SlideShare a Scribd company logo
1 of 5
Download to read offline
প্রার্থনা
—বিদ্যাপতি
শব্দার্থ :
তাতল - উত্তপ্ত।
মিত - মিত্র ৷
বিসরি — ভু লে গিয়ে / বিস্মৃত হয়ে ৷
সমর্পিলু – সমর্পণ করলাম ।
তু হুঁ – তু মি।
জগৎ তারণ - জগৎত্রাতা ।
বিশোয়াসা - বিশ্বাস ।
জরা - বার্ধক্য।
ভজব— ভজন করব ।
মাধব - শ্রীকৃ ষ্ণ।
নিন্দে- নিদ্রায়।
গোঙায়লু - অতিবাহিত করলাম।
মঝু - আমার ৷
সৈকত - বালুতট ৷
কবি পরিচিতি :
মধ্যযুগের (১৪০১ – ১৮০০ খ্রি.) বাংলা সাহিত্যের বৈষ্ণব পদাবলি ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বিদ্যাপতি। তিনি ছিলেন
বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান। পিতা গণপতি ঠাকুর। বিদ্যাপতি মিথিলার কবি হলেও বাংলা কাব্য সাহিত্যকে নানাভাবে
প্রভাবিত করেছেন। বিদ্যাপতির পদগুলো ছন্দের ঝংকারে, উপমার গৌরবে সজীব, চঞ্চল ও ঐশ্বর্যময়। সংস্কৃত সাহিত্যে
তাঁর পাণ্ডিত্য অতু লনীয়। চতু র্দশ শতকে জন্ম গ্রহণ করে পঞ্চদশ শতকের তৃ তীয় ভাগ পর্যন্ত বিদ্যাপতি জীবিত ছিলেন।
তিনি মিথিলার রাজা শিবসিংহের সভাকবি ছিলেন।
১/ (ক) শূন্যস্থান পূর্ণ করো ।
(ক) তাতল _________ বারিবিন্দু সম।
উঃ- সৈকত।
(খ) মাধব _________ পরিনাম নিরাশা ৷
উঃ- হাম ।
(গ) _________ জগতারণ, দীন-দয়াময়।
উঃ- তু হুঁ ।
(ঘ) আধ জনম হাম নিন্দে _________ ৷
উঃ- গোঙায়লুঁ ৷
(ঙ) _________রমণী রসরঙ্গে মাতু ল ৷
উঃ- নিধুবনে ।
(খ) পাঠ অনুসরণে শুদ্ধ করে লেখো।
(ক) সূত-মিত-পুরুষ সমাজে।
উঃ- সুত-মিত-রমণী-সমাজে।
(খ) তু হুঁ জগন্নাথ, দীনদয়াময় ।
উঃ- তু হুঁ জগ-তারণ, দীনদয়াময়।
(গ) জরা শিশু এতদিন গেলা।
উঃ জরা শিশু কতদিন গেলা।
(ঘ) তোহে পুজিব কোন বেলা।
উঃ- তোহে ভজব কোন বেলা।
2/ অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
(ক) 'প্রার্থনা' কবিতাটির কবি কে ?
উঃ- 'প্রার্থনা' কবিতাটির কবি হলেন বিদ্যাপতি।
(খ) কবি কাকে ভু লেছিলেন বলে অনুতাপ করেছেন?
উঃ- কবি ঈশ্বরকে বা মাধবকে ভু লেছিলেন বলে অনুতাপ করেছেন।
(গ) 'বিশোয়াসা' কোন শব্দের অন্তর্গত ?
উঃ- ব্রজবুলি শব্দের অন্তর্গত।
(ঘ) 'নিন্দে' শব্দের অর্থ কী?
উঃ-'নিন্দে' শব্দের অর্থ হলো নিদ্রায়।
৬) বিদ্যাপতি প্রকৃ তপক্ষে কোথাকার কবি?
উঃ- বিদ্যাপতি প্রকৃ তপক্ষে মিথিলার কবি ।
৫) ব্রজবুলি ভাষায় রচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যের নাম লোখো ৷
উঃ- ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী।
(ছ) বিদ্যাপতির পিতার নাম কী ?
উঃ- গণপতি ঠাকুর।
(জ) বিদ্যাপতি মিথিলার কোন রাজার শাসন কালে সভাকবি ছিলেন ?
উঃ- রাজা শিবসিংহের।
৩/ ৩,৪ টি বাক্যে উত্তর দাও।
