান বা বোধ ভূ মিতে জাত হচ্ছি, নিরন্তর জাত হচ্ছি এই নিজ বা আত্মবোধ থেকে।
এই আত্মাই নিরন্তর অহং এবং তৎ-সংশ্লিষ্ট সর্ব্ব বোধ বা অনুভূ তির আকারে জাত হচ্ছেন, এবং তাকে আমরা
আমাদের বোধ বা অনুভূ তি বলে ধারণা করছি। নিরন্তর জাত হচ্ছেন, তাই এঁর নাম 'নিজ'। আবার এত কিছু হয়েও
ইনি যেমন, তেমনই থাকেন, পরিবর্ত্ত ন হীন, স্থির, অব্যয়। সেই জন্য 'নিজ' শব্দের আর একটি অর্থ হলো 'নাস্তি জন্ম
যস্য'----- যিনি জন্মান না, যিনি 'অজ'। প্রতি জীব বা প্রতি সত্তায় এঁকে যখন স্বতন্ত্র ভাবে দেখা হয় বা সম্বোধন করা
হয়, তখন এঁর নাম ' ক্ষর আত্মা', 'প্রত্যক্ ‌আত্মা', 'অণু-আত্মা'। ইনিই সর্ব্ব-ভূ তের, সর্ব্ব জীবের আত্মা, এই দর্শন হলে
এঁকে 'অক্ষর আত্মা, কূ টস্থ আত্মা' ইত্যাদি বলা হয়। এঁর থেকেই ক্ষরিত হয়ে সবাই হয়েছে, এবং ইনি ক্ষরিত হয়েও
ক্ষরিত হননি, তাই ইনি অক্ষর, আর প্রতি জীবে ইনি ক্ষর। আর ইনি ক্ষর এবং অক্ষর উভয়ই, তাই এঁকে পরমাত্মা বা
পুরুষোত্তম বলা হয়। এই আত্মা স্বয়ংপ্রকাশ, অর্থাৎ ইনি নিজেই নিজেকে নিজের দ্বারা প্রকাশ করেন। এই জন্য ইনি
স্বয়ংশক্তি, কেননা এই প্রকাশ শক্তি ইনি নিজেই। ইনি অসঙ্গ, অর্থাৎ সকল কিছু হয়েও কোন কিছু তে লিপ্ত বা সঙ্গবান
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 2/43
হন না, আবার যেহেতু ইনি নিজেই সব, ইনি ভিন্ন আর কোথাও কেউ নেই তাই ইনি অসঙ্গ; কেননা নিজেই যখন সব,
তখন কে কাতে সঙ্গত হবে, বা সঙ্গত হয়েও অসঙ্গই থাকেন। এই যে আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তি আর আত্মা, এঁরা
একান্ত ভাবে অভেদ। ইনি দেখেন না তা নয়, ইনি দেখেও দেখেন না, কেননা ইনি দ্রষ্টা এবং দৃশ্য উভয়ই; ইনি শোনেন
না তা নয়, ইনি শুনেও শোনেন না, কেননা ইনি শ্রোতা এবং শব্দ উভয়ই; ইনি আঘ্রাণ করেন না তা নয়, ইনি আঘ্রাণ
করেও আঘ্রাণ করেন না, কেননা ইনি ঘ্রাতা এবং ঘ্রাণ উভয়ই; এই প্রকারই সব। (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌৪।৩।২৩ মন্ত্র
এবং পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।)। ইনি দর্শন করে চক্ষু হন (পশ্যন্‌চক্ষুঃ ), শ্রবণ করে শ্রোত্র হন (শৃন্বন্‌শ্রোত্রঃ), মনন
করে মন হন (মন্বানো মন:), ইত্যাদি (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ১।৪।৭ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ ইনি যা হন, সেই হওয়াটাকে
জানেন বা অনুভব করেন।ইনি যে জানছেন বা বোধময় হচ্ছেন, তার দ্বারা আমাদের পরিবর্ত্ত ন হচ্ছে। এঁর জানা বা
বোধ থেকে সব হচ্ছে, তাই এঁর জানা বা বোধক্রিয়ার নাম 'সম্ভূ তি'। আর সেই সম্ভূ তিতে যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে, তদনুসারে
আমরা অনুভব করছি, অর্থাৎ বহির্বিশ্বে যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে, তা আমাদের অন্তরে অনুভূ তি ফোটাচ্ছে। এই অনুভূ তি বা
বোধের দ্বারা আমরা ক্রমশঃ পরিবর্ত্তিত হচ্ছি, ক্রমশঃ উন্নততর মানসিকতা সম্পন্ন হচ্ছি, নিজের অবিনশ্বরতা সম্বন্ধে,
নিজের জীবনের প্রকৃ ত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছি।এর নাম অভ্যুদয় এবং বিবর্ত্ত ন। এই ভাবে ইনি যে
আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন, এই জন্য এঁকে নিয়ন্তা অথবা ঈশ্বর বলা হয়। নিজেকে বহু করে, অনন্ত অনন্ত জীব
হয়েছেন এবং প্রতিটি সৃষ্ট জীবের অন্তরে ইনি ক্ষর আত্মা হয়ে বিরাজ করছেন। প্রতিটি জীবের মধ্যে, সৃষ্টির প্রতিটি
কণাতে, ঈশ্বরত্বের দ্বারা তিনি তাঁর পরম আত্মস্বরূপতাকে, ব্রহ্মত্বকে জাগিয়ে তু লছেন। মৃত্যুর দ্বারা ছিন্ন, সীমিত, পুনঃ
পুনঃ বাধ্যতা-মূলক যে জন্ম-মৃত্যুর আবর্ত্ত ন তা চিরকালের জন্য আমাদের থেকে তিরোহিত হবে।মুক্ত দর্শন, মুক্ত
শ্রবণ, মুক্ত মনন ইত্যাদি আমাদের স্বভাবিক বৃ ত্তি হবে। একদিন প্রত্যেকে ' অহং ব্রহ্মাস্মি' (আমি ব্রহ্ম) এই আত্ম
পরিচয় দিয়ে নিজের পরম স্বরূপেই নির্বাণ প্রাপ্ত হবে।
এই উপনিষদে বিশেষ ভাবে আত্মার ঈশিত্ব, সেই ঈশিত্বকে স্বীকৃ তি দিয়ে জীবন নির্ব্বাহ, সম্ভূ তি এবং দেবময় বিশ্ব,
অনুভূ তিময় জীব ও জীবের অভ্যুদয়, এবং অন্তকালে এই নশ্বর শরীর পরিত্যাগ করে মহাপ্রাণে, অনিলে, প্রাণাগ্নিতে যে
এই পার্থিব জীবনের সমাপ্তি, তা উক্ত হয়েছে।
মহর্ষি বিজয়কৃ ষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৫-১৯৪৫) এবং তাঁর প্রধান শিষ্য মহর্ষি ত্রিদিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেশ
অনুসরণ করে এই উপনিষদের অর্থ, নিরুক্ত এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা যথা সম্ভব প্রকাশ করা হলো।
(debkumar.lahiri@gmail.com)
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ -
শান্তি পাঠ।
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদম্‌পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।।
ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ।।
অন্বয় -অর্থ।
ওঁ পূর্ণম্‌অদঃ (উহা)—ওঁ, উহা পূর্ণ।
পূর্ণম্‌ইদম্‌(ইহা) —ইহা পূর্ণ।
পূর্ণাৎ (পূর্ণ থেকে) পূর্ণম্ (পূর্ণ) উদচ্যতে (উদিত হন) ।
পূর্ণস্য (পূর্ণের) পূর্ণম্‌(পূর্ণকে) আদায় (গ্রহণ করলে) পূর্ণম্‌এব (পূর্ণই) অবশিষ্যতে (অবশিষ্ট থাকে) ।
ওঁ শান্তিঃ (ওঁ শান্তি) ওঁ শান্তিঃ (ওঁ শান্তি) ওঁ শান্তিঃ (ওঁ শান্তি)।
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 3/43
অর্থ।
ওঁ, উহা পূর্ণ, ইহা পূর্ণ। পূর্ণ থেকে পূর্ণ উদিত হন ।
পূর্ণের পূর্ণকে গ্রহণ করলে পূর্ণই অবশিষ্ট থাকে।
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি।
নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা।
‘অদঃ' শব্দটি ‘অসৌ’ শব্দের রূপ। বেদে ‘অসৌ' এই সর্ব্বনামটি আদিত্যের (আত্মাদিত্যের) সাথে অনেক সময়ই
ব্যবহার করা হয়েছে। যা কিছু ‘অদনীয়' বা খাদ্য বা যা ভোগ্য, তা আদিত্যের বা কালের প্রকাশ।
আদিত্যের (আত্মাদিত্যের) থেকে ‘অদ্য’ (কাল, বিশ্ব) প্রকাশ পাচ্ছে। তাই 'পূর্ণমদঃ‘ অর্থে যাঁর থেকে সৃষ্টি প্রকাশ
পাচ্ছে তিনি পূর্ণ।
আবার যা কিছু ইদং-পদবাচ্য বা ‘ইহ', যা কিছু ‘সৃষ্ট' হয়েছে , তাও পূর্ণ।পরম-আত্মস্বরূপ যিনি, তিনি পুর্ণ, এবং
তিনিই নিজেকে বিশ্বের আকারে সৃষ্ট করেছেন, এবং তিনি নিজেই সৃষ্টি। তাই এই সৃষ্টির প্রতিটি সত্তা পূর্ণ। এই জন্য
পূর্ণ থেকে পূর্ণ উদিত হন।
এই আত্মা অক্ষর, ইনি ক্ষরিত হয়েও অক্ষয়ই থাকেন। তাই ইনি অনন্ত। এই জন্য পূর্ণের পূর্ণকে গ্রহণ করলে পূর্ণই
অবশিষ্ট থাকে।
শান্ত দ্যুলোক (যার অন্তরে আদিত্য), যে লোক থেকে সকল কিছু প্রকাশ পায়, কেননা এই লোক এই এক আত্মস্বরূপে
প্রতিষ্ঠিত।
শান্ত অন্তরীক্ষ, যে লোক দ্যু এবং পৃথিবী বা মূর্ত্ত বিশ্বকে যুক্ত করেছে, কেননা এই লোক এই এক আত্মস্বরূপে
প্রতিষ্ঠিত।
শান্ত পৃথিবী, যা এই মূর্ত্ত বিশ্ব, যেখানে আমরা সবাই পৃথক অস্তিত্ব নিয়ে মূর্ত্ত হয়েছি, কেননা এই লোক এই এক
আত্মস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত।
মন্ত্র, মন্ত্রার্থ এবং নিরুক্ত।
১ম মন্ত্র।
ঈশাবাস্যমিদং সর্ব্বং যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম্‌
।।
অন্বয়-অর্থ।
ঈশা ---ঈশ্বরের দ্বারা; বাস্যম্‌
---আচ্ছাদিত; ইদম্‌
---ইহা, এই; সর্ব্বং---সকল; যৎকিঞ্চ--যা কিছু ; জগত্যাং---জগতে;
জগৎ---গতিশীল
তেন---তার দ্বারা; ত্যক্তেন---ত্যাগের দ্বারা; ভূ ঞ্জীথা------ভোগ করবে; মা (না) গৃধঃ (কামনা করো)---কামনা করো না
কস্য (কারোর) স্বিৎ---কস্য স্বিৎ--- কদাপি কারোর; ধনম্‌
---ধনকে
অর্থ।
ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদিত এই সকল, যা কিছু এই জগতে গতিশীল। তার দ্বারা (এই জ্ঞানের অনুশীলনের দ্বারা) ত্যাগ
করে ( যা বর্জ্জ ন করার তা বর্জ্জ ন করে) ভোগ করবে। কদাপি কারোর (অন্যের) ধনকে কামনা করো না।
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 4/43
নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা।
১-১। 'ঈশা'
ঈশা শব্দটি ঈশ শব্দ থেকে হয়েছে। ঈশা অর্থে ঈশ বা ঈশ্বরের দ্বারা। ঈশ = ঈ+শ। 'ঈ' এই অক্ষরের অর্থ শক্তি বা
চিৎশক্তি। শক্তি অর্থে যার দ্বারা কোন পরিবর্ত্ত ন সাধিত হয়। 'শ' অর্থে শয় বা শয়ন। যিনি শায়িত থেকেও বা
নিষ্ক্রিয় হয়েও সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করেন, সক্রিয় করে রেখেছেন, বা কালাবর্ত্ত নময় করেছেন, তিনি ঈশ্বর বা ঈশ। যিনি
সবার আত্মা, যাঁকে সবাই 'নিজ' বা 'আত্ম' বলে বোধ করে, তিনিই ঈশ বা ঈশ্বর। এই আত্মা যুগপৎ নিষ্ক্রিয় এবং
সক্রিয়, নির্গুণ এবং সগুণ, অরূপ এবং রূপময়, অসঙ্গ এবং সঙ্গবান্‌
। আত্মার এই উভয় স্বরূপ বা উভয়-লিঙ্গত্বের
উল্লেখ উপনিষদে বারবার করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে কঠোপনিষদের একটি মন্ত্র উল্লেখ করা হলো।
' আসীনো দূরং ব্রজতি শয়ানো *যাতি সর্ব্বতঃ।
কস্তং মদামদং দেবং মদন্যো জ্ঞাতু মর্হ তি।।' ( কঠোপনিষদ মন্ত্র ১।২।২১।)
মন্ত্রার্থ।
আসীন থেকেও যিনি দূরে গমন করেন, শায়িত থেকেও যিনি সর্ব্বত্র সংযমন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেই হর্ষময়
এবং হর্ষবিহীন দেবতাকে আমি ভিন্ন (আমার মতো জ্ঞাতা ভিন্ন) আর কে জানতে পারে।
(* 'যাতি' শব্দটি 'যা' ধাতু থেকে হয়েছে। যা অর্থে 'যমন, সংযমন বা নিয়ন্ত্রণ করা। ) ( কঠোপনিষদ মন্ত্র ১।২।২১।)
১-২। 'ঈশা বাস্যম্‌ইদম্‌সর্ব্বম্‌
বাস্যম্‌
---আচ্ছাদিত।
'বাস্যম্‌
' শব্দটি 'বস্‌
' অথবা 'বাস্‌
' ধাতু থেকে হয়েছে। বস্‌ধাতু থেকে বসন বা আচ্ছাদন শব্দটি হয়েছে।
সুতরাং ' ঈশা বাস্যম্‌ইদম্‌সর্ব্বম্‌' এই বাক্যের অর্থ ঈশ্বর বা আত্মার ঈশ্বিত্বের দ্বারা সকল কিছু আচ্ছাদিত বা ঈশ্বর বা
আত্মার ঈশ্বিত্বের দ্বারা সকল কিছু বসবাস করছে।
আত্মার ঈশিত্ব বা নিয়ত্রণ যে ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশ প্রায় তার নাম দেবক্ষেত্র বা দ্যুলোক। আর যে দেবতাদের
(আত্ম স্বরূপের বিশেষ অভিব্যক্তি বা ব্যক্তিত্বদের) মধ্য দিয়ে এই সত্য, বাস্তব বিশ্বকে পেয়ে আমরা বিশ্বের এবং
নিজেদের অস্তিত্ব বোধ করছি, তাঁদের নাম বসু। বস্তু সকল বা বাস্তব বিশ্বের মূলে এঁরা আছেন, তাই এঁদের নাম বসু।
স্থূ ল, বাস্তবিকতাময় আমরা শরীর রূপ বসনের দ্বারা আচ্ছাদিত বা আবৃ ত। বসু, বাস,বসন, বস্তু এই শব্দগুলি
সম্বন্ধযুক্ত এবং একই রকম অর্থ বা ভাব প্রকাশক।
পরম আত্মস্বরূপ, যাঁর থেকে আমরা জাত হয়েছি, তিনি তাঁর ঈশিত্বের দ্বারা আমাদেরকে নিজেতে ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এই যে ফিরে যাওয়া বা প্রত্যাবর্ত্ত ন, এর থেকে আমাদের জন্মজন্মান্তর এবং বিবর্ত্ত ন হচ্ছে, আমাদের অভ্যুদয় হচ্ছে,
আত্মজ্ঞতার পথে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। প্রতি মূহুর্তে আমার চেতনায় যা ফু টছে, আমার যে অনুভূ তি হচ্ছে, সেইটি এই
প্রত্যাবর্ত্ত নের অংশ।এর নাম ' ঈশা বাস্যম্‌
' বা ঈশিত্বের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে বসবাস করা বা জীবন যাপন করা।
১-৩। ভু বনস্য গোপ্তা। গোপাল, গোপ এবং গোপী।
এই যে প্রাণের দ্বারা বা ঈশিত্বের দ্বারা আমরা আচ্ছাদিত, এর একটি নাম 'গোপন' করা, এবং যিনি এইটি করেন , তাঁর
নাম 'গোপ্তা'। বিপুল প্রাণের প্রকাশকে নিয়মিত করে,মাত্রা দিয়ে, আমাদের উপযোগী করে, তিনি এই ধরিত্রীকে সৃষ্টি
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 5/43
করেছেন। এই জন্য উপনিষদে এঁকে 'ভু বনস্য গোপ্তা' বলা হয়েছে। (মুণ্ডক উপনিষদ্‌
, মন্ত্র ১।১।১ দ্রষ্টব্য।)
যিনি এইভাবে আমাদের আচ্ছাদন করে, বসনাবৃ ত করে পালন করেন, তাঁর নাম 'গোপাল' এবং 'গোপ'। যাদের দ্বারা
আমরা সক্রিয় বা বিচরণ করি, এবং পুষ্ট হই, তাদের নাম 'গো'। 'গো' শব্দের অর্থ 'ইন্দ্রিয়'। 'গো' শব্দটি 'গম্' ধাতু
থেকে হয়েছে, যার নাম 'গমন করা'। এই ইন্দ্রিয়গুলি কে যিনি পালন করে আমাদের সক্রিয় করেছেন, তিনি 'গোপাল'।
যেটু কু আমরা নিতে পারি, শুধু সেই রকম মাত্রায়, শব্দ, স্পর্শ,রূপ,রস,গন্ধ কে পরিমিত করে দিচ্ছেন। এইটি বসন বা
আচ্ছাদনের দ্বারা হচ্ছে। 'বাস্যম্‌
' শব্দটির এই হলো তাৎপর্য।
১-৪। 'যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ'---- যা কিছু এই জগতে গতিশীল।
যৎকিঞ্চ---যাহা কিছু , জগত্যাং---জগতে, জগৎ---জগৎ বা গতিশীল।
এখানে 'জগতে যা কিছু জগৎ' এই বাক্যে দুইবার জগৎ শব্দ প্রয়োগ করার একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে।
জগৎ অর্থে যা গতিময় বা গতিয়ুক্ত। যেকোন গতির মূলে আছে 'কাল'। কালের দ্বারা অবস্থান্তর হ্য় বা একটি অবস্থা
থেকে অন্য অবস্থায় সংক্রমণ হয়। কোন বস্তু বা প্রাণী যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় তখন তা গতির দ্বারাই
হয়; আবার কোন প্রাণী যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্ত্তিত হয়, সেটিও একটি গতি। আর এই গতি,
কাল গতি, বা কাল প্রসূত।
আমাদের যে দিন রাত্রি হয়, তা পৃথিবী নিজের অক্ষকে অবলম্বন করে আবর্ত্ত ন করছে বলে। এই অহো-রাত্রোময় বা
দিন-রাতময় যে জীবন আমরা যাপন করছি, তার নাম, বা এই কালের নাম 'বর্ত্ত মানতা'। আবর্ত্ত ন থেকে বর্ত্ত মানতা।
এইটি এক ধরণের কাল বা চেতনার বা চিৎ স্বরূপ আত্মার নিয়ন্ত্রণ। এইটিকে ব্রহ্মার কালও বলে এবং এইটি থেকে
বর্ত্ত মানতা বা অস্তিত্ব বোধ হচ্ছে। সৃষ্টি, স্থিতি,এবং লয়, এই ত্রিভঙ্গিম বা ত্রিবিক্রম কাল যাঁর থেকে প্রকাশ পাচ্ছে, তিনি
বিষ্ণু । ।এই কালের নাম বর্ষ বা বৎসর। দিন-রাত গুলি বর্ষিত হচ্ছে। এই জন্য কালের বাহককে বৃ ষ বলা হয়। তাহলে
যা বর্ত্ত মানতা (বা ব্রহ্মার কাল) তা এই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ময় বিষ্ণু র কালের অন্তর্গত। আবার আমাদের প্রতি মুহূ র্ত্ত টাও
সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ময়। কাল যাঁতে অক্রম, সৃষ্টি-স্থিতি-লয় যাঁতে একই সাথে, তিনি মহাকাল বা মহেশ্বর। এই যে
বর্ত্ত মানতার মধ্যে সৃষ্টি-স্থিতি-লয় চলছে, এর নাম কালের মধ্যে কাল বা, গতির মধ্যে গতি বা 'জগত্যাং জগৎ'।
১-৫। ত্রিকাল।
কাল তিনটি। ব্রহ্মার কাল, যার বৈশিষ্ট্য হল বর্ত্ত মানতা।
বিষ্ণু র কাল, যার বৈশিষ্ট্য হলো 'অয়ন, সংক্রমণ---সৃষ্টি থেকে লয় এবং লয় থেকে সৃষ্টিতে আবর্ত্ত তিত হওয়া এবং সেই
আবর্ত্ত নে নিজের প্রকাশ, বা ব্যাপ্তি (স্থিতি) রচনা করা। এই জন্য ঋক্ ‌বেদে, বিষ্ণু র পদ (পরমম্‌পদম্‌) বা কাল গতি
এবং সর্ব্বব্যাপী প্রকাশবান্‌চক্ষু (দিবীব চক্ষু রাততম্‌
) বা কাল থেকে যা প্রকাশ পেয়ে ব্যাপ্তি বা স্থিতি রচনা করছে তার
কথা বলা হয়েছে। (এই বিষ্ণু র তেজই, পৃথিবীর আকাশে সূর্য। সূর্যর থেকে কাল (বৎসর, মাস, দিন-রাত ইত্যাদি)
প্রকাশ পাচ্ছে এবং রূপ, আলো বা দৃষ্টি প্রকাশ পাচ্ছে। চেতনার চক্ষু মানেই রূপ-প্রকাশ ও রূপ অনুভব করা, এবং
কাল প্রকাশ বা গতিময় হওয়া বা চলা এবং সেই গতির ভোক্তা হওয়া। ( দেখা মানেই চলা, যা দেখছি তাতে উপনীত
হওয়া।)
মহেশ্বরের কাল বা মহাকাল---- সৃষ্টি-স্থিতি-লয় এই তিনটি ক্রম যেখানে একত্রে বা অক্রমে থাকে তার নাম মহাকাল।
এই ক্ষেত্রে কাল বীজাকারে থাকে। এখানে একটি ক্ষণেই সৃষ্টি-স্থিতি-লয় রয়েছে।
১-৬। বাস্যম্‌
--বাস--সুবাস--গন্ধ----পৃথিবী। আহ্নিক গতি এবং গন্ধতত্ত্ব।
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 6/43
আমরা আগে বলেছি যে আত্মার ঈশিত্বের দ্বারা সবাই বসবাস করছে, বসনের দ্বারা আবৃ ত হয়েছে, একটি আয়তন বা
শরীর রূপ বসন পেয়ে তার মধ্যে বসবাস করছে। বস্তুময়, স্থূ ল বা ভৌতিক বিশ্বের সাধারণ নাম 'পৃথিবী', যার অন্য নাম
'বসুন্ধরা'। পৃথিবী হলেন সেই দেবী, যাঁতে সকলে পৃথক্ ‌পৃথক্ ‌আয়তনময় বা শরীরী হয়ে বাস করছে। আমাদের শরীর
এই পৃথিবীরই অংশ। উপনিষদে পৃথিবী এবং শরীর সমার্থক। পৃথিবী শব্দের দ্বারা ধরিত্রীকে বোঝায়, যিনি সমগ্র
বস্তুময় বিশ্বকে ধারণ করেছেন, এবং তা উপনিষদের নিম্নে উদ্ধৃ ত এই মন্ত্রটিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতস্মাৎ জায়তে প্রাণো মনঃ সর্ব্বেন্দ্রিয়ঃ চ।