(ক) 'মাধব, হাম পরিণাম নিরাশা'— কবির এমন মনোভাবের কারণ কী ?
উঃ-মিথিলার কবি বিদ্যাপতির স্ত্রী-পুত্র-মিত্র যুক্ত সংসারের মধ্যে আবদ্ধ থেকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়কে নষ্ট করেছেন।
জীবনকে তিনি ব্যর্থতায় পরিণত করে ফেলেছেন। সেজন্য কবি বিদ্যাপতি মাধব বা শ্রীকৃ ষ্ণকে আক্ষেপ করে বলেছেন যে
তাঁর ব্যর্থ ও মূল্যহীন জীবনের পরিনাম হতাশা ছাড়া আর কোন কিছুই পাওয়ার নেই।
(খ) কবি কেন আশাবাদী যে ঈশ্বর তাকে কৃ পা করবেন ?
উঃ- মিথিলার কবি বিদ্যাপতি 'মধব' অর্থাৎ 'শ্রীকৃ ষ্ণের' কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করে উদ্ধার পেতে চেয়েছেন।
কেননা তিনি 'জগৎতারণ' অর্থাৎ জগতের সৃষ্টিকর্ত া এবং দিনের প্রতি দয়াশীল। অতএব তিনি সকলের উদ্দারকর্ত া ও তাই
কবি আশাবাদী যে মাধব বা ঈশ্বর তাঁকে কৃ পা করবেন।
(গ) জীবনের অর্ধেক কাল পর্যন্ত কবি কীভাবে সময় অতিবাহিত করেছেন?
উঃ- উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল যেমন কোনো চিহ্ন রেখে যায় না। ঠিক তেমনিই সংসারের স্ত্রী-পুথ-মিএকে নিয়ে
কবি এতই ব্যস্ত ছিলেন যে কিভাবে যে তার সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে তা তিনি বুঝাতে পারেন নি। তিনি বলেছিলেন
সে জীবনের অর্ধেক সময় তিনি ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। আবার যৌবন কলে তিনি নিধুবণে গিয়ে রমণীদের সঙ্গে রসরঙ্গ করে
সময় অতিবাহিত করেছেন।
(ঘ) 'তাতল সৈকত বারিবিন্দু সম' বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উঃ- 'তাতল সৈকত বারিবিন্দু সম' বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে, উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল পড়লেই বালু যেমন
তাকে শুষে নেয়, তার আর যেমন নিজস্ব সত্তা থাকে না, তেমনই সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্ৰ কবিকে এমনইভাবে শুষে নিয়েছে
যে তার আর কোন নিজস্ব সত্তা নেই।
8/ রচনাধর্মী উত্তর লেখো ৷
(ক) 'প্রার্থনা' কবিতাটি অবলম্বনে কবির বক্তব্য বিষয় পরিস্ফু ট করো।
অথবা,
(গ) প্রার্থনা কবিতায় কবি বিদ্যাপতি যেভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন তা বর্ণনা করো।
উঃ- মিথিলার কবি বিদ্যাপতি 'প্রার্থনা' পদটিতে মিনতি করে বলেছিলেন যে চিরস্থায়ী শ্বাশত 'মাধব ' অর্থাৎ শ্রীকৃ ষ্ণকে ভু লে
গিয়ে তিনি এতদিন সংসারজগতে ডু বেছিলেন। উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল যেমন কোন চিহ্ন রেখে যায় না ঠিক
তেমনি সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্রকে নিয়ে তিনি এতই ব্যস্ত ছিলেন যে তাদের মধ্যে থেকে মাধবের প্রতি ভক্তি নিবেদন তাঁর
পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ক্ষণস্থায়ী সংসারের মধ্যে আবদ্ধ থেকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় নষ্ট করে জীবনকে ব্যর্থতায়
পরিণত করেছে। সেজন্য কবির মনে হয়েছে–
" মাধব, হাম পরিণাম নিরাশা "
অর্থাৎ তার পরিণামের আকুল হতাশা ও নিরাশা ছাড়া আর কোন কিছু পাওয়ার নেই। মাধব জগতের উদ্ধারকর্ত া ও
গরীরের রক্ষাকর্থা। তাই কবির বিশ্বাস মার্বনের কৃ পা ও করুনা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন না। আবার কবি বলেছেন–
" আধ জনম হাম নিন্দে গোঙায়লুঁ "
অর্থাৎ কবির জীবনের অর্ধেক সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন এবং জরা-শিশুকাল ও অনেক দিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।
আবার যৌবনকালে তিনি নিধুবণে গিয়ে রসরঙ্গ, আনন্দ - স্ফূ র্ত্তি করে কাটিয়েছেন। তাদের মাজখানে থেকে মাধব বা
শ্রীকৃ ষ্ণকে ভজনা করার সময় তিনি পাননি ৷
তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে বলেছেন যে–
" . . . শেষ শমন- ভয়
তু য়া বিণু গতি নাহি আরা "
অর্থাৎ মাধব ছাড়া তার আর কোনো গতি নেই কারণ তিনি আদি-অনাদির নাথ এবং এই পৃথিবীর জ্বালাময় জীবন থেকে
রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁরই ৷
(খ) মাধব হাম পরিণাম নিরাশা'- কার, কোন রচনা থেকে পংক্তিটি উদ্ধৃত হয়েছে? মাধব বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
কবির এই মন্তব্যের যথার্থাকা আলোচনা করো।
উঃ- মিথিলার কবি বিদ্যাপতির 'প্রার্থনা' পদটি থেকে আলোচ্য পংক্তিটি উদ্ধৃত করা হয়েছে।
এখানে মাধব বলতে শ্রীকৃ ষ্ণকে বোঝানো হয়েছে। কবি বিদ্যাপতির সারা জীবন ধরে মাধবকে সম্পূর্ণরূপে ভু লে
গিয়ে পার্থিব ও ভোগ-সুখে মত্ত থেকেছেন। যার ফলে জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছেন। এতদিন
তার কাছে মুখ্য ছিল পার্থিব ও ভোগ — সুখ পরকালের চিন্তা তিনি করেননি। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি উপলব্ধি
করেছেন যে-
" মাধব, হাম পরিনাম নিরাশা "
অর্থাৎ তাঁর পরিণাম নিশ্চিতভাবে নিরাশাজনক শৈশব ও যৌবন এই দুই কালে কবি জীবনের অনেক অংশ অপচয়
করেছেন । কিন্তু আমরা জানি মানব জীবনের পূর্ণকর্মশক্তির কাল হলো যৌবনকাল। আর সেই সময়টাতেই কর্মের ফসল
ফলাতে হয়। কিন্তু কবি সেই সময় রমণীর সঙ্গে রসরঙ্গ, আনন্দ- স্ফূ তি করে সময় হয়নি মাধবকে শ্বরণ করার। এখন
বার্ধক্যের উপনীতি হয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন–
" তু য়া বিনু গতি নাহি আরা "
আর্থাৎ মাধব ছাড়া তার আর কোনো গতি নেই। কেননা এই পৃথিবীর জ্বালাময় জীবন থেকে রক্ষা করার দায়ীত্ব তাঁরই।
পাঠনির্ভ র ব্যাকরণ।
১/ (ক) প্রার্থনা কবিতা থেকে কয়েকটি মৈথিলি শব্দের উল্লেখ করো ৷
উঃ- প্রার্থনা কবিতা থেকে কয়েকটি মেথিলি শব্দ হলো - অব, তোহো, তু য়া, তোহারা, তোহারি ইত্যাদি।
খ) প্রার্থনা কবিতায় উল্লেখিত সর্বনাম পদগুলি লেখো ৷
উঃ-প্রার্থনা কবিতার উল্লেখিত সর্বনাম পদগুলি হলো - তু হে, তু হু, তু য়া, হাম, তোহারি, তোমারা |
(গ) নিচের শব্দগুলোর গদ্যরূপ লেখো ।
সমর্পিলু - সমর্পণ করলাম।
অব - এখন ।
জনম - জীবন।
নিন্দে - নিদ্রায় ।
মাতলু - মাতলাম ৷
ভজব - ভজন করলাম ৷
(ঘ) পদ পরিবর্ত ন করো —
সমাজ — সামাজিক।
শিশু — শৈশব।
জন্ম — জন্মত্য ৷
মন — মানসীক ৷
বিধি — বিধান।
ঙ) বিশিষ্টার্থক শব্দ প্রয়োগে অর্থপূর্ণ বাক্য রচনা করো ।
গোবরে পদ্মফু ল— (নীচু জাতে প্রতিভাবান) পাল ওদের মেচো ছেলের নাতী I.S. পাশ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রট হয়েছে।
এইজন গোবরে পদ্মফু ল ফু টেছে।
খয়ের খাঁ— (তু সা মোদকারী) তোমার মত যদি নেতা মন্ত্রিদের পেছনে পেছনে খয়ের খাঁ হয়ে চলতাম তাহলে আমি ও পাঁচ
তালা বাড়ি তৈরি করতাম ৷
চোখের বালি— (অপ্রিয় ব্যক্তি) আমি কি তোমার চোখের বালি ? আমাকে দেখলেই ওরকম রেগে যাও কেন ?
টনক নড়া— (চেতনা হওয়া) যাক্ এতদিন পরে তোমার টনক নড়েছে দুবার ফেল করে এবার একটু পড়াশুনায় মন
দিয়েছ।
ঠোঁট কাটা— (স্পষ্ট ব্যক্তা) তোমার মতো ঠোঁট কাটা আর কেউ নেই, কোন কথা তোমার মুখে আটকায় না।
টীকা :
মাধব — মাধব শব্দের ব্যৎগত্তিগত অর্থ হচ্ছে- মা অর্থাৎ পৃথিবী আর ধর অর্থাৎ স্বামী । এখানে মাধব হলো মহাপ্রভু
শ্রীকৃ ষ্ণ । আর মিথিলার কবি বিদ্যাপতিও মাধব বলে শ্রীকৃ ষ্ণকে বুঝিয়েছিলেন।
নিধুবন — বৃন্দাবনে অবস্থিত একটি বন নিধুবন নামে পরিচিত এটি মূলত রাধাকৃ ষ্ণের প্রমোদ বিহারের উদ্যান। জানা
যায় যে নাকি রাধাকৃ ষ্ণ ও তার সহস্র সখির সঙ্গে আমোদ-প্রমোদে ও খেলাধুলা করে সময় অতিবাহিত করেছেন। আর কবি
বিদ্যাপতিও এই নিধুবনে গিয়ে রমনীদের সঙ্গে রসরঙ্গে মত্ত ছিলেন।
প্রঃ বিদ্যাপতি কোন বংশের পুত্র ছিলেন ?
উঃ ব্রাহ্মণ বংশের।
প্রঃ-বিদ্যাপতির পদবি কী?
উঃ- ঠাকুর।
প্রঃ- ব্রজবুলি ভাষা সম্বন্ধে যা জান লিখো।
উঃ- ব্রজবুলি হলো একটি কৃ ত্রিম ভাষা। এই ভাষাটি প্রধানত বাংলা, অসমিয়া, হিন্দি, ওড়িয়া, মৈথিলি এই পাঁচটি ভাষার
সংমিশ্রণ। মিথিলার কবি বিদ্যাপতি মূলত এই ভাষায় পদ রচনা করেছিলেন। কবি রাবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই ব্রজবুলি