খং বায়ুঃ জ্যোতিরাপঃ পৃথিবী বিশ্বস্য ধারিণী।। (মুণ্ডক উপনিষদ্‌মন্ত্র ২।১।৩।)
অর্থ।
এতস্মাৎ (এঁর থেকে ) জায়তে ( জাত হয় ) প্রাণো (প্রাণ ) মনঃ ( মন ) সর্ব্বেন্দ্রিয়ঃ ( সর্ব্বেন্দ্রিয় ) চ (এবং )----এঁর (এই
পরম আত্মস্বরূপ) থেকে প্রাণ, মন এবং সর্ব্বেন্দ্রিয় জাত হয়েছে।
খং (আকাশ) বায়ুঃ (বায়ু) জ্যোতিঃ (জ্যোতি) আপঃ (আপ্‌
/জল) পৃথিবী ( পৃথিবী ) বিশ্বস্য ( বিশ্বের ) ধারিণী (ধাত্রী)-
--আকাশ, বায়ু, জ্যোতি, আপ্‌(জল), বিশ্বের ধাত্রী পৃথিবী।।
এঁর (এই পরম আত্মস্বরূপ) থেকে জাত হয় প্রাণ, মন এবং সর্ব্বেন্দ্রিয়, আকাশ, বায়ু, জ্যোতি, আপ্‌(জল), বিশ্বের ধাত্রী
পৃথিবী । (মুণ্ডক উপনিষদ্‌মন্ত্র ২।১।৩।)
এই পৃথিবীর অন্য নাম ক্ষিতি, কেননা, এখানে সবাই ক্ষয় প্রাপ্ত হয়, মরণশীল বা মর্ত্ত্য। ঋষিরা বলেছেন, যা ক্ষিতি
তত্ত্ব, তার তন্মাত্রা হল গন্ধ। পৃথিবী যেমন নিজের অক্ষে আবর্তন করছে যার নাম আহ্নিক গতি (যার থেকে দিন ও
রাত হচ্ছে), সেই রকমই আমাদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস রূপে প্রাণ বায়ুর আবর্ত্ত ন চলছে। যা এই পৃথিবীর আহ্নিক গতি,
নিজের চারিদিকে ঘূর্ণন, তাই আমাদের শরীরে শ্বাস-প্রশ্বাস রূপ বায়ুর বা প্রাণের আবর্ত্ত , এবং তার দ্বারা আমাদের
শারীরিক বা পার্থিব স্থিতি সম্ভব হয়েছে। নাসার দ্বারা যে গন্ধ আঘ্রাণ করা, আর শ্বাস-প্রশ্বাস, এই দুইটি বিচ্ছিন্ন ক্রিয়া
নয়। এই জন্য উপনিষদে গন্ধকে 'প্রাণ' বলা হয়। গন্ধ মানেই গম্ (গতি) + ধ (ধৃ ত বা বিধৃ ত)----গতিকে আবর্ত্তে র
আকারে বিধৃ ত করে একটি স্থিতির রূপ নেওয়া। এই জন্য গন্ধকে 'বাস' বা 'সুবাস' বলা হয়' কেননা প্রাণের স্থিতি বা
বাস করা মানেই গন্ধ বা সুবাস।সুতরাং 'বাস্যম্‌
' শব্দের এইটি একটি তাৎপর্য।
১-৭। ' তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা'--আত্মার ঈশিত্বকে স্বীকার করে লোকসকলকে মান্যতা।
এই আত্মা থেকে সবাই জাত হয়েছে এবং এঁর দ্বারাই সবাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই জন্য বলা হয়েছে, 'ব্রহ্মা দেবানাং
প্রথমম্‌সংবভূ ব বিশ্বস্য কর্ত্তা ভু বনস্য গোপ্তা'----ব্রহ্মা দেবগণের মধ্যে প্রথমে সৃষ্ট হয়েছিলেন, যিনি বিশ্বের কর্ত্তা (স্রষ্টা)
এবং ভু বনের পালয়িতা ( মুণ্ডক উপনিষদ্‌
, মন্ত্র ১।১।১ দ্রষ্টব্য)। তাঁর এই সৃষ্টিকে স্বীকার করে, তাঁর দ্বারা যা কিছু
বিধিত হয়েছে তাকে মান্যতা দিয়ে যদি চলতে হয়, তাহলে সকলের অধিকারকে মান্য করে, অন্যের অধিকারে যা আছে
তার প্রতি লিপ্সা ত্যাগ করে, ঈশ্বরের দ্বারা যে ভোগ নিজের জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে তার বাইরে না গিয়ে যে জীবন যাপন তা
হলো ত্যাগের দ্বারা ভোগ করা।
১-৮।তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা----তার দ্বারা (এই জ্ঞানের অনুশীলনের দ্বারা) ত্যাগ করে ( যা বর্জ্জ ন করার তা বর্জ্জ ন করে
) ভোগ করবে। সেই যে ঈশিত্ব তাতে যে সবাই আচ্ছাদিত এইটি জানতে জানতে, বা স্বীকার করে, কাল যাপন করবে।
স্রষ্টা, ঈশিত্বের দ্বারা আমাদেরকে নিজেতে ফিরিরে নিচ্ছেন, এবং এইটি আমাদের প্রত্যাবর্ত্ত ন, বা মুক্তির পথে
কালগতির দ্বারা বাহিত হয়ে চলা। এ কথা আগে বলা হয়েছে। এই ঈশিত্ব বা নিয়ন্ত্রণের দ্বারা আমরা প্রতি মুহূ র্ত্তে
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 7/43
পরিবর্ত্তিত হচ্ছি, পূর্ব্ব অবস্থা ত্যাগ করে নূতন অবস্থায় সংক্রমণ করছি। এর নাম 'ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা', এবং এই প্রজ্ঞায়
উদ্বুদ্ধ হয়ে যে কাল যাপন তার নাম ' তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা ' অর্থাৎ এই ঈশিত্ব দর্শন করতে করতে কর্ম্ম করা।
যিনি আমাদের মধ্যে জ্ঞান বা চেতনা, তিনি আমাদের এবং সর্ব্বভূ তের আত্মা এবং ঈশ্বর। তিনি সব কিছু র জ্ঞাতা, তাই
তিনি 'জ্ঞ' এবং তিনি নিজেকে সকল কিছু র আকারে জেনে সকল কিছু হয়েছেন। জানা মানেই, যা জানা হচ্ছে, তাই
হওয়া। ইনি যে জানেন তার নাম 'অন' বা প্রাণ প্রকাশ। অন মানে অন্য বা দ্বিতীয় হওয়া, নিজেকে দ্বিতীয় করে সৃষ্টি
করা। ইনি জেনেও বা প্রাণময় হয়েও, যেমন তেমনি থাকেন, আর সেই অপরিনামী, স্থির, নিষ্ক্রিয় স্বরূপের নাম 'জ্ঞ',
আবার অপরিনামী, স্থির, নিষ্ক্রিয় হয়েও সবাইকে বা সকল কিছু কে জানেন। এই জানাই প্রাণের প্রকাশ, যার বাইরের
নাম 'কাল'। আর এই পরম আত্মস্বরূপের নাম 'জ্ঞান', এঁকে আত্মবোধ বা নিজবোধও বলা হয়।
এই জ্ঞানকে দেখলে, নিজে যে জ্ঞান বা চেতনার বিশ্বে রয়েছি এবং ইনিই ঈশ্বর, এবং আমি এবং বিশ্ব এঁরই মূর্তি, এই
প্রকার জ্ঞানের উন্মেষ হতে থাকলে, স্থূ ল, সীমিত, মরণশীল যে জীবন সেইটাকে পরিত্যাগ করে , চিন্ময়, অন্তহীন যে
জীবন তার আবির্ভাব হতে থাকে। এই যে মর্ত্ত বা স্থূ লত্ব বা মরণ কে ত্যাগ করে বাঁচা, এটিও 'ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা' বা
ত্যাগের দ্বারা, মরণকে ত্যাগ করতে করতে ভোগ করা।
এই প্রসঙ্গে উপনিষদের একটি মন্ত্র উদ্ধৃ ত করা হলো। (কেনোপনিষদ্‌দ্বিতীয় খণ্ড, ৫ম মন্ত্র)।
ইহ চেৎ অবেদীদথ সত্যমস্তি না চেদিহাভেদীনমহতী বিনষ্টিঃ।
ভূ তেষু ভূ তেষু বিচিত্য ধীরাঃ প্রেত্যাস্মাল্লোকাদমৃতা ভাবন্তি। (কঠোপনিষদ্‌মন্ত্র ২।৫।)
অন্বয় ও শব্দার্থ।
ইহ (অত্র; ইহলোকে) চেৎ (যদি) অবেদীৎ (বিদিত হয়) অথ (তাহলে) সত্যম্‌(সত্য) অস্তি (হয়)----যদি ইহলোকে (কেহ
এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মকে) বিদিত হয় তাহলে সত্য হয় (সত্য বা অবিনশ্বরতা লব্ধ হয়)
ন চেৎ (যদি না) ইহ (অত্র; ইহলোকে) বেদীৎ (বিদিত হয়) মহতী (মহৎ) বিনষ্টিঃ (বিনাশ)---যদি না ইহলোকে (কেহ
এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মকে) বিদিত হয় ( তাহলে ) মহৎ বিনাশ (হয়)
ভূ তেষু (ভূ তে বা প্রতি ভৌতিক বোধে) ভূ তেষু (ভূ তে বা প্রতি ভৌতিক বোধে) বিচিত্য (বিদিত হয়ে) ধীরাঃ (ধীর গণ)
প্রেত্য (প্রস্থান করে) অস্মাৎ (এই) লোকাৎ (লোক থেকে) অমৃতাঃ (অমৃত) ভবন্তি (হন)-----ভূ তে-ভূ তে বা প্রতি বিষয়
অনুভূ তিতে বিদিত হয়ে ধীরগণ এই লোক থেকে প্রস্থান করে অমৃত হন।
অর্থ।
যদি ইহলোকে কেহ এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মাকে বিদিত হয় তাহলে সত্য বা অবিনশ্বরতা লব্ধ হয়।যদি ইহলোকে (কেহ এই
জ্ঞানস্বরূপ আত্মাকে) বিদিত না হয় তাহলে মহৎ বিনাশ হয় (মৃত্যু গ্রস্ত হয়)। ভূ তে-ভূ তে (প্রতি বিষয় বোধে) (এই
জ্ঞানস্বরূপ আত্মাকে বিদিত হয়ে ধীরগণ এই লোক থেকে (এই মরণশীল অবস্থা থেকে) প্রস্থান করে অমৃত হন।
(কেনোপনিষদ্‌মন্ত্র ২।৫।)
যিনি আমাদের মধ্যে জ্ঞান বা চেতনা, আমাদের প্রতি অনুভূ তি বা বোধ তাঁরই প্রকাশ বা মূর্ত্তি, ঐ জ্ঞান স্বরূপই প্রতি
মুহূ র্ত্তে আমাদের এই ভাবে চেতায়িত এবং সক্রিয় করে রেখেছেন। এইটি ঈশিত্ব বা 'জ্ঞ'র অনময়তা বা প্রাণময়তা। প্রতি
অনুভূ তিতে এই দর্শনের দ্বারা ভৌতিক অবস্থাকে ত্যাগ করে জ্ঞানময় বা চিন্ময় স্বরূপে প্রবিষ্ট হয়ে, এই প্রকার বিজ্ঞাতা
অমৃত লাভ করেন। এর নাম ' তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা'।
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 8/43
১-৯। প্রবিবিক্তভু ক্ ‌আত্মা।
উপনিষদে উক্ত হয়েছে, যে আমরা যা কিছু খাই বা ভোগ করি, তার স্থূ লাংশের দ্বারা স্থূ লত্ব বা স্থূ ল শরীর বা ভৌতিক
স্থিতি পুষ্ট হয়। আবার এই ভোগের যে সূক্ষ্মাংশ, তা চেতনার ভৌতিকতা বর্জ্জিত বা ভৌতিকতা ত্যক্ত যে স্বরূপ, যা
বিশুদ্ধ জ্ঞানময়, তাতে নীত হয়।একথা উপনিষদে বর্ণনা করা হয়েছে। (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌৫।১৯।১ মন্ত্র এবং পরবর্ত্তী
মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য, ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌মন্ত্র ৬।৬।১ থেকে ৬।৬।৫, প্রশ্নোপনিষদ্‌মন্ত্র ৩।৫ দ্রষ্টব্য। )
যে ক্ষেত্রে এই সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম আত্মা নিজেকে স্থূ ল বলে বোধ করে বা জেনে, স্থূ ল বা ভৌতিক বিশ্ব হয়েছেন, সেখানে
আত্মার নাম স্থূ লভু ক্ ‌
। তাঁর যে স্থূ লত্ব বা ভৌতিকতা তার দ্বারা আমরাও স্থূ ল বা ভৌতিক হয়ে ভৌতিক বিশ্বকে ভোগ
করছি।
আর যেখানে, অন্তরীক্ষে, অন্তরে, এই স্থূ লত্বকে বা ভৌতিকতাকে বর্জ্জ ন করে ভোগ করছেন সেখানে এঁর
নাম প্রবিবিক্তভু ক্ ‌বা তৈজস আত্মা। ( বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ৪।২।৩, মাণ্ডু ক্য উপনিষদ্‌৪র্থ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।)
ভৌতিকতা বর্জ্জিত মানে যখন কোন কালগত বা দেশগত সীমার দ্বারা বদ্ধ নয়। যার কালগত সীমা নেই, সে কালের
দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না এবং সে ত্রিকালজ্ঞ। যার দেশগত সীমা নেই, সে সর্ব্বত্র স্থিতি নিতে পারে। তাই যে ভোগ ভৌতিক,
তা কাল এবং দেশের (স্থানের) দ্বারা সীমিত, সুতরাং তা নানা ভাবে সীমিত এবং অস্থায়ী। যে ভোগ দেশ এবং কালের
ঊর্দ্ধে , তার বৈচিত্র অনন্ত, কেননা সর্ব্ব দেশে সর্ব্ব কালে সেই ভোগের যে বৈচিত্র তাতে তা বিদ্যমান থাকে।
তাই আমরা যখন খাই বা কিছু বোধ করি, তার স্থূ লাংশ যায় স্থূ ল শরীরে। তার সূক্ষ্মাংশ যায় শরীরের ঊর্দ্ধে যে
জ্ঞানময় বা প্রাণময় সত্তা, তাঁতে। এই সূক্ষ্ম ভোগ যে ভাবে হয় তার বর্ণনা ছান্দোগ্য উপনিষদে ৫।১৯।১ মন্ত্র থেকে ৫।
২৩।২ মন্ত্রে বিশদ ভাবে বলা হয়েছে। তা সংক্ষেপে নীচে বলা হলো।
এই যে অন্ন বা ভোগ যখন অন্তরে গৃহীত হয়, তার দ্বারা পঞ্চ প্রাণ (প্রাণ,ব্যান,অপান,সমান,উদান) তৃ প্ত হন। প্রথমে
প্রাণের যে চক্ষু বা দর্শনময়তা তা তৃ প্ত হয়। তার কারণ যা স্থূ ল বা ভৌতিক তার থেকে আমাদের সত্য বোধ হয়। যা
দেখি, তাকে সত্য বলতে কোন অসুবিধা হয় না।তাই এই ভৌতিকতাকে যখন সরিয়ে দেওয়া হয়, তখন যা প্রথম
উপলব্ধি হয়, তা 'দর্শনময়তা' বা 'চক্ষু '। চক্ষু বা দৃষ্টি শক্তির আকারে যে প্রাণ আমাদের মধ্যে আছেন, তিনি যখন তৃ প্ত
হন, তখন সূর্য বা আদিত্য তৃ প্ত হন। তার কারণ, যা আমাদের মধ্যে চক্ষু বা দৃষ্টি শক্তি তা আমাদের যে বহিরাকাশ,
তাতে আদিত্য রূপে বিরাজিত।আদিত্য তৃ প্ত হলে, দ্যু তৃ প্ত হন। দ্যু অর্থে মহাপ্রাণ যিনি নিজেকে দোহন করে
বিশ্বভূ বনকে প্রকাশ করেছেন, এবং তাঁর প্রকাশ কেন্দ্রের নাম আদিত্য। দ্যু তৃ প্ত হলে, যা কিছু দ্যু এবং আদিত্য লোকে
অধিষ্ঠিত তাঁরা তৃ প্ত হন, এবং এঁদের তৃ প্তির হেতু সেই ভোক্তাও তৃ প্ত হন, এবং প্রজা, পশু, ভোগ্য অন্ন, তেজ এবং
ব্রহ্মবর্চ্চ সের দ্বারা সেই ভোক্তা সমৃদ্ধ হন। একই ভাবে, ব্যান,অপান,সমান,উদান, এবং তাঁদের সাথে যুক্ত ইন্দ্রিয়
শক্তিরা এবং দেবতারা তৃ প্ত হন। আমরা দেখি বা না দেখি, অনবরত আমাদের প্রতি ভোগ বা অনুভূ তি এইভাবে প্রাণ
এবং তাঁর দেবময় যে মহিমা সকল, তাদের মধ্যে প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যখন খাই বা ভোগ করি, আমাদের সাথে
পঞ্চপ্রাণ, দেবগণ এবং আমাদের অধ্যাত্মে এবং অধিদৈবে (দেবক্ষেত্রে) যাঁরা আছেন, তাঁরাও খান এবং ভোগ করেন।
এই যে ভোগ বিতরিত হয়, এও ত্যাগ বা বিতরণ। (যাঁরা এইটি জানেন, তাঁরা বিতরণ হেতু বৈতরণী অনায়সে পার
হন।) আত্মার ঈশিত্ব দেখলে আমরা সজ্ঞানে এই দেবক্ষেত্রের সাথে এক হয়ে, আমাদের এই মরণশীল, সংকু চিত
অবস্থাকে ত্যাগ করবো। এর নাম 'প্রবিবিক্তভু ক্ ‌
' হওয়া বা ত্যাগের দ্বারা ভোগ করা।
১-১০। মা গৃধঃ কস্য স্বিৎ ধনম্‌
---কদাপি কারোর ধনকে কামনা করো না।
অন্যের অধিকারে যা আছে তার প্রতি লিপ্সা ত্যাগ করে, ঈশ্বরের দ্বারা যে ভোগ নিজের জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে তার বাইরে
না গিয়ে যে জীবন যাপন তা হলো ত্যাগের দ্বারা ভোগ করা; ত্যাগের দ্বারা যে ভোগ, এইটি তার একটি অর্থ । সুতরাং
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 9/43
এই ব্রত বা এই ধর্ম্ম পালন করতে হলে পরের ধনের প্রতি ঈপ্সা পরিত্যাজ্য।
কামনা করাই আমাদের স্বভাব। পরের ধনের প্রতি ঈপ্সা পরিত্যাজ্য হলেও, সেই ঈপ্সাকে সহজে পরিত্যাগ করা যায়
না। যখন আমরা উপলবদ্ধি করি যে শব্দ, স্পর্শ, রূপ,রস,গন্ধ, নিজেরই বোধ বা অনুভূ তির মূর্ত্তি, নিজের অন্তরেই
তাদের বোধ করছি, তখন কামনার গতি বাইরে না গিয়ে ভিতরের দিকে চলে। যিনি জ্ঞান স্বরূপ, আমাদের মধ্যে প্রাণ
বা চেতনা, যাঁর থেকে আমরা জন্মেছি, যাঁতে স্থিত, এবং যাঁতে লীন হই, তিনিই আমাতে বোধ বা অনুভূ তির আকারে
ফু টছেন, এইটি জানার দ্বারা 'পর' বা 'দ্বিতীয়তার' বোধযুক্ত বহির্মুখী যে ভোগ বা অনুভূ তি তার থেকে মুক্ত হয়ে,
ক্ষয়হীন, মৃত্যুহীন যে ভোগ তার সূচনা হয়। উপনিষদে অনুভু তিকে অবিদ্যা বলা হয়েছে, এবং এইভাবে অবিদ্যার দ্বারা
মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায়-----এই কথা এই ঈশোপনিষদে ঋষি পরে বলেছেন। ( দ্বিতীয়তার বোধ থেকে মৃত্যু হয় বা
মৃত্যুকে নিজের অন্ত বলে বা নিজের বিলুপ্তি বলে মনে হয়।নিজেই নিজের অন্ত বা অন্তিম কাল হয়ে ফু টছি, এই জ্ঞান
হলে আর মৃত্যুতেও মৃত্যুর দ্বারা সেই জ্ঞানী অভিভূ ত হন না।)
২য় মন্ত্র।
কু র্ব্বন্নেবেহ কর্ম্মাণি জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ।
এবং ত্বয়ি নান্যথেতো'স্তি ন কর্ম্ম লিপ্যতেনরে।।
অন্বয়-অর্থ।
কু র্ব্বন্‌ইব (কু র্ব্বন্ ----করে; কু র্ব্বন্‌ইব--করেই) ইহ (ইহ লোকে) কর্ম্মাণি (কর্ম্মসকল; কর্ম্ম) জিজীবিষেৎ (জীবিত থাকতে
ইচ্ছা করবে) শতং (শত) সমাঃ (বৎসর; )---কর্ম্ম করেই বা কর্ম্মের দ্বারাই ইহলোকে শত বৎসর জীবিত থাকতে ইচ্ছা
করবে
এবং (এই প্রকারই) ত্বয়ি (তোমাতে) না (না) অন্যথা (অন্যথা) ইতঃ (এখান থেকে) অস্তি (আছে) ন (না) কর্ম্ম (কর্ম্ম)
লিপ্যতে (লিপ্ত হয়) নরে (নরতে) -----এবং (এই প্রকারই) অন্যথা (অন্যথা) ইতঃ (এর থেকে) ন অস্তি ( না আছে/
নেই) ত্বয়ি (তোমাতে), নরে (নরতে) ন (না) কর্ম্ম (কর্ম্ম) লিপ্যতে (লিপ্ত হয়) ----এই প্রকারই, এর থেকে অন্যথা নেই,
যাতে তোমাতে, নরতে (মনুষ্যতে) কর্ম্ম লিপ্ত না হয়।
অর্থ।
কর্ম্মের দ্বারাই (কর্ম্ম করেই) ইহলোকে শত বৎসর জীবিত থাকতে ইচ্ছা করবে---- এই প্রকারই, এর থেকে অন্যথা নেই,
যাতে তোমাতে, নরতে (মনুষ্যতে) কর্ম্ম লিপ্ত না হয়।
নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা।
২-১। কর্ম্ম। " ন কর্ম্ম লিপ্যতেনরে'"।
আমরা সবাই কর্ম্মময়। 'যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ'---- যা কিছু এই জগতে গতিশীল, সেই সবই চাঞ্চল্যময়, অর্থাৎ
কর্ম্মময়। সবাই কালের দ্বারা, প্রাণের দ্বারা চলেছে। এই মহাপ্রাণ আমাদের সবাইকে মৃত্যুর পরপারে নিয়ে চলেছেন। এ
কথা উপনিষদে বারবার বলা হয়েছে। মৃত্যুর থেকে দূরে নিয়ে চলেছেন, বা মৃত্যু এঁর থেকে দূরে থাকে, তাই মুখ্যপ্রাণ বা
মহাপ্রাণের নাম দুর্গা। (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্ মন্ত্র ১।৩।৯ থেকে ১।৩।১১ দ্রষ্টব্য।)
কর্ম্ম মানেই বোধ বা অনুভূ তিময় হওয়া। যে কর্ম্ম যে প্রকার বোধ বা অনুভূ তিময় হয়ে আমরা করি, সেই কর্ম্মের ফল
সেই প্রকার হয়, অর্থাৎ আমাদের পরিণতি সেইরকম হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ সেইভাবে নির্ম্মিত হয়। কর্ম্ম-কালীন
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 10/43
অনুভূ তি অনুসারে কর্ম্মের ফল হয়। অনুভূ তি-হীন বা উপলব্ধি-হীন কর্ম্মের থেকে বিশেষ কিছু লাভ হয় না।
প্রতি কর্ম্ম যে আমার জ্ঞানেই হচ্ছে, যিনি আমাতে জ্ঞ বা আত্মা, তিনিই 'অন', প্রাণ, চেতনা বা কর্ম্ম-চাঞ্চল্যর আকারে
আমাতে সর্ব্বদা প্রকাশ পাচ্ছেন আমাকে চেতায়িত রাখতে, এবং ক্রমশঃ আত্মজ্ঞতার পথে আমাকে নিয়ে যেতে। এইটি
আত্মার ঈশিত্ব বা নিয়ন্ত্রণ এবং এইজন্য কর্ম্মের কথা বলা হয়েছে।
কর্ম্ম== ক+ঋ+অ+ম। ঋ অর্থে গতি। সুতরাং কর্ম্ম অর্থে ক থেকে ম পর্যন্ত বর্ণ প্রবাহ বা প্রাণ প্রবাহ, বা ব্যঞ্জনময়,
প্রকাশাত্মক চিৎগতি বা প্রাণগতি।
ক থেকে ম পর্যন্ত যে ব্যঞ্জন বর্ণ সকল, তাদের নাম স্পর্শ বর্ণ। জিহ্বা,তালু, দন্ত,এবং অধরোষ্ঠ এই সব অবয়বদের স্পর্শ