ভাষায় 'ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী' নামক একটি কাব্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
৫/ নিহিতার্থ লেখো :-
(ক) তাতল সৈকত বারি বিন্দু সম
সুত-মিত-রমণী সমাজে।
উঃ- আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির লেখা 'প্রার্থনা ' পদ থেকে নেওয়া হয়েছে।
'তাতল সৈকত বারি বিন্দু সম' বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল পড়লেই বালু যেমন
তাকে শুষে নেয়, তার আর যেমন নিজস্ব সত্তা থাকে না। তেমনই সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্র কবিকে এমনভাবে শুষে নিয়েছে
সে তার আর কোন নিজস্ব সত্তা নেই।
(খ) তোহে বিসরি মন তাহে সমর্পিলু।
উঃ- আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির লেখা 'প্রার্থনা পদ থেকে নেওয়া হয়েছে ৷
মিথিলার কবি বিদ্যাপতির জীবনের অনেক সময় পরিবার পরিজনকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, তাদের মাঝখান
থেকে মাধবকে স্বরণ করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, মাধবকে ভজনা করার সময়ও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তিনি
মাধবকে সম্পূর্ণভাবে ভু লেগিয়ে সংসায় জগতের মধ্যে নিজেকে সমর্পন করে দিয়েছিলেন ৷
(গ) অতয়ে তোহারি বিশোয়াসা ।
ডঃ আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির লেখা 'প্রার্থনা' পদ থেকে নেওয়া হয়েছে ৷
কবি বিদ্যাপতির জীবনের অনেক মূল্যবান সময় সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্রকে নিয়ে সংসারে অতিবাহিত করেছেন।
যার ফলে মাধবকে ভজনা করার সময় তিনি পাননি। এখন তাঁর পরিনামে আকুল নিরাশা ছাড়া আর কোন কিছুই
পাওয়ার নেই। এইজন্য কবি মাধবের উপর বিশ্বাস রেখে বলেছিলেন যে মাধব যেন তার উদ্ধার করেন। কেননা তিনি
হলেন জগৎত্রাতা এবং দীনের প্রতি দয়াশীল ৷
(ঘ) নিধুবনে রমণী-রসরঙ্গে মাতলু ।
উঃ আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির ‘প্রার্থনা' পদ থেকে নেওয়া হয়েছে ৷
মিথিলার কবি বিদ্যাপতি জীবনের অনেক সময় পরিবার পরিজনকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে তাদের মাজখানে
থেকে মাধবকে স্মরণ করতে পারেননি। কবি বিদ্যাপতি যৌবনকালে নিধুবনে গিয়ে রমণীদেরকে নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মত্ত
ছিলেন। যার ফলে সেই সময় তিনি মাধবকে ভজনা করার সময় পান নি ৷ কিন্তু আমরা জানি পূর্ণ শক্তির কাল হলো
যৌবন কাল। আর সেই সময়টিতে কর্মের ফল ফলতে হয়। কিন্তু বিদ্যাপতি সেই সময়ে নিধুবনে গিয়ে রমণীদের সঙ্গে
রসরঙ্গ করে সময় অতিবাহিত করেছিলেন ৷
____________