থেকে এই স্পর্শবর্ণ সকল উচ্চারিত হয়। স্পর্শ অর্থে 'বায়ু' বা 'প্রাণ'। প্রাণ-প্রবাহই স্পর্শ। স্পর্শের দ্বারাই আমরা যা
আমাদের থেকে ভিন্ন বা দ্বিতীয় তার সাথে যুক্ত হই। মৃত্যু দর্শন, দ্বৈতবোধ বা নানা অর্থাৎ ভিন্নতার বোধ থেকে হয়।
(মৃত্যোঃ স মৃত্যুম আপ্নোতি য ইহ.নানেব পশ্যতি.....মৃত্যুর থেকে সে মৃত্যুকে পায় যে এখানে নানা (দ্বিতীয়) দর্শন করে।
কঠোপনিষদ্‌মন্ত্র ২।১।১০ থেকে উদ্ধৃ ত। )। স্পর্শের যে অনুভূ তি তার জ্ঞানেন্দ্রিয় হল অধরোষ্ঠ এবং ত্বক, আর
কর্ম্মেন্দ্রিয় হলো বাহু, যা আমাদের কর্ম্ম করার প্রধান অঙ্গ। কর্ম্ম করা মানেই দ্বিতীয় কিছু কে বা দ্বিতীয়তাকে স্পর্শ
করা।
সুতরাং কর্ম্ম কে যত জ্ঞানময় বা আত্ম চেতনার প্রকাশ বলে অভ্যাস করা যায়, যে চেতনা এবং আত্মা সবার চেতনা
এবং আত্মা, তখন সেই কর্ম্মের দ্বারা অমৃত লাভ হয়। দ্বিতীয় সঙ্গ না হয়ে আত্মসঙ্গ হয়।এর নাম " ন কর্ম্ম
লিপ্যতেনরে'---কর্ম্ম বা দ্বিতীয় বোধের দ্বারা লিপ্ত বা অভিভূ ত হয়ো না।
২-২। জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ।
জিজীবিষেৎ----জীবিত থাকতে ইচ্ছা করো।
আমরা মরেই আছি। প্রতি মুহূ র্ত্তে অস্তিত্ব রক্ষার তারনায় আমরা ত্রস্ত, এবং এর নাম বাঁচা নয়। তাই বলা হয়েছে, 'বেঁচে
থাকতে ইচ্ছা করো (জিজীবিষেৎ)', এবং যে বেঁচে থাকা 'অন্তে' নয়, পূর্ণতায় নিয়ে যাবে। এই পূর্ণতায় বাঁচার নাম 'শত
বৎসর (শতং সমাঃ) ' বেঁচে থাকা।
শত শব্দটি পূর্ণতাবাচক।'শ' বা 'শক্তি' যুক্ত হবার যে ক্রম বা ক্রমাঙ্ক তা শত। তাই কোনকিছু যদি 'শত' হয়, তাহলে
তার উপর অধিকার এসে যায়। শত বৎসর আয়ু তখনি হয় যখন প্রাণ প্রবাহ বা আয়ু নিজেরই প্রবাহ বা বর্দ্ধ ন হয়ে
যায়।নিজেকেই নিজের মধ্যে জন্ম থেকে মরণ অব্দি যত রূপ, সেই সর্ব্বরূপে পাচ্ছি, এতে পূর্ণতার উপলব্ধি হয়।
'সমা' শব্দটির অর্থ 'বৎসর'। সমা অর্থে 'সম অয়ন'। কাল প্রকাশের সাথে সমতা রেখে যে চলা বা আবর্ত্ত ন, তা 'সমা'
বা 'সমাবর্ত্ত ন'।
২-৩। এবং ত্বয়ি নান্যথেতো'স্তি ন কর্ম্ম লিপ্যতেনরে-----এই প্রকারই, এর থেকে অন্যথা নেই, যাতে তোমাতে, নরতে
(মনুষ্যতে) কর্ম্ম লিপ্ত না হয়।
কর্ম্ম থেকে অন্যথা বা অন্য কোন স্থিতি বা অবস্থা সম্ভব নয়। আমরা নিচেষ্ট হতে প্রয়াসী হতে পারি, কিন্তু শারীরিক
এবং মানসিক কর্ম্ম (অনুভূ তি) চলতেই থাকবে।
উপনিষদে বলা হয়েছে, পুরুষ মাত্রেই কামনা করছে, সেই কামনা থেকে সংকল্প বা ক্রতু ময় হচ্ছে, এবং সংকল্প অনুযায়ী
কর্ম্ম করছে, এবং যেমন কর্ম্ম করছে, সেইভাবেই তার পরিণতি বা বিবর্ত্ত ন হচ্ছে। যে কোন সত্তাই পুরুষ। যেহেতু সৃষ্টির
আদিতে স্রষ্টা বহু হবার কামনা করেছিলেন এবং তাঁর থেকে সবাই সৃষ্ট হয়েছে, সেই রকম, প্রতি পুরুষ, বা যে কেউ সৃষ্ট
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 11/43
হয়েছে, সেও কামময়, এবং সেইজন্য সে কর্ম্মময়। কর্ম্মের দ্বারাই আমরা বহু হই, নিজেদেরকে প্রসারিত করি।কামনার
দ্বারাই, কর্ম্মের দ্বারাই আমরা অন্তরে বহু অনুভূ তিময় হই বা বহু হই। তাই কর্মেন্দ্রিয়র নাম ' বাহু '।
৩য় মন্ত্র।
অসুর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃ তাঃ। তাংস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনো জনাঃ।
অন্বয়-অর্থ।
অসুর্যা (অসুর্য ) নাম (নামক) তে (সেই) লোকাঃ (লোক সকল) অন্ধেন (অন্ধ) তমসা (তমসার দ্বারা) বৃ তাঃ (আবৃ ত)---
--অসুর্য নামক সেই লোক সকল, যা অন্ধ তমসার দ্বারা আবৃ ত
তান্‌(তারা) তে (তথায়) প্রেত্য (প্রস্থান করে; মৃত্যুর পর প্রস্থান করে) অভিগচ্ছন্তি (গমন করে) যে কে চ (যারা যারাই)
আত্মহনো (আত্মহননকারী) জনাঃ (লোকেরা, ব্যক্তিরা)----তারা মৃত্যুর পর প্রস্থান করে তথায় গমন করে, যারা যারাই
আত্মহননকারী
অর্থ।
অসুর্য নামক সেই লোক সকল, যা অন্ধ তমসার দ্বারা আবৃ ত; যারা যারাই আত্মহননকারী, তারা মৃত্যুর পর প্রস্থান করে
তথায় গমন করে।
নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা।
৩-১।অসুর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃ তাঃ---অসুর্য নামক সেই লোক সকল যা অন্ধ তমসার দ্বারা আবৃ ত।
অসুর্য----অ (অল্প,নাস্তি) + সুঃ (সোম বা প্রাণ প্রবাহ) + য (যমন, নিয়ন্ত্রণ)। সু বা সোম বা প্রাণ প্রবাহ যেখানে নেই বা
অল্প বা যমিত বা নিয়ন্ত্রিত, সেই রকম যা, তা অসুর্য।
যেখানে প্রাণ চাঞ্চল্য স্তিমিত বা ক্ষীণ, সেই লোক অসুর্য।
সুর্য অর্থে সূর্যও হয়। সুতরাং অসুর্যা লোক অর্থে যেখানে সূর্য বা প্রাণের দীপ্তি প্রচ্ছন্ন।
অসুর্য শব্দের আর একটি নিরুক্ত অনুচ্ছেদ ৩-৩ এ উল্লেখ করা হয়েছে।
৩-২।অন্ধেন তমসাবৃ তাঃ----অন্ধ তমের দ্বারা আবৃ ত। 'তম' শব্দের একটি অর্থ 'আত্যন্তিক'। সুতরাং ' অন্ধ তমের দ্বারা
আবৃ ত ' অর্থে, 'শুধুমাত্র অন্ধকার, তার বাইরে অন্য কিছু দৃষ্ট নয়'।
৩-৩।তাংস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনো জনাঃ----যারা যারাই আত্মহননকারী, তারা মৃত্যুর পর প্রস্থান করে
তথায় গমন করে।
'আত্মহনো জনাঃ' অর্থে যারা আত্মহননকারী। আত্মহনন অর্থে আত্মা, যিনি 'জ্ঞ' বা স্থির নিজবোধ স্বরূপ, যিনি
আমাদের প্রতি অনুভূ তি বা বোধক্রিয়ার মূলে রয়েছেন, তাঁকে না দেখা বা উপেক্ষা করার নাম আত্মহনন করা। নিজে
বা নিজবোধ বা আত্মবোধ না থাকলে, কোন বোধ থাকে না। আমরা যখন ঘুমিয়ে পরি বা জ্ঞান হারাই, তখন এই
নিজেতেই ঘুমাই বা সংজ্ঞাহীন হই, আবার এই নিজেতেই জেগে উঠি। এই জন্য ঘুমের সময় 'অস্তি-নাস্তি' বোধ না
থাকলেও, জাগ্রত হয়ে বা সংজ্ঞা লাভ করে, এই 'নিজবোধ' অবলম্বন করেই 'অহং বা আমি' বলে প্রকাশ পাই, এবং
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 12/43
নিদ্রিত অবস্থায় যে ছিলাম, তাও ধারণা করতে পারি। অনাত্মজ্ঞতা হেতু , এই অন্ধকার আমরা কর্ম্মসাপেক্ষে সবাই
মৃত্যুর পর অল্পবিস্তর ভোগ করি।
অসুর্যা শব্দের অর্থ পূর্ব্বে ৩-১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। অসুর্যা শব্দের আর একটি অর্থ হলো, ' যা অসুরদের, বা যা
আসুরিক ', এবং সেই হেতু অসুর্য বা আত্মজ্যোতি-হীন। অসু মানে প্রাণ এবং অসুর মানে যারা প্রাণের অসু বা
রঞ্জনাতে আবিষ্ট হয়ে থাকে, কিন্তু যাঁর জ্যোতি বা প্রকাশ এই বিশ্ব হয়ে প্রতিভাত হচ্ছে সেই প্রাণকে ( 'অন' কে) এবং
প্রাণ যাঁর সক্রিয়তা সেই আত্মাকে ('জ্ঞ' কে) দেখে না। এই জন্য মৃত্যুর পর, অর্থাৎ যখন ভৌতিক-বিশ্ব তিরোহিত হয়,
তখন তারা অন্ধকারই দেখে।
৪র্থ মন্ত্র।
অনেজদেকং মনসো জবীয়ো নৈনদ্দেবা আপ্নুবন্‌পূর্ব্বমর্ষৎ।
তদ্ধাবতো'ন্যানত্যেতি তিষ্ঠৎ তস্মিন্নপো মাতরিশ্বা দধাতি।।
অন্বয়-অর্থ।
অনেজৎ (ন এজৎ--কম্পিত হন না; স্থির) একং (এক) মনসঃ (মনের থেকে) জবীয়ঃ (বেগবান্‌) ন (না) এনৎ
(এনাকে) দেবাঃ (দেবগণ) আপ্নুবন্‌(আপ্ত হয়; প্রাপ্ত হয়) পূর্ব্বম্‌(পূর্ব্বেই) অর্ষৎ (ধাবমান্‌
)-----অকম্পিত (স্থির), এক,
মনের থেকেও গতিবান্‌
, পূর্ব্বেই ধাবমান্‌এনাকে দেবগণ প্রাপ্ত হন না।
তৎ (তিনি) ধাবতঃ (ধাবমান্‌হয়ে; ধাবন করে) অন্যান্‌(অন্যান্যদের) অতি এতি (অতিক্রম করেন) তিষ্ঠৎ (স্থির
থেকেও) তস্মিন্‌(তাঁতে) অপঃ (আপ্‌কে, দিব্য জলকে) মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) দধাতি (ধারণ করেন)----স্থির থেকেও,
তিনি ধাবন করে অন্যান্যদের অতিক্রম করেন; তাঁতে মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) অপ্‌(দিব্য জলকে) কে ধারণ করেন।
অর্থ।
অকম্পিত (স্থির), এক, মনের থেকেও গতিবান্‌
, পূর্ব্বেই ধাবমান্‌এনাকে দেবগণ প্রাপ্ত হন না। স্থির থেকেও, তিনি ধাবন
করে অন্যান্যদের অতিক্রম করেন; তাঁতে মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) অপ্‌
কে (দিব্য জলকে) ধারণ করেন।
নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা।
৪-১। অনেজৎ --ন এজৎ--কম্পিত হন না। '
অনেজৎ' শব্দের আর একটি অর্থ, 'অন + এজৎ', অর্থাৎ 'অন' বা প্রাণ যাঁর 'এজন' বা কম্পন। এই জন্য উপনিষদে
বলা হয়েছে, 'আত্মন এষ প্রাণো জায়তে'----আত্মা থেকেই এই প্রাণ জাত হন। (প্রশ্নোপনিষদ্‌মন্ত্র ৩।৩ দ্রষ্টব্য।) যিনি
'জ্ঞ' তাঁর থেকেই 'অন' বা প্রাণ জাত হন।
৪-২। অনেজদেকং---অনেজৎ একং।
এজন অর্থে কম্পন বা নিজের বাইরে না গিয়ে যে গতি, নিজেতেই নিজের গতি, এইটি এজন বা কম্পনের বৈশিষ্ট্য। এই
জন্য 'এজন' শব্দের একটি অর্থ, এ (এক) + জন (জায়মান্)---এক হয়েও জাত হওয়া বা দ্বিতীয় হওয়া। এই জন্য '
অনেজৎ একং' বলা হলো।
৪-৩। মনসঃ জবীয়ঃ --- মনের থেকে বেগবান্‌
। মাতরিশ্বা।
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 13/43
প্রথমে বলা হলো, এই আত্মা এজন বিহীন, বা অকম্পিত। তারপর বলা হলো, ' মনসঃ জবীয়ঃ --- মনের থেকে
বেগবান্‌
'। দ্বিতীয়তা না থাকলে গতি হয় না। দ্বিতীয়তায় গতি নেওয়ার অর্থ বহু হওয়া, বা সৃষ্টি করা।আত্মার
সক্রিয়তাই প্রাণ, এবং প্রাণই বহু হন, নিজেকে বিশ্বের আকারে সৃষ্টি করেন। প্রাণের গতির বৈশিষ্ট্য হলো যে সেই গতিতে
যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে, তা প্রাণেই সংলগ্ন থাকে। প্রাণ দ্বিতীয় হয়েও, সেই দ্বিতীয় সত্তাগুলিকে নিজের বর্দ্ধ ন বা বৃ দ্ধি বলে
জানেন। এইজন্য প্রাণকে বা বায়ুকে উপনিষদে অধি-অর্দ্ধ বলা হয়েছে। অধি-অর্দ্ধ (অধ্যর্দ্ধ ) অর্থে ১-১/২ বা দেড়।
১-১/২ অর্থে এক এবং একের থেকে যা দ্বিতীয় হয়েছে (খণ্ডিত হয়েছে) তা একেই সংযুক্ত। বৃ হদারণ্যক উপনিষদে উক্ত
হয়েছে, যেহেতু এই প্রাণেতে সবাই বৃ দ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তাই ইনি অধ্যর্দ্ধ (অধ্যর্দ্ধ )। ' যৎ অস্মিন্‌ইদম্‌সর্ব্বম্‌অধি অর্ধ্নোৎ, তেন
অধ্যর্দ্ধঃ----যেহেতু এঁতে (এই প্রাণেতে, এই বায়ুতে) এই সকল কিছু বর্দ্ধিত হয়, সেই কারণে ' অধ্যর্দ্ধ '। অর্দ্ধ শব্দটি ঋধ্‌
ধাতু থেকে হয়েছে, ঋধ্‌অর্থে বর্দ্ধিত হওয়া।(বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌৩।৯।৯ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।)
একই কারণে প্রাণকে অশ্ব বলা হয়। অশ্ব অর্থে যিনি শ্বাস-প্রশ্বাসের আবর্ত্ত ন হয়ে, প্রাণাবর্ত্ত ন হয়ে, কালাবর্ত্ত ন হয়ে ছু টে
চলেছেন। অশ্ব শব্দের আর একটি অর্থ হলো যিনি স্ফীত হচ্ছেন, প্রসারিত হচ্ছেন। বায়ু বা প্রাণ প্রসারিত হন, স্ফীত
হন। অশ্ব শব্দটি শ্বি ধাতু থেকে হয়েছে; শ্বি অর্থে স্ফীত হওয়া। প্রাণ বা বায়ুকে মাতরিশ্বা বলা হয়। আমরা যেমন
মাতৃ গর্ভে বর্দ্ধিত হই, সেই রকম আমরা সবাই প্রাণেতেই বর্দ্ধিত হচ্ছি, কাল যাপন করছি, সৃষ্টি থেকে স্থিতি, স্থিতি থেকে
লয়ে, এবং জন্ম থেকে জন্মান্তরের মধ্যে দিয়ে বিবর্ত্তিত হয়ে আমাদের অভ্যুদয় হচ্ছে। প্রাণ নিজের মধ্যে মাত্রা দিয়ে,
আমাদের বর্দ্ধ ন বা পরিবর্ত্ত ন করছেন বলে, এঁর নাম মাতরিশ্বা। মাতরি----মাতাতে, বা যিনি মাত্রার দ্বারা পরিবর্ত্ত ন
করেন, তাঁতে শ্বন্‌বা বর্দ্ধ ন হচ্ছে, তাই ' মাতরিশ্বা'। মাতরি+শ্বন্‌
= মাতরিশ্বন্‌> মাতরিশ্বা।
যেখানে দ্বিতীয় বোধ সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত, তার নাম মন। সুনির্দিষ্ট, আয়তনময়, বোধগম্য, ভৌতিক বিশ্ব আমরা
যেখানে অনুভব করছি তার নাম 'মন'। মনের কোন আয়তন নেই, কিন্তু যা কছু মাপা যায়, যা আয়তনময়, যা মান বা
পরিমাপযোগ্য, তার মাপ বা মান নির্ণয় মনেতেই হয়। দ্বিতীয় বোধ যেখানে প্রকটিত, সেখানে আর কম্পন বা এজন
নয়, সেখানে গতি, একটি থেকে অন্যতে গতি।
৪-৪।তৎ ধাবতঃ অন্যান্‌অতি এতি তিষ্ঠৎ -----স্থির থেকেও, তিনি ধাবন করে অন্যান্যদের অতিক্রম করেন।
যেহেতু প্রাণের দ্বারাই সকলে প্রাণেতেই গতিময় বা পরিবর্ত্ত নময়, তাই প্রাণ সবাইকে অতিক্রম (অতি এতি) করেই
থাকেন। যেহেতু সকল গতি বা পরিণতি প্রাণেতেই হয়, তাই প্রাণ স্থির থেকেও ধাবন করেন এবং সকলকে অতিক্রম
করেন। অতিক্রম করার অর্থ ক্রম বা ক্রমণের ঊর্দ্ধে ।সুতরাং যা কিছু র আরম্ভ এবং শেষ আছে, সেই আরম্ভ এবং শেষ
অব্দি যে ক্রমসকল তা যাঁতে, যে প্রাণেতে (অনেতে), সেই প্রাণ ক্রমণের ঊর্দ্ধে । তাই ইনি সবাইকে সর্ব্বদা অতিক্রম
করছেন।
৪-৫।তস্মিন্‌ অপঃ মাতরিশ্বা দধাতি ------- তাঁতে মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) অপ্‌(দিব্য জলকে) কে ধারণ করেন।
অপ্‌অর্থে দিব্য জল বা দিব্য বারি, যাঁর থেকে মূর্ত্ত বা স্থূ ল বিশ্ব প্রকাশ পায় এবং যাঁতে মূর্তি বা ভৌতিকতা বিলীন হয়।
এঁর দ্বারাই ভূ ত সমূহ আপ্যায়িত হচ্ছে।
আগে বলা হয়েছে, যেখানে আমরা আয়তনময়, যেখানে ভৌতিক বিশ্বকে অনুভব করছি তা হলো মন। আত্মা বা
প্রাণের যে বহির্মুখী তেজ, তা থেকে মান-সম্পন্ন, পরিমাপ-যোগ্য বিশ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আর আমাদের মনেও সেই মান-সম্পন্ন,
পরিমাপ-যোগ্য বিশ্ব অনুভূ ত হচ্ছে, যার নাম ভৌতিক বিশ্ব। ভৌতিক শব্দটি ভূ ত শব্দ থেকে হয়েছে। ভূ ত শব্দের একটি
অর্থ 'অতীত'। সমস্ত সৃষ্টি করে, নিজেকে সর্ব্বরূপে পেয়ে যে আপ্তি , তাই 'অপ্‌
' এবং 'আপ্‌
' বা আপ্তি। এই ভৌতিক
বিশ্ব, চেতনার আপ্তির পরাকাষ্ঠা। আর এই মন এবং ভৌতিক বিশ্ব আপ্যায়িত হচ্ছে অপের দ্বারা। অপ্‌হল প্রাণের
বসন, প্রাণের আবরণ, বা প্রাণের শরীর । (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ১।৫।১৩ দ্রষ্টব্য।)
12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌
) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 14/43
প্রাণের যে তৃ প্তি তাই স্থূ ল বিশ্ব হয়ে ফু টে উঠেছে। আর এই তৃ প্তি তাঁর বসন, আপ্তি, অপ্‌
। এই 'অপ্‌
' কে প্রাণ বা
মাতরিশ্বা নিজেতে ধারণ করেছেন, যার থেকে আমাদের বিশ্ব প্রজাত হয়েছে। বসু দেবতা, যাঁদের কথা পূর্ব্বে আলোচিত
হয়েছে, তাঁরা এই প্রাণের বসন-অভিমানী পুরুষ।
বসনের দ্বারা যেমন সকলে আচ্ছাদিত হয়, আবার এই যে বসন তা নির্ম্মিত হয় বয়নের দ্বারা। যিনি বয়ন করেন তিনি
বায়ু বা মাতরিশ্বা। তাই বায়ুকে সূত্রাত্মাও বলা হয়। এই সূত্রের দ্বারা সবাই সবার সাথে যুক্ত।প্রাণ বা কাল বা বায়ু যখন
প্রবাহিত হন, তখন আমরা একটি অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যাই, যার নাম হল পরিবর্ত্ত ন। এই পরিণতিগুলি বায়ু বা
প্রাণরূপ সূত্রের দ্বারা যুক্ত থাকে। তাতে যে একটি সামগ্রিক সূত্রজাল বা তন্তুজাল রচিত হয়, সেইটি তার বসন। এই
ভৌতিক বিশ্ব সেই বসনেরই বহির্ভাগ আর এই ভৌতিকতার মূলে আছে অপ্‌
। এই দিব্য অপ্‌
, যাঁর থেকে ভৌতিক
বিশ্বরূপ আবরণ রচিত হয়েছে, তাঁর নাম বরুণ। আবরণ করেন তাই বরুণ। এই বিশ্ব এই ভাবে , এই মাতরিশ্বার
তন্তুজালে রচিত বা বিধৃ ত।
৫ম মন্ত্র।
তদেজতি তন্নৈজতি তদ্দূরে তদ্বন্তিকে।
তদন্তরস্য সর্ব্বস্য তদু সর্ব্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।।
অন্বয়-অর্থ।
তৎ (তিনি) এজতি (এজন করেন) তৎ (তিনি) ন (না) এজতি (এজন করেন)----তিনি এজন করেন, তিনি এজন
করেন না।
তৎ (তিনি) দূরে (দূরে) তৎ (তিনি) উ (আবার) অন্তিকে (সমীপে)-----তিনি দূরে তিনি আবার সমীপে।
তৎ (তিনি) অন্তরস্য (অন্তরে) সর্ব্বস্য (সকলের) তৎ (তিনি) উ (আবার) সর্ব্বস্য (সকলের) অস্য (এই) বাহ্যতঃ
(বাহ্যে)------তিনি সকলের অন্তরে, তিনি আবার এই সকলের বাহ্যে।
অর্থ।
তিনি এজন করেন, তিনি এজন করেন না। তিনি দূরে তিনি আবার সমীপে। তিনি সকলের অন্তরে, তিনি আবার এই
সকলের বাহ্যে।
নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা।
৫-১। তৎ এজতি ----তিনি এজন করেন।
এজন অর্থে 'এ +জন'---যিনি 'এক' তিনি যখন 'জাত' হন, 'জনক' হন, তখন সেই ক্রিয়ার নাম এজন। এজনকে
কম্পনও বলা হয়।
'তেজ' শব্দটির অর্থই হলো, 'তৎ এজতি'----'তিনি অর্থাৎ আত্মস্বরূপ এজন করছেন'। তাই প্রাণ তেজোময়, কেননা
আত্মার সক্রিয়তাই 'প্রাণ'। এই জন্য প্রাণকে প্রাণাগ্নি বলা হয়, কেননা প্রাণের তেজের দ্বারাই সকল কর্ম্ম সাধিত হচ্ছে।
যিনি অগ্রবর্ত্তী ('অগ্‌
', 'অগ্র') হয়ে সকল ঘটনা, সকল কিছু কে নিয়ে আসেন ( 'নি' /নী), নীত বা উপনীত করেন, তিনি
অগ্নি।
৫-২। তৎ ন এজতি -----তিনি এজন করেন না।
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)
ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)

More Related Content

What's hot

Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.
Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.
Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.debkumar_lahiri
 
Narada Muni Instructs Vyasadeva
Narada Muni Instructs VyasadevaNarada Muni Instructs Vyasadeva
Narada Muni Instructs VyasadevaYahshua Hosch
 
1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...
1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...
1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...gorlakov20232024
 
विभूति पाद
विभूति पादविभूति पाद
विभूति पादSanjayakumar
 
Профілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptx
Профілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptxПрофілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptx
Профілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptxktgg
 
Psychology in vedanta
Psychology  in vedantaPsychology  in vedanta
Psychology in vedantaSurya Tahora
 
футуризм
футуризмфутуризм
футуризмhome
 
Kala Jado Ki Pachan
Kala Jado Ki PachanKala Jado Ki Pachan
Kala Jado Ki Pachanguest8108957
 
Pārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradi
Pārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradiPārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradi
Pārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradiVladislavs Babaņins
 
Bhagvad Gita Be Emotionally Intelligent
Bhagvad Gita Be Emotionally IntelligentBhagvad Gita Be Emotionally Intelligent
Bhagvad Gita Be Emotionally IntelligentSubhashitam
 
Five Basic Truth of Bhagavad Gita
Five Basic Truth of Bhagavad GitaFive Basic Truth of Bhagavad Gita
Five Basic Truth of Bhagavad GitaRojer S Chaudhary
 
розвиток особистості
розвиток особистостірозвиток особистості
розвиток особистостіcit-cit
 
An assignment on advaita vedanta
An assignment on advaita vedantaAn assignment on advaita vedanta
An assignment on advaita vedantaEugine Rosario
 
Mandukya Upanishad, brief introduction
Mandukya Upanishad, brief introductionMandukya Upanishad, brief introduction
Mandukya Upanishad, brief introductionscmittal
 
Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or Institutes of Vedāntic tea...
Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or    Institutes of Vedāntic tea...Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or    Institutes of Vedāntic tea...
Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or Institutes of Vedāntic tea...Medicherla Kumar
 
Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )
Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )
Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )muskaan maurya
 

What's hot (20)

Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.
Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.
Soma, Gandharva, and the other divine beings in the Universal Consciousness.
 
Narada Muni Instructs Vyasadeva
Narada Muni Instructs VyasadevaNarada Muni Instructs Vyasadeva
Narada Muni Instructs Vyasadeva
 
SAANKHYA-3.odp
SAANKHYA-3.odpSAANKHYA-3.odp
SAANKHYA-3.odp
 
1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...
1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...
1 Профілактична програма тренінгових занять з педагогами «Ресурсність педагог...
 
विभूति पाद
विभूति पादविभूति पाद
विभूति पाद
 
Профілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptx
Профілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptxПрофілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptx
Профілакт стрес і постстрес станів уч осв пр, пов’яз із воєнним станом .pptx
 
Psychology in vedanta
Psychology  in vedantaPsychology  in vedanta
Psychology in vedanta
 
Квіти у чарівну літню пору...
Квіти у чарівну літню пору...Квіти у чарівну літню пору...
Квіти у чарівну літню пору...
 
футуризм
футуризмфутуризм
футуризм
 
Kala Jado Ki Pachan
Kala Jado Ki PachanKala Jado Ki Pachan
Kala Jado Ki Pachan
 
Pārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradi
Pārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradiPārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradi
Pārbaudes darbs par Aspazijas un Raiņa daiļradi
 
Bhagvad Gita Be Emotionally Intelligent
Bhagvad Gita Be Emotionally IntelligentBhagvad Gita Be Emotionally Intelligent
Bhagvad Gita Be Emotionally Intelligent
 
Five Basic Truth of Bhagavad Gita
Five Basic Truth of Bhagavad GitaFive Basic Truth of Bhagavad Gita
Five Basic Truth of Bhagavad Gita
 
розвиток особистості
розвиток особистостірозвиток особистості
розвиток особистості
 
An assignment on advaita vedanta
An assignment on advaita vedantaAn assignment on advaita vedanta
An assignment on advaita vedanta
 
Mandukya Upanishad, brief introduction
Mandukya Upanishad, brief introductionMandukya Upanishad, brief introduction
Mandukya Upanishad, brief introduction
 
Sant mat ppt
Sant mat pptSant mat ppt
Sant mat ppt
 
Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or Institutes of Vedāntic tea...
Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or    Institutes of Vedāntic tea...Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or    Institutes of Vedāntic tea...
Prasthanatrayi-" The 3 sources of authority "or Institutes of Vedāntic tea...
 
02 vedanta-dindima-versewise-notes
02 vedanta-dindima-versewise-notes02 vedanta-dindima-versewise-notes
02 vedanta-dindima-versewise-notes
 
Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )
Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )
Introduction to upanishad (mundaka & mandukya upanishad )
 

More from debkumar_lahiri

Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...
Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...
Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...debkumar_lahiri
 
Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.
Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.
Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.debkumar_lahiri
 
Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.
Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.
Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.debkumar_lahiri
 
কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...
কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...
কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...debkumar_lahiri
 
উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...
উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...
উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...debkumar_lahiri
 
Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...
Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...
Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...debkumar_lahiri
 
The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...
The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...
The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...debkumar_lahiri
 
বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...
বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...
বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...debkumar_lahiri
 
নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।)
নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।) নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।)
নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।) debkumar_lahiri
 
Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.
Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.
Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.debkumar_lahiri
 
Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...
Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...
Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...debkumar_lahiri
 
Quotes from Upanishad---vaak and three forms of agni
Quotes from Upanishad---vaak and three forms of agniQuotes from Upanishad---vaak and three forms of agni
Quotes from Upanishad---vaak and three forms of agnidebkumar_lahiri
 
Vedic Sanskrit words related to 'cow'
Vedic Sanskrit words related to 'cow' Vedic Sanskrit words related to 'cow'
Vedic Sanskrit words related to 'cow' debkumar_lahiri
 
Agni and the first hymn of Rik Veda
Agni and the first hymn of Rik VedaAgni and the first hymn of Rik Veda
Agni and the first hymn of Rik Vedadebkumar_lahiri
 
Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...
Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...
Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...debkumar_lahiri
 
Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...
Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...
Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...debkumar_lahiri
 
Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas.
Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas. Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas.
Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas. debkumar_lahiri
 
Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...
Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...
Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...debkumar_lahiri
 
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...debkumar_lahiri
 

More from debkumar_lahiri (20)

Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...
Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...
Durga Puja ( (in Bengali language)---- performed by Rishi Bijoykrishna Chatto...
 
Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.
Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.
Consciousness, our physical existence and the related Vedic-Sanskrit words.
 
Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.
Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.
Vedic Sanskrit words for fingers---fingers, numbers, digits and senses.
 
কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...
কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...
কেনোপনিষদ্‌ । (দ্বিতীয় সংস্করণ।) (Kenopanishad In Bengali Language. Second Ed...
 
উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...
উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...
উপনিষদের বায়ু,আকাশ,এবং সোম --দেবী বর্গভীমা এবং পাণ্ডব ভীম।(An article in Beng...
 
Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...
Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...
Mysteries of Consciousness as space and air and Goddess Bargabhimaa---Quotes ...
 
The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...
The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...
The bull and the Bel Tree (Wood-Apple Tree) in Vedic rituals—-vaak and the br...
 
বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...
বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...
বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জা...
 
নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।)
নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।) নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।)
নব বর্ষ। (মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের উপদেশাবলী থেকে সংগ্রহিত।)
 
Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.
Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.
Vedic deities Naasatya, Dadhikraa, Vishvadevaa, Rudra, and the sense of smell.
 
Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...
Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...
Agnihotra (Oblation to Agni the lord of fire) and five forms of Agni or PraaN...
 
Eight names of shiva
Eight names of shivaEight names of shiva
Eight names of shiva
 
Quotes from Upanishad---vaak and three forms of agni
Quotes from Upanishad---vaak and three forms of agniQuotes from Upanishad---vaak and three forms of agni
Quotes from Upanishad---vaak and three forms of agni
 
Vedic Sanskrit words related to 'cow'
Vedic Sanskrit words related to 'cow' Vedic Sanskrit words related to 'cow'
Vedic Sanskrit words related to 'cow'
 
Agni and the first hymn of Rik Veda
Agni and the first hymn of Rik VedaAgni and the first hymn of Rik Veda
Agni and the first hymn of Rik Veda
 
Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...
Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...
Gayatri--the mother of Vedas and Gods--English translation of the Twelfth Par...
 
Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...
Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...
Gayatri as in Chandogya Upanishad in Bengali Language (গায়ত্রী--ছান্দোগ্য উপন...
 
Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas.
Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas. Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas.
Origin of Aztec and about ancient Latin America in the context of Vedas.
 
Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...
Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...
Brihadaranyaka Upanishad, First Chapter Second Brahmin in Bengali (Bangla) la...
 
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, প্রথম অধ্যায়,প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ। (Brihadarany...
 

ঈশোপনিষদ্ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ এবং নিরুক্ত সহ।(Ishopanishad---Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotations, meanings and explanation.)