More Related Content

More from M MAB ®

Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®M MAB ®
 
Bengali Essay by M MAB ®
Bengali Essay by M MAB ®Bengali Essay by M MAB ®
Bengali Essay by M MAB ®M MAB ®
 
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®M MAB ®
 
Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®M MAB ®
 
নব্যনীতি
নব্যনীতি নব্যনীতি
নব্যনীতি M MAB ®
 
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®M MAB ®
 
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdfClass 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdfM MAB ®
 
M MAB ® logo
M MAB ® logoM MAB ® logo
M MAB ® logoM MAB ®
 
Ideal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdfIdeal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdfM MAB ®
 

More from M MAB ® (9)

Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
 
Bengali Essay by M MAB ®
Bengali Essay by M MAB ®Bengali Essay by M MAB ®
Bengali Essay by M MAB ®
 
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
 
Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®
 
নব্যনীতি
নব্যনীতি নব্যনীতি
নব্যনীতি
 
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
 
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdfClass 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
 
M MAB ® logo
M MAB ® logoM MAB ® logo
M MAB ® logo
 
Ideal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdfIdeal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdf
 

প্রার্থনা পদ by M MAB ®

  • 1. প্রার্থনা —বিদ্যাপতি শব্দার্থ : তাতল - উত্তপ্ত। মিত - মিত্র ৷ বিসরি — ভু লে গিয়ে / বিস্মৃত হয়ে ৷ সমর্পিলু – সমর্পণ করলাম । তু হুঁ – তু মি। জগৎ তারণ - জগৎত্রাতা । বিশোয়াসা - বিশ্বাস । জরা - বার্ধক্য। ভজব— ভজন করব । মাধব - শ্রীকৃ ষ্ণ। নিন্দে- নিদ্রায়। গোঙায়লু - অতিবাহিত করলাম। মঝু - আমার ৷ সৈকত - বালুতট ৷ কবি পরিচিতি : মধ্যযুগের (১৪০১ – ১৮০০ খ্রি.) বাংলা সাহিত্যের বৈষ্ণব পদাবলি ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বিদ্যাপতি। তিনি ছিলেন বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান। পিতা গণপতি ঠাকুর। বিদ্যাপতি মিথিলার কবি হলেও বাংলা কাব্য সাহিত্যকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছেন। বিদ্যাপতির পদগুলো ছন্দের ঝংকারে, উপমার গৌরবে সজীব, চঞ্চল ও ঐশ্বর্যময়। সংস্কৃত সাহিত্যে তাঁর পাণ্ডিত্য অতু লনীয়। চতু র্দশ শতকে জন্ম গ্রহণ করে পঞ্চদশ শতকের তৃ তীয় ভাগ পর্যন্ত বিদ্যাপতি জীবিত ছিলেন। তিনি মিথিলার রাজা শিবসিংহের সভাকবি ছিলেন। ১/ (ক) শূন্যস্থান পূর্ণ করো । (ক) তাতল _________ বারিবিন্দু সম। উঃ- সৈকত। (খ) মাধব _________ পরিনাম নিরাশা ৷ উঃ- হাম । (গ) _________ জগতারণ, দীন-দয়াময়। উঃ- তু হুঁ । (ঘ) আধ জনম হাম নিন্দে _________ ৷ উঃ- গোঙায়লুঁ ৷ (ঙ) _________রমণী রসরঙ্গে মাতু ল ৷ উঃ- নিধুবনে । (খ) পাঠ অনুসরণে শুদ্ধ করে লেখো। (ক) সূত-মিত-পুরুষ সমাজে। উঃ- সুত-মিত-রমণী-সমাজে। (খ) তু হুঁ জগন্নাথ, দীনদয়াময় । উঃ- তু হুঁ জগ-তারণ, দীনদয়াময়। (গ) জরা শিশু এতদিন গেলা। উঃ জরা শিশু কতদিন গেলা। (ঘ) তোহে পুজিব কোন বেলা। উঃ- তোহে ভজব কোন বেলা।
  • 2. 2/ অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও। (ক) 'প্রার্থনা' কবিতাটির কবি কে ? উঃ- 'প্রার্থনা' কবিতাটির কবি হলেন বিদ্যাপতি। (খ) কবি কাকে ভু লেছিলেন বলে অনুতাপ করেছেন? উঃ- কবি ঈশ্বরকে বা মাধবকে ভু লেছিলেন বলে অনুতাপ করেছেন। (গ) 'বিশোয়াসা' কোন শব্দের অন্তর্গত ? উঃ- ব্রজবুলি শব্দের অন্তর্গত। (ঘ) 'নিন্দে' শব্দের অর্থ কী? উঃ-'নিন্দে' শব্দের অর্থ হলো নিদ্রায়। ৬) বিদ্যাপতি প্রকৃ তপক্ষে কোথাকার কবি? উঃ- বিদ্যাপতি প্রকৃ তপক্ষে মিথিলার কবি । ৫) ব্রজবুলি ভাষায় রচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যের নাম লোখো ৷ উঃ- ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী। (ছ) বিদ্যাপতির