  • 1. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 1/43 উপনিষদ (Upanishad in Bengali) ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotaions, meanings, etymolgies and explanation.) December 12, 2023 ঈশোপনিষদ্‌ । ব্রহ্মখণ্ড (সারাংশ)। যিনি ভিন্ন অন্য কেউ নেই, যাঁর থেকে আমাদের জন্ম, যাঁতে স্থিতি এবং যাঁতে আমরা লীন হই, যিনি আততম (আতত +ম), অর্থাৎ যিনি সব কিছু তে বিস্তৃ ত (আতত) এবং সকলকে অতিক্রম করে বিস্তৃ ত (*ম), তিনি সকলের মধ্যে স্থিত আত্মা। (* 'ম' অর্থে 'চরম' বা 'আত্যন্তিক' বোঝায়।) এই আত্মা একদিকে অসঙ্গ, নির্লেপ, নিষ্কল, নিষ্ক্রিয় আবার ইনি প্রাণময়, কামময়, সকল কিছু র কর্ত্তা, সকল কিছু র বিজ্ঞাতা। 'কে আত্মা' , এই প্রশ্নের উত্তরে, ঋষি বলেছেন, ' যিনি আমাদের প্রাণ সকলের মধ্যে বিজ্ঞানময় এবং হৃদয়ে অন্তর্জ্যোতি'।(বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ৪।৩।৭ দ্রষ্টব্য। ) আত্মা জ্ঞানময়। ইনি একই সাথে বিশুদ্ধ নিজ বা আত্মবোধ স্বরূপ এবং প্রাণময়, বোধময়, চিৎ-চাঞ্চল্যময়। সমস্ত বিশ্ব এই আত্মার জ্ঞান বা বোধক্রিয়ার থেকে জাত। আমার নিজেরাও জ্ঞানময় বা অনুভূ তিময়। আমরা যা কিছু জানি তা এই জ্ঞান বা বোধেরই মূর্ত্তি এবং এর নাম বেঁচে থাকা। এই আত্মা আছেন বলেই বা এঁর নিজত্ব নিয়েই আমরা আত্ম- পরিচয় দিই বা আমরা নিজবোধ-যুক্ত। আমি বা অহং বোধ এই নিজবোধের উপরই ফু টে আছে এবং নিদ্রা বা মৃত্যুর সময় এই নিজেতেই 'আমি' বিলীন হই। আমরা যে জ্ঞান বা বোধের বিশ্বে রয়েছি, এইটি দেখা অভ্যাস হতে থাকলে, প্রতি জ্ঞান বা বোধের মূলে এই অরিণামী, চিরস্থির নিজ বা আত্মবোধের দিকে দৃষ্টি পড়ে যায়। আমাতে যত বোধ বা অনুভূ তি ফু টছে, তার সাথে আমি বা যে 'অহং' অভিমানী সে জড়িয়ে থাকে বা সঙ্গত হয়ে থাকে।প্রতি মুহূ র্ত্তে আমি নানা বোধময় হয়ে নিজের অন্তরে জ্ঞান বা বোধ ভূ মিতে জাত হচ্ছি, নিরন্তর জাত হচ্ছি এই নিজ বা আত্মবোধ থেকে। এই আত্মাই নিরন্তর অহং এবং তৎ-সংশ্লিষ্ট সর্ব্ব বোধ বা অনুভূ তির আকারে জাত হচ্ছেন, এবং তাকে আমরা আমাদের বোধ বা অনুভূ তি বলে ধারণা করছি। নিরন্তর জাত হচ্ছেন, তাই এঁর নাম 'নিজ'। আবার এত কিছু হয়েও ইনি যেমন, তেমনই থাকেন, পরিবর্ত্ত ন হীন, স্থির, অব্যয়। সেই জন্য 'নিজ' শব্দের আর একটি অর্থ হলো 'নাস্তি জন্ম যস্য'----- যিনি জন্মান না, যিনি 'অজ'। প্রতি জীব বা প্রতি সত্তায় এঁকে যখন স্বতন্ত্র ভাবে দেখা হয় বা সম্বোধন করা হয়, তখন এঁর নাম ' ক্ষর আত্মা', 'প্রত্যক্ ‌আত্মা', 'অণু-আত্মা'। ইনিই সর্ব্ব-ভূ তের, সর্ব্ব জীবের আত্মা, এই দর্শন হলে এঁকে 'অক্ষর আত্মা, কূ টস্থ আত্মা' ইত্যাদি বলা হয়। এঁর থেকেই ক্ষরিত হয়ে সবাই হয়েছে, এবং ইনি ক্ষরিত হয়েও ক্ষরিত হননি, তাই ইনি অক্ষর, আর প্রতি জীবে ইনি ক্ষর। আর ইনি ক্ষর এবং অক্ষর উভয়ই, তাই এঁকে পরমাত্মা বা পুরুষোত্তম বলা হয়। এই আত্মা স্বয়ংপ্রকাশ, অর্থাৎ ইনি নিজেই নিজেকে নিজের দ্বারা প্রকাশ করেন। এই জন্য ইনি স্বয়ংশক্তি, কেননা এই প্রকাশ শক্তি ইনি নিজেই। ইনি অসঙ্গ, অর্থাৎ সকল কিছু হয়েও কোন কিছু তে লিপ্ত বা সঙ্গবান
  • 2. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 2/43 হন না, আবার যেহেতু ইনি নিজেই সব, ইনি ভিন্ন আর কোথাও কেউ নেই তাই ইনি অসঙ্গ; কেননা নিজেই যখন সব, তখন কে কাতে সঙ্গত হবে, বা সঙ্গত হয়েও অসঙ্গই থাকেন। এই যে আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তি আর আত্মা, এঁরা একান্ত ভাবে অভেদ। ইনি দেখেন না তা নয়, ইনি দেখেও দেখেন না, কেননা ইনি দ্রষ্টা এবং দৃশ্য উভয়ই; ইনি শোনেন না তা নয়, ইনি শুনেও শোনেন না, কেননা ইনি শ্রোতা এবং শব্দ উভয়ই; ইনি আঘ্রাণ করেন না তা নয়, ইনি আঘ্রাণ করেও আঘ্রাণ করেন না, কেননা ইনি ঘ্রাতা এবং ঘ্রাণ উভয়ই; এই প্রকারই সব। (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌৪।৩।২৩ মন্ত্র এবং পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।)। ইনি দর্শন করে চক্ষু হন (পশ্যন্‌চক্ষুঃ ), শ্রবণ করে শ্রোত্র হন (শৃন্বন্‌শ্রোত্রঃ), মনন করে মন হন (মন্বানো মন:), ইত্যাদি (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ১।৪।৭ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ ইনি যা হন, সেই হওয়াটাকে জানেন বা অনুভব করেন।ইনি যে জানছেন বা বোধময় হচ্ছেন, তার দ্বারা আমাদের পরিবর্ত্ত ন হচ্ছে। এঁর জানা বা বোধ থেকে সব হচ্ছে, তাই এঁর জানা বা বোধক্রিয়ার নাম 'সম্ভূ তি'। আর সেই সম্ভূ তিতে যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে, তদনুসারে আমরা অনুভব করছি, অর্থাৎ বহির্বিশ্বে যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে, তা আমাদের অন্তরে অনুভূ তি ফোটাচ্ছে। এই অনুভূ তি বা বোধের দ্বারা আমরা ক্রমশঃ পরিবর্ত্তিত হচ্ছি, ক্রমশঃ উন্নততর মানসিকতা সম্পন্ন হচ্ছি, নিজের অবিনশ্বরতা সম্বন্ধে, নিজের জীবনের প্রকৃ ত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছি।এর নাম অভ্যুদয় এবং বিবর্ত্ত ন। এই ভাবে ইনি যে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন, এই জন্য এঁকে নিয়ন্তা অথবা ঈশ্বর বলা হয়। নিজেকে বহু করে, অনন্ত অনন্ত জীব হয়েছেন এবং প্রতিটি সৃষ্ট জীবের অন্তরে ইনি ক্ষর আত্মা হয়ে বিরাজ করছেন। প্রতিটি জীবের মধ্যে, সৃষ্টির প্রতিটি কণাতে, ঈশ্বরত্বের দ্বারা তিনি তাঁর পরম আত্মস্বরূপতাকে, ব্রহ্মত্বকে জাগিয়ে তু লছেন। মৃত্যুর দ্বারা ছিন্ন, সীমিত, পুনঃ পুনঃ বাধ্যতা-মূলক যে জন্ম-মৃত্যুর আবর্ত্ত ন তা চিরকালের জন্য আমাদের থেকে তিরোহিত হবে।মুক্ত দর্শন, মুক্ত শ্রবণ, মুক্ত মনন ইত্যাদি আমাদের স্বভাবিক বৃ ত্তি হবে। একদিন প্রত্যেকে ' অহং ব্রহ্মাস্মি' (আমি ব্রহ্ম) এই আত্ম পরিচয় দিয়ে নিজের পরম স্বরূপেই নির্বাণ প্রাপ্ত হবে। এই উপনিষদে বিশেষ ভাবে আত্মার ঈশিত্ব, সেই ঈশিত্বকে স্বীকৃ তি দিয়ে জীবন নির্ব্বাহ, সম্ভূ তি এবং দেবময় বিশ্ব, অনুভূ তিময় জীব ও জীবের অভ্যুদয়, এবং অন্তকালে এই নশ্বর শরীর পরিত্যাগ করে মহাপ্রাণে, অনিলে, প্রাণাগ্নিতে যে এই পার্থিব জীবনের সমাপ্তি, তা উক্ত হয়েছে। মহর্ষি বিজয়কৃ ষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৫-১৯৪৫) এবং তাঁর প্রধান শিষ্য মহর্ষি ত্রিদিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেশ অনুসরণ করে এই উপনিষদের অর্থ, নিরুক্ত এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা যথা সম্ভব প্রকাশ করা হলো। (debkumar.lahiri@gmail.com) ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ - শান্তি পাঠ। ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদম্‌পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।। ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ।। অন্বয় -অর্থ। ওঁ পূর্ণম্‌অদঃ (উহা)—ওঁ, উহা পূর্ণ। পূর্ণম্‌ইদম্‌(ইহা) —ইহা পূর্ণ। পূর্ণাৎ (পূর্ণ থেকে) পূর্ণম্ (পূর্ণ) উদচ্যতে (উদিত হন) । পূর্ণস্য (পূর্ণের) পূর্ণম্‌(পূর্ণকে) আদায় (গ্রহণ করলে) পূর্ণম্‌এব (পূর্ণই) অবশিষ্যতে (অবশিষ্ট থাকে) । ওঁ শান্তিঃ (ওঁ শান্তি) ওঁ শান্তিঃ (ওঁ শান্তি) ওঁ শান্তিঃ (ওঁ শান্তি)।
  • 3. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 3/43 অর্থ। ওঁ, উহা পূর্ণ, ইহা পূর্ণ। পূর্ণ থেকে পূর্ণ উদিত হন । পূর্ণের পূর্ণকে গ্রহণ করলে পূর্ণই অবশিষ্ট থাকে। ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি। নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা। ‘অদঃ' শব্দটি ‘অসৌ’ শব্দের রূপ। বেদে ‘অসৌ' এই সর্ব্বনামটি আদিত্যের (আত্মাদিত্যের) সাথে অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয়েছে। যা কিছু ‘অদনীয়' বা খাদ্য বা যা ভোগ্য, তা আদিত্যের বা কালের প্রকাশ। আদিত্যের (আত্মাদিত্যের) থেকে ‘অদ্য’ (কাল, বিশ্ব) প্রকাশ পাচ্ছে। তাই 'পূর্ণমদঃ‘ অর্থে যাঁর থেকে সৃষ্টি প্রকাশ পাচ্ছে তিনি পূর্ণ। আবার যা কিছু ইদং-পদবাচ্য বা ‘ইহ', যা কিছু ‘সৃষ্ট' হয়েছে , তাও পূর্ণ।পরম-আত্মস্বরূপ যিনি, তিনি পুর্ণ, এবং তিনিই নিজেকে বিশ্বের আকারে সৃষ্ট করেছেন, এবং তিনি নিজেই সৃষ্টি। তাই এই সৃষ্টির প্রতিটি সত্তা পূর্ণ। এই জন্য পূর্ণ থেকে পূর্ণ উদিত হন। এই আত্মা অক্ষর, ইনি ক্ষরিত হয়েও অক্ষয়ই থাকেন। তাই ইনি অনন্ত। এই জন্য পূর্ণের পূর্ণকে গ্রহণ করলে পূর্ণই অবশিষ্ট থাকে। শান্ত দ্যুলোক (যার অন্তরে আদিত্য), যে লোক থেকে সকল কিছু প্রকাশ পায়, কেননা এই লোক এই এক আত্মস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত। শান্ত অন্তরীক্ষ, যে লোক দ্যু এবং পৃথিবী বা মূর্ত্ত বিশ্বকে যুক্ত করেছে, কেননা এই লোক এই এক আত্মস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত। শান্ত পৃথিবী, যা এই মূর্ত্ত বিশ্ব, যেখানে আমরা সবাই পৃথক অস্তিত্ব নিয়ে মূর্ত্ত হয়েছি, কেননা এই লোক এই এক আত্মস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত। মন্ত্র, মন্ত্রার্থ এবং নিরুক্ত। ১ম মন্ত্র। ঈশাবাস্যমিদং সর্ব্বং যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ। তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম্‌ ।। অন্বয়-অর্থ। ঈশা ---ঈশ্বরের দ্বারা; বাস্যম্‌ ---আচ্ছাদিত; ইদম্‌ ---ইহা, এই; সর্ব্বং---সকল; যৎকিঞ্চ--যা কিছু ; জগত্যাং---জগতে; জগৎ---গতিশীল তেন---তার দ্বারা; ত্যক্তেন---ত্যাগের দ্বারা; ভূ ঞ্জীথা------ভোগ করবে; মা (না) গৃধঃ (কামনা করো)---কামনা করো না কস্য (কারোর) স্বিৎ---কস্য স্বিৎ--- কদাপি কারোর; ধনম্‌ ---ধনকে অর্থ। ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদিত এই সকল, যা কিছু এই জগতে গতিশীল। তার দ্বারা (এই জ্ঞানের অনুশীলনের দ্বারা) ত্যাগ করে ( যা বর্জ্জ ন করার তা বর্জ্জ ন করে) ভোগ করবে। কদাপি কারোর (অন্যের) ধনকে কামনা করো না।
  • 4. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 4/43 নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা। ১-১। 'ঈশা' ঈশা শব্দটি ঈশ শব্দ থেকে হয়েছে। ঈশা অর্থে ঈশ বা ঈশ্বরের দ্বারা। ঈশ = ঈ+শ। 'ঈ' এই অক্ষরের অর্থ শক্তি বা চিৎশক্তি। শক্তি অর্থে যার দ্বারা কোন পরিবর্ত্ত ন সাধিত হয়। 'শ' অর্থে শয় বা শয়ন। যিনি শায়িত থেকেও বা নিষ্ক্রিয় হয়েও সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করেন, সক্রিয় করে রেখেছেন, বা কালাবর্ত্ত নময় করেছেন, তিনি ঈশ্বর বা ঈশ। যিনি সবার আত্মা, যাঁকে সবাই 'নিজ' বা 'আত্ম' বলে বোধ করে, তিনিই ঈশ বা ঈশ্বর। এই আত্মা যুগপৎ নিষ্ক্রিয় এবং সক্রিয়, নির্গুণ এবং সগুণ, অরূপ এবং রূপময়, অসঙ্গ এবং সঙ্গবান্‌ । আত্মার এই উভয় স্বরূপ বা উভয়-লিঙ্গত্বের উল্লেখ উপনিষদে বারবার করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে কঠোপনিষদের একটি মন্ত্র উল্লেখ করা হলো। ' আসীনো দূরং ব্রজতি শয়ানো *যাতি সর্ব্বতঃ। কস্তং মদামদং দেবং মদন্যো জ্ঞাতু মর্হ তি।।' ( কঠোপনিষদ মন্ত্র ১।২।২১।) মন্ত্রার্থ। আসীন থেকেও যিনি দূরে গমন করেন, শায়িত থেকেও যিনি সর্ব্বত্র সংযমন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেই হর্ষময় এবং হর্ষবিহীন দেবতাকে আমি ভিন্ন (আমার মতো জ্ঞাতা ভিন্ন) আর কে জানতে পারে। (* 'যাতি' শব্দটি 'যা' ধাতু থেকে হয়েছে। যা অর্থে 'যমন, সংযমন বা নিয়ন্ত্রণ করা। ) ( কঠোপনিষদ মন্ত্র ১।২।২১।) ১-২। 'ঈশা বাস্যম্‌ইদম্‌সর্ব্বম্‌ বাস্যম্‌ ---আচ্ছাদিত। 'বাস্যম্‌ ' শব্দটি 'বস্‌ ' অথবা 'বাস্‌ ' ধাতু থেকে হয়েছে। বস্‌ধাতু থেকে বসন বা আচ্ছাদন শব্দটি হয়েছে। সুতরাং ' ঈশা বাস্যম্‌ইদম্‌সর্ব্বম্‌' এই বাক্যের অর্থ ঈশ্বর বা আত্মার ঈশ্বিত্বের দ্বারা সকল কিছু আচ্ছাদিত বা ঈশ্বর বা আত্মার ঈশ্বিত্বের দ্বারা সকল কিছু বসবাস করছে। আত্মার ঈশিত্ব বা নিয়ত্রণ যে ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশ প্রায় তার নাম দেবক্ষেত্র বা দ্যুলোক। আর যে দেবতাদের (আত্ম স্বরূপের বিশেষ অভিব্যক্তি বা ব্যক্তিত্বদের) মধ্য দিয়ে এই সত্য, বাস্তব বিশ্বকে পেয়ে আমরা বিশ্বের এবং নিজেদের অস্তিত্ব বোধ করছি, তাঁদের নাম বসু। বস্তু সকল বা বাস্তব বিশ্বের মূলে এঁরা আছেন, তাই এঁদের নাম বসু। স্থূ ল, বাস্তবিকতাময় আমরা শরীর রূপ বসনের দ্বারা আচ্ছাদিত বা আবৃ ত। বসু, বাস,বসন, বস্তু এই শব্দগুলি সম্বন্ধযুক্ত এবং একই রকম অর্থ বা ভাব প্রকাশক। পরম আত্মস্বরূপ, যাঁর থেকে আমরা জাত হয়েছি, তিনি তাঁর ঈশিত্বের দ্বারা আমাদেরকে নিজেতে ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এই যে ফিরে যাওয়া বা প্রত্যাবর্ত্ত ন, এর থেকে আমাদের জন্মজন্মান্তর এবং বিবর্ত্ত ন হচ্ছে, আমাদের অভ্যুদয় হচ্ছে, আত্মজ্ঞতার পথে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। প্রতি মূহুর্তে আমার চেতনায় যা ফু টছে, আমার যে অনুভূ তি হচ্ছে, সেইটি এই প্রত্যাবর্ত্ত নের অংশ।এর নাম ' ঈশা বাস্যম্‌ ' বা ঈশিত্বের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে বসবাস করা বা জীবন যাপন করা। ১-৩। ভু বনস্য গোপ্তা। গোপাল, গোপ এবং গোপী। এই যে প্রাণের দ্বারা বা ঈশিত্বের দ্বারা আমরা আচ্ছাদিত, এর একটি নাম 'গোপন' করা, এবং যিনি এইটি করেন , তাঁর নাম 'গোপ্তা'। বিপুল প্রাণের প্রকাশকে নিয়মিত করে,মাত্রা দিয়ে, আমাদের উপযোগী করে, তিনি এই ধরিত্রীকে সৃষ্টি
  • 5. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 5/43 করেছেন। এই জন্য উপনিষদে এঁকে 'ভু বনস্য গোপ্তা' বলা হয়েছে। (মুণ্ডক উপনিষদ্‌ , মন্ত্র ১।১।১ দ্রষ্টব্য।) যিনি এইভাবে আমাদের আচ্ছাদন করে, বসনাবৃ ত করে পালন করেন, তাঁর নাম 'গোপাল' এবং 'গোপ'। যাদের দ্বারা আমরা সক্রিয় বা বিচরণ করি, এবং পুষ্ট হই, তাদের নাম 'গো'। 'গো' শব্দের অর্থ 'ইন্দ্রিয়'। 'গো' শব্দটি 'গম্' ধাতু থেকে হয়েছে, যার নাম 'গমন করা'। এই ইন্দ্রিয়গুলি কে যিনি পালন করে আমাদের সক্রিয় করেছেন, তিনি 'গোপাল'। যেটু কু আমরা নিতে পারি, শুধু সেই রকম মাত্রায়, শব্দ, স্পর্শ,রূপ,রস,গন্ধ কে পরিমিত করে দিচ্ছেন। এইটি বসন বা আচ্ছাদনের দ্বারা হচ্ছে। 'বাস্যম্‌ ' শব্দটির এই হলো তাৎপর্য। ১-৪। 'যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ'---- যা কিছু এই জগতে গতিশীল। যৎকিঞ্চ---যাহা কিছু , জগত্যাং---জগতে, জগৎ---জগৎ বা গতিশীল। এখানে 'জগতে যা কিছু জগৎ' এই বাক্যে দুইবার জগৎ শব্দ প্রয়োগ করার একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। জগৎ অর্থে যা গতিময় বা গতিয়ুক্ত। যেকোন গতির মূলে আছে 'কাল'। কালের দ্বারা অবস্থান্তর হ্য় বা একটি অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় সংক্রমণ হয়। কোন বস্তু বা প্রাণী যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় তখন তা গতির দ্বারাই হয়; আবার কোন প্রাণী যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্ত্তিত হয়, সেটিও একটি গতি। আর এই গতি, কাল গতি, বা কাল প্রসূত। আমাদের যে দিন রাত্রি হয়, তা পৃথিবী নিজের অক্ষকে অবলম্বন করে আবর্ত্ত ন করছে বলে। এই অহো-রাত্রোময় বা দিন-রাতময় যে জীবন আমরা যাপন করছি, তার নাম, বা এই কালের নাম 'বর্ত্ত মানতা'। আবর্ত্ত ন থেকে বর্ত্ত মানতা। এইটি এক ধরণের কাল বা চেতনার বা চিৎ স্বরূপ আত্মার নিয়ন্ত্রণ। এইটিকে ব্রহ্মার কালও বলে এবং এইটি থেকে বর্ত্ত মানতা বা অস্তিত্ব বোধ হচ্ছে। সৃষ্টি, স্থিতি,এবং লয়, এই ত্রিভঙ্গিম বা ত্রিবিক্রম কাল যাঁর থেকে প্রকাশ পাচ্ছে, তিনি বিষ্ণু । ।এই কালের নাম বর্ষ বা বৎসর। দিন-রাত গুলি বর্ষিত হচ্ছে। এই জন্য কালের বাহককে বৃ ষ বলা হয়। তাহলে যা বর্ত্ত মানতা (বা ব্রহ্মার কাল) তা এই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ময় বিষ্ণু র কালের অন্তর্গত। আবার আমাদের প্রতি মুহূ র্ত্ত টাও সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ময়। কাল যাঁতে অক্রম, সৃষ্টি-স্থিতি-লয় যাঁতে একই সাথে, তিনি মহাকাল বা মহেশ্বর। এই যে বর্ত্ত মানতার মধ্যে সৃষ্টি-স্থিতি-লয় চলছে, এর নাম কালের মধ্যে কাল বা, গতির মধ্যে গতি বা 'জগত্যাং জগৎ'। ১-৫। ত্রিকাল। কাল তিনটি। ব্রহ্মার কাল, যার বৈশিষ্ট্য হল বর্ত্ত মানতা। বিষ্ণু র কাল, যার বৈশিষ্ট্য হলো 'অয়ন, সংক্রমণ---সৃষ্টি থেকে লয় এবং লয় থেকে সৃষ্টিতে আবর্ত্ত তিত হওয়া এবং সেই আবর্ত্ত নে নিজের প্রকাশ, বা ব্যাপ্তি (স্থিতি) রচনা করা। এই জন্য ঋক্ ‌বেদে, বিষ্ণু র পদ (পরমম্‌পদম্‌) বা কাল গতি এবং সর্ব্বব্যাপী প্রকাশবান্‌চক্ষু (দিবীব চক্ষু রাততম্‌ ) বা কাল থেকে যা প্রকাশ পেয়ে ব্যাপ্তি বা স্থিতি রচনা করছে তার কথা বলা হয়েছে। (এই বিষ্ণু র তেজই, পৃথিবীর আকাশে সূর্য। সূর্যর থেকে কাল (বৎসর, মাস, দিন-রাত ইত্যাদি) প্রকাশ পাচ্ছে এবং রূপ, আলো বা দৃষ্টি প্রকাশ পাচ্ছে। চেতনার চক্ষু মানেই রূপ-প্রকাশ ও রূপ অনুভব করা, এবং কাল প্রকাশ বা গতিময় হওয়া বা চলা এবং সেই গতির ভোক্তা হওয়া। ( দেখা মানেই চলা, যা দেখছি তাতে উপনীত হওয়া।) মহেশ্বরের কাল বা মহাকাল---- সৃষ্টি-স্থিতি-লয় এই তিনটি ক্রম যেখানে একত্রে বা অক্রমে থাকে তার নাম মহাকাল। এই ক্ষেত্রে কাল বীজাকারে থাকে। এখানে একটি ক্ষণেই সৃষ্টি-স্থিতি-লয় রয়েছে। ১-৬। বাস্যম্‌ --বাস--সুবাস--গন্ধ----পৃথিবী। আহ্নিক গতি এবং গন্ধতত্ত্ব।
  • 6. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 6/43 আমরা আগে বলেছি যে আত্মার ঈশিত্বের দ্বারা সবাই বসবাস করছে, বসনের দ্বারা আবৃ ত হয়েছে, একটি আয়তন বা শরীর রূপ বসন পেয়ে তার মধ্যে বসবাস করছে। বস্তুময়, স্থূ ল বা ভৌতিক বিশ্বের সাধারণ নাম 'পৃথিবী', যার অন্য নাম 'বসুন্ধরা'। পৃথিবী হলেন সেই দেবী, যাঁতে সকলে পৃথক্ ‌পৃথক্ ‌আয়তনময় বা শরীরী হয়ে বাস করছে। আমাদের শরীর এই পৃথিবীরই অংশ। উপনিষদে পৃথিবী এবং শরীর সমার্থক। পৃথিবী শব্দের দ্বারা ধরিত্রীকে বোঝায়, যিনি সমগ্র বস্তুময় বিশ্বকে ধারণ করেছেন, এবং তা উপনিষদের নিম্নে উদ্ধৃ ত এই মন্ত্রটিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতস্মাৎ জায়তে প্রাণো মনঃ সর্ব্বেন্দ্রিয়ঃ চ। খং বায়ুঃ জ্যোতিরাপঃ পৃথিবী বিশ্বস্য ধারিণী।। (মুণ্ডক উপনিষদ্‌মন্ত্র ২।১।৩।) অর্থ। এতস্মাৎ (এঁর থেকে ) জায়তে ( জাত হয় ) প্রাণো (প্রাণ ) মনঃ ( মন ) সর্ব্বেন্দ্রিয়ঃ ( সর্ব্বেন্দ্রিয় ) চ (এবং )----এঁর (এই পরম আত্মস্বরূপ) থেকে প্রাণ, মন এবং সর্ব্বেন্দ্রিয় জাত হয়েছে। খং (আকাশ) বায়ুঃ (বায়ু) জ্যোতিঃ (জ্যোতি) আপঃ (আপ্‌ /জল) পৃথিবী ( পৃথিবী ) বিশ্বস্য ( বিশ্বের ) ধারিণী (ধাত্রী)- --আকাশ, বায়ু, জ্যোতি, আপ্‌(জল), বিশ্বের ধাত্রী পৃথিবী।। এঁর (এই পরম আত্মস্বরূপ) থেকে জাত হয় প্রাণ, মন এবং সর্ব্বেন্দ্রিয়, আকাশ, বায়ু, জ্যোতি, আপ্‌(জল), বিশ্বের ধাত্রী পৃথিবী । (মুণ্ডক উপনিষদ্‌মন্ত্র ২।১।৩।) এই পৃথিবীর অন্য নাম ক্ষিতি, কেননা, এখানে সবাই ক্ষয় প্রাপ্ত হয়, মরণশীল বা মর্ত্ত্য। ঋষিরা বলেছেন, যা ক্ষিতি তত্ত্ব, তার তন্মাত্রা হল গন্ধ। পৃথিবী যেমন নিজের অক্ষে আবর্তন করছে যার নাম আহ্নিক গতি (যার থেকে দিন ও রাত হচ্ছে), সেই রকমই আমাদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস রূপে প্রাণ বায়ুর আবর্ত্ত ন চলছে। যা এই পৃথিবীর আহ্নিক গতি, নিজের চারিদিকে ঘূর্ণন, তাই আমাদের শরীরে শ্বাস-প্রশ্বাস রূপ বায়ুর বা প্রাণের আবর্ত্ত , এবং তার দ্বারা আমাদের শারীরিক বা পার্থিব স্থিতি সম্ভব হয়েছে। নাসার দ্বারা যে গন্ধ আঘ্রাণ করা, আর শ্বাস-প্রশ্বাস, এই দুইটি বিচ্ছিন্ন ক্রিয়া নয়। এই জন্য উপনিষদে গন্ধকে 'প্রাণ' বলা হয়। গন্ধ মানেই গম্ (গতি) + ধ (ধৃ ত বা বিধৃ ত)----গতিকে আবর্ত্তে র আকারে বিধৃ ত করে একটি স্থিতির রূপ নেওয়া। এই জন্য গন্ধকে 'বাস' বা 'সুবাস' বলা হয়' কেননা প্রাণের স্থিতি বা বাস করা মানেই গন্ধ বা সুবাস।সুতরাং 'বাস্যম্‌ ' শব্দের এইটি একটি তাৎপর্য। ১-৭। ' তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা'--আত্মার ঈশিত্বকে স্বীকার করে লোকসকলকে মান্যতা। এই আত্মা থেকে সবাই জাত হয়েছে এবং এঁর দ্বারাই সবাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই জন্য বলা হয়েছে, 'ব্রহ্মা দেবানাং প্রথমম্‌সংবভূ ব বিশ্বস্য কর্ত্তা ভু বনস্য গোপ্তা'----ব্রহ্মা দেবগণের মধ্যে প্রথমে সৃষ্ট হয়েছিলেন, যিনি বিশ্বের কর্ত্তা (স্রষ্টা) এবং ভু বনের পালয়িতা ( মুণ্ডক উপনিষদ্‌ , মন্ত্র ১।১।১ দ্রষ্টব্য)। তাঁর এই সৃষ্টিকে স্বীকার করে, তাঁর দ্বারা যা কিছু বিধিত হয়েছে তাকে মান্যতা দিয়ে যদি চলতে হয়, তাহলে সকলের অধিকারকে মান্য করে, অন্যের অধিকারে যা আছে তার প্রতি লিপ্সা ত্যাগ করে, ঈশ্বরের দ্বারা যে ভোগ নিজের জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে তার বাইরে না গিয়ে যে জীবন যাপন তা হলো ত্যাগের দ্বারা ভোগ করা। ১-৮।তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা----তার দ্বারা (এই জ্ঞানের অনুশীলনের দ্বারা) ত্যাগ করে ( যা বর্জ্জ ন করার তা বর্জ্জ ন করে ) ভোগ করবে। সেই যে ঈশিত্ব তাতে যে সবাই আচ্ছাদিত এইটি জানতে জানতে, বা স্বীকার করে, কাল যাপন করবে। স্রষ্টা, ঈশিত্বের দ্বারা আমাদেরকে নিজেতে ফিরিরে নিচ্ছেন, এবং এইটি আমাদের প্রত্যাবর্ত্ত ন, বা মুক্তির পথে কালগতির দ্বারা বাহিত হয়ে চলা। এ কথা আগে বলা হয়েছে। এই ঈশিত্ব বা নিয়ন্ত্রণের দ্বারা আমরা প্রতি মুহূ র্ত্তে
  • 7. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 7/43 পরিবর্ত্তিত হচ্ছি, পূর্ব্ব অবস্থা ত্যাগ করে নূতন অবস্থায় সংক্রমণ করছি। এর নাম 'ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা', এবং এই প্রজ্ঞায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে কাল যাপন তার নাম ' তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা ' অর্থাৎ এই ঈশিত্ব দর্শন করতে করতে কর্ম্ম করা। যিনি আমাদের মধ্যে জ্ঞান বা চেতনা, তিনি আমাদের এবং সর্ব্বভূ তের আত্মা এবং ঈশ্বর। তিনি সব কিছু র জ্ঞাতা, তাই তিনি 'জ্ঞ' এবং তিনি নিজেকে সকল কিছু র আকারে জেনে সকল কিছু হয়েছেন। জানা মানেই, যা জানা হচ্ছে, তাই হওয়া। ইনি যে জানেন তার নাম 'অন' বা প্রাণ প্রকাশ। অন মানে অন্য বা দ্বিতীয় হওয়া, নিজেকে দ্বিতীয় করে সৃষ্টি করা। ইনি জেনেও বা প্রাণময় হয়েও, যেমন তেমনি থাকেন, আর সেই অপরিনামী, স্থির, নিষ্ক্রিয় স্বরূপের নাম 'জ্ঞ', আবার অপরিনামী, স্থির, নিষ্ক্রিয় হয়েও সবাইকে বা সকল কিছু কে জানেন। এই জানাই প্রাণের প্রকাশ, যার বাইরের নাম 'কাল'। আর এই পরম আত্মস্বরূপের নাম 'জ্ঞান', এঁকে আত্মবোধ বা নিজবোধও বলা হয়। এই জ্ঞানকে দেখলে, নিজে যে জ্ঞান বা চেতনার বিশ্বে রয়েছি এবং ইনিই ঈশ্বর, এবং আমি এবং বিশ্ব এঁরই মূর্তি, এই প্রকার জ্ঞানের উন্মেষ হতে থাকলে, স্থূ ল, সীমিত, মরণশীল যে জীবন সেইটাকে পরিত্যাগ করে , চিন্ময়, অন্তহীন যে জীবন তার আবির্ভাব হতে থাকে। এই যে মর্ত্ত বা স্থূ লত্ব বা মরণ কে ত্যাগ করে বাঁচা, এটিও 'ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা' বা ত্যাগের দ্বারা, মরণকে ত্যাগ করতে করতে ভোগ করা। এই প্রসঙ্গে উপনিষদের একটি মন্ত্র উদ্ধৃ ত করা হলো। (কেনোপনিষদ্‌দ্বিতীয় খণ্ড, ৫ম মন্ত্র)। ইহ চেৎ অবেদীদথ সত্যমস্তি না চেদিহাভেদীনমহতী বিনষ্টিঃ। ভূ তেষু ভূ তেষু বিচিত্য ধীরাঃ প্রেত্যাস্মাল্লোকাদমৃতা ভাবন্তি। (কঠোপনিষদ্‌মন্ত্র ২।৫।) অন্বয় ও শব্দার্থ। ইহ (অত্র; ইহলোকে) চেৎ (যদি) অবেদীৎ (বিদিত হয়) অথ (তাহলে) সত্যম্‌(সত্য) অস্তি (হয়)----যদি ইহলোকে (কেহ এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মকে) বিদিত হয় তাহলে সত্য হয় (সত্য বা অবিনশ্বরতা লব্ধ হয়) ন চেৎ (যদি না) ইহ (অত্র; ইহলোকে) বেদীৎ (বিদিত হয়) মহতী (মহৎ) বিনষ্টিঃ (বিনাশ)---যদি না ইহলোকে (কেহ এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মকে) বিদিত হয় ( তাহলে ) মহৎ বিনাশ (হয়) ভূ তেষু (ভূ তে বা প্রতি ভৌতিক বোধে) ভূ তেষু (ভূ তে বা প্রতি ভৌতিক বোধে) বিচিত্য (বিদিত হয়ে) ধীরাঃ (ধীর গণ) প্রেত্য (প্রস্থান করে) অস্মাৎ (এই) লোকাৎ (লোক থেকে) অমৃতাঃ (অমৃত) ভবন্তি (হন)-----ভূ তে-ভূ তে বা প্রতি বিষয় অনুভূ তিতে বিদিত হয়ে ধীরগণ এই লোক থেকে প্রস্থান করে অমৃত হন। অর্থ। যদি ইহলোকে কেহ এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মাকে বিদিত হয় তাহলে সত্য বা অবিনশ্বরতা লব্ধ হয়।যদি ইহলোকে (কেহ এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মাকে) বিদিত না হয় তাহলে মহৎ বিনাশ হয় (মৃত্যু গ্রস্ত হয়)। ভূ তে-ভূ তে (প্রতি বিষয় বোধে) (এই জ্ঞানস্বরূপ আত্মাকে বিদিত হয়ে ধীরগণ এই লোক থেকে (এই মরণশীল অবস্থা থেকে) প্রস্থান করে অমৃত হন। (কেনোপনিষদ্‌মন্ত্র ২।৫।) যিনি আমাদের মধ্যে জ্ঞান বা চেতনা, আমাদের প্রতি অনুভূ তি বা বোধ তাঁরই প্রকাশ বা মূর্ত্তি, ঐ জ্ঞান স্বরূপই প্রতি মুহূ র্ত্তে আমাদের এই ভাবে চেতায়িত এবং সক্রিয় করে রেখেছেন। এইটি ঈশিত্ব বা 'জ্ঞ'র অনময়তা বা প্রাণময়তা। প্রতি অনুভূ তিতে এই দর্শনের দ্বারা ভৌতিক অবস্থাকে ত্যাগ করে জ্ঞানময় বা চিন্ময় স্বরূপে প্রবিষ্ট হয়ে, এই প্রকার বিজ্ঞাতা অমৃত লাভ করেন। এর নাম ' তেন ত্যক্তেন ভূ ঞ্জীথা'।
  • 8. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 8/43 ১-৯। প্রবিবিক্তভু ক্ ‌আত্মা। উপনিষদে উক্ত হয়েছে, যে আমরা যা কিছু খাই বা ভোগ করি, তার স্থূ লাংশের দ্বারা স্থূ লত্ব বা স্থূ ল শরীর বা ভৌতিক স্থিতি পুষ্ট হয়। আবার এই ভোগের যে সূক্ষ্মাংশ, তা চেতনার ভৌতিকতা বর্জ্জিত বা ভৌতিকতা ত্যক্ত যে স্বরূপ, যা বিশুদ্ধ জ্ঞানময়, তাতে নীত হয়।একথা উপনিষদে বর্ণনা করা হয়েছে। (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌৫।১৯।১ মন্ত্র এবং পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য, ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌মন্ত্র ৬।৬।১ থেকে ৬।৬।৫, প্রশ্নোপনিষদ্‌মন্ত্র ৩।৫ দ্রষ্টব্য। ) যে ক্ষেত্রে এই সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম আত্মা নিজেকে স্থূ ল বলে বোধ করে বা জেনে, স্থূ ল বা ভৌতিক বিশ্ব হয়েছেন, সেখানে আত্মার নাম স্থূ লভু ক্ ‌ । তাঁর যে স্থূ লত্ব বা ভৌতিকতা তার দ্বারা আমরাও স্থূ ল বা ভৌতিক হয়ে ভৌতিক বিশ্বকে ভোগ করছি। আর যেখানে, অন্তরীক্ষে, অন্তরে, এই স্থূ লত্বকে বা ভৌতিকতাকে বর্জ্জ ন করে ভোগ করছেন সেখানে এঁর নাম প্রবিবিক্তভু ক্ ‌বা তৈজস আত্মা। ( বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ৪।২।৩, মাণ্ডু ক্য উপনিষদ্‌৪র্থ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।) ভৌতিকতা বর্জ্জিত মানে যখন কোন কালগত বা দেশগত সীমার দ্বারা বদ্ধ নয়। যার কালগত সীমা নেই, সে কালের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না এবং সে ত্রিকালজ্ঞ। যার দেশগত সীমা নেই, সে সর্ব্বত্র স্থিতি নিতে পারে। তাই যে ভোগ ভৌতিক, তা কাল এবং দেশের (স্থানের) দ্বারা সীমিত, সুতরাং তা নানা ভাবে সীমিত এবং অস্থায়ী। যে ভোগ দেশ এবং কালের ঊর্দ্ধে , তার বৈচিত্র অনন্ত, কেননা সর্ব্ব দেশে সর্ব্ব কালে সেই ভোগের যে বৈচিত্র তাতে তা বিদ্যমান থাকে। তাই আমরা যখন খাই বা কিছু বোধ করি, তার স্থূ লাংশ যায় স্থূ ল শরীরে। তার সূক্ষ্মাংশ যায় শরীরের ঊর্দ্ধে যে জ্ঞানময় বা প্রাণময় সত্তা, তাঁতে। এই সূক্ষ্ম ভোগ যে ভাবে হয় তার বর্ণনা ছান্দোগ্য উপনিষদে ৫।১৯।১ মন্ত্র থেকে ৫। ২৩।২ মন্ত্রে বিশদ ভাবে বলা হয়েছে। তা সংক্ষেপে নীচে বলা হলো। এই যে অন্ন বা ভোগ যখন অন্তরে গৃহীত হয়, তার দ্বারা পঞ্চ প্রাণ (প্রাণ,ব্যান,অপান,সমান,উদান) তৃ প্ত হন। প্রথমে প্রাণের যে চক্ষু বা দর্শনময়তা তা তৃ প্ত হয়। তার কারণ যা স্থূ ল বা ভৌতিক তার থেকে আমাদের সত্য বোধ হয়। যা দেখি, তাকে সত্য বলতে কোন অসুবিধা হয় না।তাই এই ভৌতিকতাকে যখন সরিয়ে দেওয়া হয়, তখন যা প্রথম উপলব্ধি হয়, তা 'দর্শনময়তা' বা 'চক্ষু '। চক্ষু বা দৃষ্টি শক্তির আকারে যে প্রাণ আমাদের মধ্যে আছেন, তিনি যখন তৃ প্ত হন, তখন সূর্য বা আদিত্য তৃ প্ত হন। তার কারণ, যা আমাদের মধ্যে চক্ষু বা দৃষ্টি শক্তি তা আমাদের যে বহিরাকাশ, তাতে আদিত্য রূপে বিরাজিত।আদিত্য তৃ প্ত হলে, দ্যু তৃ প্ত হন। দ্যু অর্থে মহাপ্রাণ যিনি নিজেকে দোহন করে বিশ্বভূ বনকে প্রকাশ করেছেন, এবং তাঁর প্রকাশ কেন্দ্রের নাম আদিত্য। দ্যু তৃ প্ত হলে, যা কিছু দ্যু এবং আদিত্য লোকে অধিষ্ঠিত তাঁরা তৃ প্ত হন, এবং এঁদের তৃ প্তির হেতু সেই ভোক্তাও তৃ প্ত হন, এবং প্রজা, পশু, ভোগ্য অন্ন, তেজ এবং ব্রহ্মবর্চ্চ সের দ্বারা সেই ভোক্তা সমৃদ্ধ হন। একই ভাবে, ব্যান,অপান,সমান,উদান, এবং তাঁদের সাথে যুক্ত ইন্দ্রিয় শক্তিরা এবং দেবতারা তৃ প্ত হন। আমরা দেখি বা না দেখি, অনবরত আমাদের প্রতি ভোগ বা অনুভূ তি এইভাবে প্রাণ এবং তাঁর দেবময় যে মহিমা সকল, তাদের মধ্যে প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যখন খাই বা ভোগ করি, আমাদের সাথে পঞ্চপ্রাণ, দেবগণ এবং আমাদের অধ্যাত্মে এবং অধিদৈবে (দেবক্ষেত্রে) যাঁরা আছেন, তাঁরাও খান এবং ভোগ করেন। এই যে ভোগ বিতরিত হয়, এও ত্যাগ বা বিতরণ। (যাঁরা এইটি জানেন, তাঁরা বিতরণ হেতু বৈতরণী অনায়সে পার হন।) আত্মার ঈশিত্ব দেখলে আমরা সজ্ঞানে এই দেবক্ষেত্রের সাথে এক হয়ে, আমাদের এই মরণশীল, সংকু চিত অবস্থাকে ত্যাগ করবো। এর নাম 'প্রবিবিক্তভু ক্ ‌ ' হওয়া বা ত্যাগের দ্বারা ভোগ করা। ১-১০। মা গৃধঃ কস্য স্বিৎ ধনম্‌ ---কদাপি কারোর ধনকে কামনা করো না। অন্যের অধিকারে যা আছে তার প্রতি লিপ্সা ত্যাগ করে, ঈশ্বরের দ্বারা যে ভোগ নিজের জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে তার বাইরে না গিয়ে যে জীবন যাপন তা হলো ত্যাগের দ্বারা ভোগ করা; ত্যাগের দ্বারা যে ভোগ, এইটি তার একটি অর্থ । সুতরাং
  • 9. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 9/43 এই ব্রত বা এই ধর্ম্ম পালন করতে হলে পরের ধনের প্রতি ঈপ্সা পরিত্যাজ্য। কামনা করাই আমাদের স্বভাব। পরের ধনের প্রতি ঈপ্সা পরিত্যাজ্য হলেও, সেই ঈপ্সাকে সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। যখন আমরা উপলবদ্ধি করি যে শব্দ, স্পর্শ, রূপ,রস,গন্ধ, নিজেরই বোধ বা অনুভূ তির মূর্ত্তি, নিজের অন্তরেই তাদের বোধ করছি, তখন কামনার গতি বাইরে না গিয়ে ভিতরের দিকে চলে। যিনি জ্ঞান স্বরূপ, আমাদের মধ্যে প্রাণ বা চেতনা, যাঁর থেকে আমরা জন্মেছি, যাঁতে স্থিত, এবং যাঁতে লীন হই, তিনিই আমাতে বোধ বা অনুভূ তির আকারে ফু টছেন, এইটি জানার দ্বারা 'পর' বা 'দ্বিতীয়তার' বোধযুক্ত বহির্মুখী যে ভোগ বা অনুভূ তি তার থেকে মুক্ত হয়ে, ক্ষয়হীন, মৃত্যুহীন যে ভোগ তার সূচনা হয়। উপনিষদে অনুভু তিকে অবিদ্যা বলা হয়েছে, এবং এইভাবে অবিদ্যার দ্বারা মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায়-----এই কথা এই ঈশোপনিষদে ঋষি পরে বলেছেন। ( দ্বিতীয়তার বোধ থেকে মৃত্যু হয় বা মৃত্যুকে নিজের অন্ত বলে বা নিজের বিলুপ্তি বলে মনে হয়।নিজেই নিজের অন্ত বা অন্তিম কাল হয়ে ফু টছি, এই জ্ঞান হলে আর মৃত্যুতেও মৃত্যুর দ্বারা সেই জ্ঞানী অভিভূ ত হন না।) ২য় মন্ত্র। কু র্ব্বন্নেবেহ কর্ম্মাণি জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ। এবং ত্বয়ি নান্যথেতো'স্তি ন কর্ম্ম লিপ্যতেনরে।। অন্বয়-অর্থ। কু র্ব্বন্‌ইব (কু র্ব্বন্ ----করে; কু র্ব্বন্‌ইব--করেই) ইহ (ইহ লোকে) কর্ম্মাণি (কর্ম্মসকল; কর্ম্ম) জিজীবিষেৎ (জীবিত থাকতে ইচ্ছা করবে) শতং (শত) সমাঃ (বৎসর; )---কর্ম্ম করেই বা কর্ম্মের দ্বারাই ইহলোকে শত বৎসর জীবিত থাকতে ইচ্ছা করবে এবং (এই প্রকারই) ত্বয়ি (তোমাতে) না (না) অন্যথা (অন্যথা) ইতঃ (এখান থেকে) অস্তি (আছে) ন (না) কর্ম্ম (কর্ম্ম) লিপ্যতে (লিপ্ত হয়) নরে (নরতে) -----এবং (এই প্রকারই) অন্যথা (অন্যথা) ইতঃ (এর থেকে) ন অস্তি ( না আছে/ নেই) ত্বয়ি (তোমাতে), নরে (নরতে) ন (না) কর্ম্ম (কর্ম্ম) লিপ্যতে (লিপ্ত হয়) ----এই প্রকারই, এর থেকে অন্যথা নেই, যাতে তোমাতে, নরতে (মনুষ্যতে) কর্ম্ম লিপ্ত না হয়। অর্থ। কর্ম্মের দ্বারাই (কর্ম্ম করেই) ইহলোকে শত বৎসর জীবিত থাকতে ইচ্ছা করবে---- এই প্রকারই, এর থেকে অন্যথা নেই, যাতে তোমাতে, নরতে (মনুষ্যতে) কর্ম্ম লিপ্ত না হয়। নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা। ২-১। কর্ম্ম। " ন কর্ম্ম লিপ্যতেনরে'"। আমরা সবাই কর্ম্মময়। 'যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ'---- যা কিছু এই জগতে গতিশীল, সেই সবই চাঞ্চল্যময়, অর্থাৎ কর্ম্মময়। সবাই কালের দ্বারা, প্রাণের দ্বারা চলেছে। এই মহাপ্রাণ আমাদের সবাইকে মৃত্যুর পরপারে নিয়ে চলেছেন। এ কথা উপনিষদে বারবার বলা হয়েছে। মৃত্যুর থেকে দূরে নিয়ে চলেছেন, বা মৃত্যু এঁর থেকে দূরে থাকে, তাই মুখ্যপ্রাণ বা মহাপ্রাণের নাম দুর্গা। (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্ মন্ত্র ১।৩।৯ থেকে ১।৩।১১ দ্রষ্টব্য।) কর্ম্ম মানেই বোধ বা অনুভূ তিময় হওয়া। যে কর্ম্ম যে প্রকার বোধ বা অনুভূ তিময় হয়ে আমরা করি, সেই কর্ম্মের ফল সেই প্রকার হয়, অর্থাৎ আমাদের পরিণতি সেইরকম হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ সেইভাবে নির্ম্মিত হয়। কর্ম্ম-কালীন
  • 10. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 10/43 অনুভূ তি অনুসারে কর্ম্মের ফল হয়। অনুভূ তি-হীন বা উপলব্ধি-হীন কর্ম্মের থেকে বিশেষ কিছু লাভ হয় না। প্রতি কর্ম্ম যে আমার জ্ঞানেই হচ্ছে, যিনি আমাতে জ্ঞ বা আত্মা, তিনিই 'অন', প্রাণ, চেতনা বা কর্ম্ম-চাঞ্চল্যর আকারে আমাতে সর্ব্বদা প্রকাশ পাচ্ছেন আমাকে চেতায়িত রাখতে, এবং ক্রমশঃ আত্মজ্ঞতার পথে আমাকে নিয়ে যেতে। এইটি আত্মার ঈশিত্ব বা নিয়ন্ত্রণ এবং এইজন্য কর্ম্মের কথা বলা হয়েছে। কর্ম্ম== ক+ঋ+অ+ম। ঋ অর্থে গতি। সুতরাং কর্ম্ম অর্থে ক থেকে ম পর্যন্ত বর্ণ প্রবাহ বা প্রাণ প্রবাহ, বা ব্যঞ্জনময়, প্রকাশাত্মক চিৎগতি বা প্রাণগতি। ক থেকে ম পর্যন্ত যে ব্যঞ্জন বর্ণ সকল, তাদের নাম স্পর্শ বর্ণ। জিহ্বা,তালু, দন্ত,এবং অধরোষ্ঠ এই সব অবয়বদের স্পর্শ থেকে এই স্পর্শবর্ণ সকল উচ্চারিত হয়। স্পর্শ অর্থে 'বায়ু' বা 'প্রাণ'। প্রাণ-প্রবাহই স্পর্শ। স্পর্শের দ্বারাই আমরা যা আমাদের থেকে ভিন্ন বা দ্বিতীয় তার সাথে যুক্ত হই। মৃত্যু দর্শন, দ্বৈতবোধ বা নানা অর্থাৎ ভিন্নতার বোধ থেকে হয়। (মৃত্যোঃ স মৃত্যুম আপ্নোতি য ইহ.নানেব পশ্যতি.....মৃত্যুর থেকে সে মৃত্যুকে পায় যে এখানে নানা (দ্বিতীয়) দর্শন করে। কঠোপনিষদ্‌মন্ত্র ২।১।১০ থেকে উদ্ধৃ ত। )। স্পর্শের যে অনুভূ তি তার জ্ঞানেন্দ্রিয় হল অধরোষ্ঠ এবং ত্বক, আর কর্ম্মেন্দ্রিয় হলো বাহু, যা আমাদের কর্ম্ম করার প্রধান অঙ্গ। কর্ম্ম করা মানেই দ্বিতীয় কিছু কে বা দ্বিতীয়তাকে স্পর্শ করা। সুতরাং কর্ম্ম কে যত জ্ঞানময় বা আত্ম চেতনার প্রকাশ বলে অভ্যাস করা যায়, যে চেতনা এবং আত্মা সবার চেতনা এবং আত্মা, তখন সেই কর্ম্মের দ্বারা অমৃত লাভ হয়। দ্বিতীয় সঙ্গ না হয়ে আত্মসঙ্গ হয়।এর নাম " ন কর্ম্ম লিপ্যতেনরে'---কর্ম্ম বা দ্বিতীয় বোধের দ্বারা লিপ্ত বা অভিভূ ত হয়ো না। ২-২। জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ। জিজীবিষেৎ----জীবিত থাকতে ইচ্ছা করো। আমরা মরেই আছি। প্রতি মুহূ র্ত্তে অস্তিত্ব রক্ষার তারনায় আমরা ত্রস্ত, এবং এর নাম বাঁচা নয়। তাই বলা হয়েছে, 'বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করো (জিজীবিষেৎ)', এবং যে বেঁচে থাকা 'অন্তে' নয়, পূর্ণতায় নিয়ে যাবে। এই পূর্ণতায় বাঁচার নাম 'শত বৎসর (শতং সমাঃ) ' বেঁচে থাকা। শত শব্দটি পূর্ণতাবাচক।'শ' বা 'শক্তি' যুক্ত হবার যে ক্রম বা ক্রমাঙ্ক তা শত। তাই কোনকিছু যদি 'শত' হয়, তাহলে তার উপর অধিকার এসে যায়। শত বৎসর আয়ু তখনি হয় যখন প্রাণ প্রবাহ বা আয়ু নিজেরই প্রবাহ বা বর্দ্ধ ন হয়ে যায়।নিজেকেই নিজের মধ্যে জন্ম থেকে মরণ অব্দি যত রূপ, সেই সর্ব্বরূপে পাচ্ছি, এতে পূর্ণতার উপলব্ধি হয়। 'সমা' শব্দটির অর্থ 'বৎসর'। সমা অর্থে 'সম অয়ন'। কাল প্রকাশের সাথে সমতা রেখে যে চলা বা আবর্ত্ত ন, তা 'সমা' বা 'সমাবর্ত্ত ন'। ২-৩। এবং ত্বয়ি নান্যথেতো'স্তি ন কর্ম্ম লিপ্যতেনরে-----এই প্রকারই, এর থেকে অন্যথা নেই, যাতে তোমাতে, নরতে (মনুষ্যতে) কর্ম্ম লিপ্ত না হয়। কর্ম্ম থেকে অন্যথা বা অন্য কোন স্থিতি বা অবস্থা সম্ভব নয়। আমরা নিচেষ্ট হতে প্রয়াসী হতে পারি, কিন্তু শারীরিক এবং মানসিক কর্ম্ম (অনুভূ তি) চলতেই থাকবে। উপনিষদে বলা হয়েছে, পুরুষ মাত্রেই কামনা করছে, সেই কামনা থেকে সংকল্প বা ক্রতু ময় হচ্ছে, এবং সংকল্প অনুযায়ী কর্ম্ম করছে, এবং যেমন কর্ম্ম করছে, সেইভাবেই তার পরিণতি বা বিবর্ত্ত ন হচ্ছে। যে কোন সত্তাই পুরুষ। যেহেতু সৃষ্টির আদিতে স্রষ্টা বহু হবার কামনা করেছিলেন এবং তাঁর থেকে সবাই সৃষ্ট হয়েছে, সেই রকম, প্রতি পুরুষ, বা যে কেউ সৃষ্ট
  • 11. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 11/43 হয়েছে, সেও কামময়, এবং সেইজন্য সে কর্ম্মময়। কর্ম্মের দ্বারাই আমরা বহু হই, নিজেদেরকে প্রসারিত করি।কামনার দ্বারাই, কর্ম্মের দ্বারাই আমরা অন্তরে বহু অনুভূ তিময় হই বা বহু হই। তাই কর্মেন্দ্রিয়র নাম ' বাহু '। ৩য় মন্ত্র। অসুর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃ তাঃ। তাংস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনো জনাঃ। অন্বয়-অর্থ। অসুর্যা (অসুর্য ) নাম (নামক) তে (সেই) লোকাঃ (লোক সকল) অন্ধেন (অন্ধ) তমসা (তমসার দ্বারা) বৃ তাঃ (আবৃ ত)--- --অসুর্য নামক সেই লোক সকল, যা অন্ধ তমসার দ্বারা আবৃ ত তান্‌(তারা) তে (তথায়) প্রেত্য (প্রস্থান করে; মৃত্যুর পর প্রস্থান করে) অভিগচ্ছন্তি (গমন করে) যে কে চ (যারা যারাই) আত্মহনো (আত্মহননকারী) জনাঃ (লোকেরা, ব্যক্তিরা)----তারা মৃত্যুর পর প্রস্থান করে তথায় গমন করে, যারা যারাই আত্মহননকারী অর্থ। অসুর্য নামক সেই লোক সকল, যা অন্ধ তমসার দ্বারা আবৃ ত; যারা যারাই আত্মহননকারী, তারা মৃত্যুর পর প্রস্থান করে তথায় গমন করে। নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা। ৩-১।অসুর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃ তাঃ---অসুর্য নামক সেই লোক সকল যা অন্ধ তমসার দ্বারা আবৃ ত। অসুর্য----অ (অল্প,নাস্তি) + সুঃ (সোম বা প্রাণ প্রবাহ) + য (যমন, নিয়ন্ত্রণ)। সু বা সোম বা প্রাণ প্রবাহ যেখানে নেই বা অল্প বা যমিত বা নিয়ন্ত্রিত, সেই রকম যা, তা অসুর্য। যেখানে প্রাণ চাঞ্চল্য স্তিমিত বা ক্ষীণ, সেই লোক অসুর্য। সুর্য অর্থে সূর্যও হয়। সুতরাং অসুর্যা লোক অর্থে যেখানে সূর্য বা প্রাণের দীপ্তি প্রচ্ছন্ন। অসুর্য শব্দের আর একটি নিরুক্ত অনুচ্ছেদ ৩-৩ এ উল্লেখ করা হয়েছে। ৩-২।অন্ধেন তমসাবৃ তাঃ----অন্ধ তমের দ্বারা আবৃ ত। 'তম' শব্দের একটি অর্থ 'আত্যন্তিক'। সুতরাং ' অন্ধ তমের দ্বারা আবৃ ত ' অর্থে, 'শুধুমাত্র অন্ধকার, তার বাইরে অন্য কিছু দৃষ্ট নয়'। ৩-৩।তাংস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনো জনাঃ----যারা যারাই আত্মহননকারী, তারা মৃত্যুর পর প্রস্থান করে তথায় গমন করে। 'আত্মহনো জনাঃ' অর্থে যারা আত্মহননকারী। আত্মহনন অর্থে আত্মা, যিনি 'জ্ঞ' বা স্থির নিজবোধ স্বরূপ, যিনি আমাদের প্রতি অনুভূ তি বা বোধক্রিয়ার মূলে রয়েছেন, তাঁকে না দেখা বা উপেক্ষা করার নাম আত্মহনন করা। নিজে বা নিজবোধ বা আত্মবোধ না থাকলে, কোন বোধ থাকে না। আমরা যখন ঘুমিয়ে পরি বা জ্ঞান হারাই, তখন এই নিজেতেই ঘুমাই বা সংজ্ঞাহীন হই, আবার এই নিজেতেই জেগে উঠি। এই জন্য ঘুমের সময় 'অস্তি-নাস্তি' বোধ না থাকলেও, জাগ্রত হয়ে বা সংজ্ঞা লাভ করে, এই 'নিজবোধ' অবলম্বন করেই 'অহং বা আমি' বলে প্রকাশ পাই, এবং
  • 12. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 12/43 নিদ্রিত অবস্থায় যে ছিলাম, তাও ধারণা করতে পারি। অনাত্মজ্ঞতা হেতু , এই অন্ধকার আমরা কর্ম্মসাপেক্ষে সবাই মৃত্যুর পর অল্পবিস্তর ভোগ করি। অসুর্যা শব্দের অর্থ পূর্ব্বে ৩-১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। অসুর্যা শব্দের আর একটি অর্থ হলো, ' যা অসুরদের, বা যা আসুরিক ', এবং সেই হেতু অসুর্য বা আত্মজ্যোতি-হীন। অসু মানে প্রাণ এবং অসুর মানে যারা প্রাণের অসু বা রঞ্জনাতে আবিষ্ট হয়ে থাকে, কিন্তু যাঁর জ্যোতি বা প্রকাশ এই বিশ্ব হয়ে প্রতিভাত হচ্ছে সেই প্রাণকে ( 'অন' কে) এবং প্রাণ যাঁর সক্রিয়তা সেই আত্মাকে ('জ্ঞ' কে) দেখে না। এই জন্য মৃত্যুর পর, অর্থাৎ যখন ভৌতিক-বিশ্ব তিরোহিত হয়, তখন তারা অন্ধকারই দেখে। ৪র্থ মন্ত্র। অনেজদেকং মনসো জবীয়ো নৈনদ্দেবা আপ্নুবন্‌পূর্ব্বমর্ষৎ। তদ্ধাবতো'ন্যানত্যেতি তিষ্ঠৎ তস্মিন্নপো মাতরিশ্বা দধাতি।। অন্বয়-অর্থ। অনেজৎ (ন এজৎ--কম্পিত হন না; স্থির) একং (এক) মনসঃ (মনের থেকে) জবীয়ঃ (বেগবান্‌) ন (না) এনৎ (এনাকে) দেবাঃ (দেবগণ) আপ্নুবন্‌(আপ্ত হয়; প্রাপ্ত হয়) পূর্ব্বম্‌(পূর্ব্বেই) অর্ষৎ (ধাবমান্‌ )-----অকম্পিত (স্থির), এক, মনের থেকেও গতিবান্‌ , পূর্ব্বেই ধাবমান্‌এনাকে দেবগণ প্রাপ্ত হন না। তৎ (তিনি) ধাবতঃ (ধাবমান্‌হয়ে; ধাবন করে) অন্যান্‌(অন্যান্যদের) অতি এতি (অতিক্রম করেন) তিষ্ঠৎ (স্থির থেকেও) তস্মিন্‌(তাঁতে) অপঃ (আপ্‌কে, দিব্য জলকে) মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) দধাতি (ধারণ করেন)----স্থির থেকেও, তিনি ধাবন করে অন্যান্যদের অতিক্রম করেন; তাঁতে মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) অপ্‌(দিব্য জলকে) কে ধারণ করেন। অর্থ। অকম্পিত (স্থির), এক, মনের থেকেও গতিবান্‌ , পূর্ব্বেই ধাবমান্‌এনাকে দেবগণ প্রাপ্ত হন না। স্থির থেকেও, তিনি ধাবন করে অন্যান্যদের অতিক্রম করেন; তাঁতে মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) অপ্‌ কে (দিব্য জলকে) ধারণ করেন। নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা। ৪-১। অনেজৎ --ন এজৎ--কম্পিত হন না। ' অনেজৎ' শব্দের আর একটি অর্থ, 'অন + এজৎ', অর্থাৎ 'অন' বা প্রাণ যাঁর 'এজন' বা কম্পন। এই জন্য উপনিষদে বলা হয়েছে, 'আত্মন এষ প্রাণো জায়তে'----আত্মা থেকেই এই প্রাণ জাত হন। (প্রশ্নোপনিষদ্‌মন্ত্র ৩।৩ দ্রষ্টব্য।) যিনি 'জ্ঞ' তাঁর থেকেই 'অন' বা প্রাণ জাত হন। ৪-২। অনেজদেকং---অনেজৎ একং। এজন অর্থে কম্পন বা নিজের বাইরে না গিয়ে যে গতি, নিজেতেই নিজের গতি, এইটি এজন বা কম্পনের বৈশিষ্ট্য। এই জন্য 'এজন' শব্দের একটি অর্থ, এ (এক) + জন (জায়মান্)---এক হয়েও জাত হওয়া বা দ্বিতীয় হওয়া। এই জন্য ' অনেজৎ একং' বলা হলো। ৪-৩। মনসঃ জবীয়ঃ --- মনের থেকে বেগবান্‌ । মাতরিশ্বা।
  • 13. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 13/43 প্রথমে বলা হলো, এই আত্মা এজন বিহীন, বা অকম্পিত। তারপর বলা হলো, ' মনসঃ জবীয়ঃ --- মনের থেকে বেগবান্‌ '। দ্বিতীয়তা না থাকলে গতি হয় না। দ্বিতীয়তায় গতি নেওয়ার অর্থ বহু হওয়া, বা সৃষ্টি করা।আত্মার সক্রিয়তাই প্রাণ, এবং প্রাণই বহু হন, নিজেকে বিশ্বের আকারে সৃষ্টি করেন। প্রাণের গতির বৈশিষ্ট্য হলো যে সেই গতিতে যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে, তা প্রাণেই সংলগ্ন থাকে। প্রাণ দ্বিতীয় হয়েও, সেই দ্বিতীয় সত্তাগুলিকে নিজের বর্দ্ধ ন বা বৃ দ্ধি বলে জানেন। এইজন্য প্রাণকে বা বায়ুকে উপনিষদে অধি-অর্দ্ধ বলা হয়েছে। অধি-অর্দ্ধ (অধ্যর্দ্ধ ) অর্থে ১-১/২ বা দেড়। ১-১/২ অর্থে এক এবং একের থেকে যা দ্বিতীয় হয়েছে (খণ্ডিত হয়েছে) তা একেই সংযুক্ত। বৃ হদারণ্যক উপনিষদে উক্ত হয়েছে, যেহেতু এই প্রাণেতে সবাই বৃ দ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তাই ইনি অধ্যর্দ্ধ (অধ্যর্দ্ধ )। ' যৎ অস্মিন্‌ইদম্‌সর্ব্বম্‌অধি অর্ধ্নোৎ, তেন অধ্যর্দ্ধঃ----যেহেতু এঁতে (এই প্রাণেতে, এই বায়ুতে) এই সকল কিছু বর্দ্ধিত হয়, সেই কারণে ' অধ্যর্দ্ধ '। অর্দ্ধ শব্দটি ঋধ্‌ ধাতু থেকে হয়েছে, ঋধ্‌অর্থে বর্দ্ধিত হওয়া।(বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌৩।৯।৯ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।) একই কারণে প্রাণকে অশ্ব বলা হয়। অশ্ব অর্থে যিনি শ্বাস-প্রশ্বাসের আবর্ত্ত ন হয়ে, প্রাণাবর্ত্ত ন হয়ে, কালাবর্ত্ত ন হয়ে ছু টে চলেছেন। অশ্ব শব্দের আর একটি অর্থ হলো যিনি স্ফীত হচ্ছেন, প্রসারিত হচ্ছেন। বায়ু বা প্রাণ প্রসারিত হন, স্ফীত হন। অশ্ব শব্দটি শ্বি ধাতু থেকে হয়েছে; শ্বি অর্থে স্ফীত হওয়া। প্রাণ বা বায়ুকে মাতরিশ্বা বলা হয়। আমরা যেমন মাতৃ গর্ভে বর্দ্ধিত হই, সেই রকম আমরা সবাই প্রাণেতেই বর্দ্ধিত হচ্ছি, কাল যাপন করছি, সৃষ্টি থেকে স্থিতি, স্থিতি থেকে লয়ে, এবং জন্ম থেকে জন্মান্তরের মধ্যে দিয়ে বিবর্ত্তিত হয়ে আমাদের অভ্যুদয় হচ্ছে। প্রাণ নিজের মধ্যে মাত্রা দিয়ে, আমাদের বর্দ্ধ ন বা পরিবর্ত্ত ন করছেন বলে, এঁর নাম মাতরিশ্বা। মাতরি----মাতাতে, বা যিনি মাত্রার দ্বারা পরিবর্ত্ত ন করেন, তাঁতে শ্বন্‌বা বর্দ্ধ ন হচ্ছে, তাই ' মাতরিশ্বা'। মাতরি+শ্বন্‌ = মাতরিশ্বন্‌> মাতরিশ্বা। যেখানে দ্বিতীয় বোধ সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত, তার নাম মন। সুনির্দিষ্ট, আয়তনময়, বোধগম্য, ভৌতিক বিশ্ব আমরা যেখানে অনুভব করছি তার নাম 'মন'। মনের কোন আয়তন নেই, কিন্তু যা কছু মাপা যায়, যা আয়তনময়, যা মান বা পরিমাপযোগ্য, তার মাপ বা মান নির্ণয় মনেতেই হয়। দ্বিতীয় বোধ যেখানে প্রকটিত, সেখানে আর কম্পন বা এজন নয়, সেখানে গতি, একটি থেকে অন্যতে গতি। ৪-৪।তৎ ধাবতঃ অন্যান্‌অতি এতি তিষ্ঠৎ -----স্থির থেকেও, তিনি ধাবন করে অন্যান্যদের অতিক্রম করেন। যেহেতু প্রাণের দ্বারাই সকলে প্রাণেতেই গতিময় বা পরিবর্ত্ত নময়, তাই প্রাণ সবাইকে অতিক্রম (অতি এতি) করেই থাকেন। যেহেতু সকল গতি বা পরিণতি প্রাণেতেই হয়, তাই প্রাণ স্থির থেকেও ধাবন করেন এবং সকলকে অতিক্রম করেন। অতিক্রম করার অর্থ ক্রম বা ক্রমণের ঊর্দ্ধে ।সুতরাং যা কিছু র আরম্ভ এবং শেষ আছে, সেই আরম্ভ এবং শেষ অব্দি যে ক্রমসকল তা যাঁতে, যে প্রাণেতে (অনেতে), সেই প্রাণ ক্রমণের ঊর্দ্ধে । তাই ইনি সবাইকে সর্ব্বদা অতিক্রম করছেন। ৪-৫।তস্মিন্‌ অপঃ মাতরিশ্বা দধাতি ------- তাঁতে মাতরিশ্বা (বায়ু; প্রাণ) অপ্‌(দিব্য জলকে) কে ধারণ করেন। অপ্‌অর্থে দিব্য জল বা দিব্য বারি, যাঁর থেকে মূর্ত্ত বা স্থূ ল বিশ্ব প্রকাশ পায় এবং যাঁতে মূর্তি বা ভৌতিকতা বিলীন হয়। এঁর দ্বারাই ভূ ত সমূহ আপ্যায়িত হচ্ছে। আগে বলা হয়েছে, যেখানে আমরা আয়তনময়, যেখানে ভৌতিক বিশ্বকে অনুভব করছি তা হলো মন। আত্মা বা প্রাণের যে বহির্মুখী তেজ, তা থেকে মান-সম্পন্ন, পরিমাপ-যোগ্য বিশ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আর আমাদের মনেও সেই মান-সম্পন্ন, পরিমাপ-যোগ্য বিশ্ব অনুভূ ত হচ্ছে, যার নাম ভৌতিক বিশ্ব। ভৌতিক শব্দটি ভূ ত শব্দ থেকে হয়েছে। ভূ ত শব্দের একটি অর্থ 'অতীত'। সমস্ত সৃষ্টি করে, নিজেকে সর্ব্বরূপে পেয়ে যে আপ্তি , তাই 'অপ্‌ ' এবং 'আপ্‌ ' বা আপ্তি। এই ভৌতিক বিশ্ব, চেতনার আপ্তির পরাকাষ্ঠা। আর এই মন এবং ভৌতিক বিশ্ব আপ্যায়িত হচ্ছে অপের দ্বারা। অপ্‌হল প্রাণের বসন, প্রাণের আবরণ, বা প্রাণের শরীর । (বৃ হদারণ্যক উপনিষদ্‌মন্ত্র ১।৫।১৩ দ্রষ্টব্য।)
  • 14. 12/17/23, 3:21 PM ঈশোপনিষদ্‌(ঈশ উপনিষদ্‌ ) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annot… https://upanishadinbengali.blogspot.com/2023/12/blog-post.html 14/43 প্রাণের যে তৃ প্তি তাই স্থূ ল বিশ্ব হয়ে ফু টে উঠেছে। আর এই তৃ প্তি তাঁর বসন, আপ্তি, অপ্‌ । এই 'অপ্‌ ' কে প্রাণ বা মাতরিশ্বা নিজেতে ধারণ করেছেন, যার থেকে আমাদের বিশ্ব প্রজাত হয়েছে। বসু দেবতা, যাঁদের কথা পূর্ব্বে আলোচিত হয়েছে, তাঁরা এই প্রাণের বসন-অভিমানী পুরুষ। বসনের দ্বারা যেমন সকলে আচ্ছাদিত হয়, আবার এই যে বসন তা নির্ম্মিত হয় বয়নের দ্বারা। যিনি বয়ন করেন তিনি বায়ু বা মাতরিশ্বা। তাই বায়ুকে সূত্রাত্মাও বলা হয়। এই সূত্রের দ্বারা সবাই সবার সাথে যুক্ত।প্রাণ বা কাল বা বায়ু যখন প্রবাহিত হন, তখন আমরা একটি অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যাই, যার নাম হল পরিবর্ত্ত ন। এই পরিণতিগুলি বায়ু বা প্রাণরূপ সূত্রের দ্বারা যুক্ত থাকে। তাতে যে একটি সামগ্রিক সূত্রজাল বা তন্তুজাল রচিত হয়, সেইটি তার বসন। এই ভৌতিক বিশ্ব সেই বসনেরই বহির্ভাগ আর এই ভৌতিকতার মূলে আছে অপ্‌ । এই দিব্য অপ্‌ , যাঁর থেকে ভৌতিক বিশ্বরূপ আবরণ রচিত হয়েছে, তাঁর নাম বরুণ। আবরণ করেন তাই বরুণ। এই বিশ্ব এই ভাবে , এই মাতরিশ্বার তন্তুজালে রচিত বা বিধৃ ত। ৫ম মন্ত্র। তদেজতি তন্নৈজতি তদ্দূরে তদ্বন্তিকে। তদন্তরস্য সর্ব্বস্য তদু সর্ব্বস্যাস্য বাহ্যতঃ।। অন্বয়-অর্থ। তৎ (তিনি) এজতি (এজন করেন) তৎ (তিনি) ন (না) এজতি (এজন করেন)----তিনি এজন করেন, তিনি এজন করেন না। তৎ (তিনি) দূরে (দূরে) তৎ (তিনি) উ (আবার) অন্তিকে (সমীপে)-----তিনি দূরে তিনি আবার সমীপে। তৎ (তিনি) অন্তরস্য (অন্তরে) সর্ব্বস্য (সকলের) তৎ (তিনি) উ (আবার) সর্ব্বস্য (সকলের) অস্য (এই) বাহ্যতঃ (বাহ্যে)------তিনি সকলের অন্তরে, তিনি আবার এই সকলের বাহ্যে। অর্থ। তিনি এজন করেন, তিনি এজন করেন না। তিনি দূরে তিনি আবার সমীপে। তিনি সকলের অন্তরে, তিনি আবার এই সকলের বাহ্যে। নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা। ৫-১। তৎ এজতি ----তিনি এজন করেন। এজন অর্থে 'এ +জন'---যিনি 'এক' তিনি যখন 'জাত' হন, 'জনক' হন, তখন সেই ক্রিয়ার নাম এজন। এজনকে কম্পনও বলা হয়। 'তেজ' শব্দটির অর্থই হলো, 'তৎ এজতি'----'তিনি অর্থাৎ আত্মস্বরূপ এজন করছেন'। তাই প্রাণ তেজোময়, কেননা আত্মার সক্রিয়তাই 'প্রাণ'। এই জন্য প্রাণকে প্রাণাগ্নি বলা হয়, কেননা প্রাণের তেজের দ্বারাই সকল কর্ম্ম সাধিত হচ্ছে। যিনি অগ্রবর্ত্তী ('অগ্‌ ', 'অগ্র') হয়ে সকল ঘটনা, সকল কিছু কে নিয়ে আসেন ( 'নি' /নী), নীত বা উপনীত করেন, তিনি অগ্নি। ৫-২। তৎ ন এজতি -----তিনি এজন করেন না।