পিতার নাম কী ? উঃ- গণপতি ঠাকুর। (জ) বিদ্যাপতি মিথিলার কোন রাজার শাসন কালে সভাকবি ছিলেন ? উঃ- রাজা শিবসিংহের। ৩/ ৩,৪ টি বাক্যে উত্তর দাও। (ক) 'মাধব, হাম পরিণাম নিরাশা'— কবির এমন মনোভাবের কারণ কী ? উঃ-মিথিলার কবি বিদ্যাপতির স্ত্রী-পুত্র-মিত্র যুক্ত সংসারের মধ্যে আবদ্ধ থেকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়কে নষ্ট করেছেন। জীবনকে তিনি ব্যর্থতায় পরিণত করে ফেলেছেন। সেজন্য কবি বিদ্যাপতি মাধব বা শ্রীকৃ ষ্ণকে আক্ষেপ করে বলেছেন যে তাঁর ব্যর্থ ও মূল্যহীন জীবনের পরিনাম হতাশা ছাড়া আর কোন কিছুই পাওয়ার নেই। (খ) কবি কেন আশাবাদী যে ঈশ্বর তাকে কৃ পা করবেন ? উঃ- মিথিলার কবি বিদ্যাপতি 'মধব' অর্থাৎ 'শ্রীকৃ ষ্ণের' কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করে উদ্ধার পেতে চেয়েছেন। কেননা তিনি 'জগৎতারণ' অর্থাৎ জগতের সৃষ্টিকর্ত া এবং দিনের প্রতি দয়াশীল। অতএব তিনি সকলের উদ্দারকর্ত া ও তাই কবি আশাবাদী যে মাধব বা ঈশ্বর তাঁকে কৃ পা করবেন। (গ) জীবনের অর্ধেক কাল পর্যন্ত কবি কীভাবে সময় অতিবাহিত করেছেন? উঃ- উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল যেমন কোনো চিহ্ন রেখে যায় না। ঠিক তেমনিই সংসারের স্ত্রী-পুথ-মিএকে নিয়ে কবি এতই ব্যস্ত ছিলেন যে কিভাবে যে তার সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে তা তিনি বুঝাতে পারেন নি। তিনি বলেছিলেন সে জীবনের অর্ধেক সময় তিনি ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। আবার যৌবন কলে তিনি নিধুবণে গিয়ে রমণীদের সঙ্গে রসরঙ্গ করে সময় অতিবাহিত করেছেন। (ঘ) 'তাতল সৈকত বারিবিন্দু সম' বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? উঃ- 'তাতল সৈকত বারিবিন্দু সম' বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে, উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল পড়লেই বালু যেমন তাকে শুষে নেয়, তার আর যেমন নিজস্ব সত্তা থাকে না, তেমনই সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্ৰ কবিকে এমনইভাবে শুষে নিয়েছে যে তার আর কোন নিজস্ব সত্তা নেই। 8/ রচনাধর্মী উত্তর লেখো ৷ (ক) 'প্রার্থনা' কবিতাটি অবলম্বনে কবির বক্তব্য বিষয় পরিস্ফু ট করো। অথবা, (গ) প্রার্থনা কবিতায় কবি বিদ্যাপতি যেভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন তা বর্ণনা করো। উঃ- মিথিলার কবি বিদ্যাপতি 'প্রার্থনা' পদটিতে মিনতি করে বলেছিলেন যে চিরস্থায়ী শ্বাশত 'মাধব ' অর্থাৎ শ্রীকৃ ষ্ণকে ভু লে গিয়ে তিনি এতদিন সংসারজগতে ডু বেছিলেন। উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল যেমন কোন চিহ্ন রেখে যায় না ঠিক তেমনি সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্রকে নিয়ে তিনি এতই ব্যস্ত ছিলেন যে তাদের মধ্যে থেকে মাধবের প্রতি ভক্তি নিবেদন তাঁর
  • 3. পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ক্ষণস্থায়ী সংসারের মধ্যে আবদ্ধ থেকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় নষ্ট করে জীবনকে ব্যর্থতায় পরিণত করেছে। সেজন্য কবির মনে হয়েছে– " মাধব, হাম পরিণাম নিরাশা " অর্থাৎ তার পরিণামের আকুল হতাশা ও নিরাশা ছাড়া আর কোন কিছু পাওয়ার নেই। মাধব জগতের উদ্ধারকর্ত া ও গরীরের রক্ষাকর্থা। তাই কবির বিশ্বাস মার্বনের কৃ পা ও করুনা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন না। আবার কবি বলেছেন– " আধ জনম হাম নিন্দে গোঙায়লুঁ " অর্থাৎ কবির জীবনের অর্ধেক সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন এবং জরা-শিশুকাল ও অনেক দিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। আবার যৌবনকালে তিনি নিধুবণে গিয়ে রসরঙ্গ, আনন্দ - স্ফূ র্ত্তি করে কাটিয়েছেন। তাদের মাজখানে থেকে মাধব বা শ্রীকৃ ষ্ণকে ভজনা করার সময় তিনি পাননি ৷ তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে বলেছেন যে– " . . . শেষ শমন- ভয় তু য়া বিণু গতি নাহি আরা " অর্থাৎ মাধব ছাড়া তার আর কোনো গতি নেই কারণ তিনি আদি-অনাদির নাথ এবং এই পৃথিবীর জ্বালাময় জীবন থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁরই ৷ (খ) মাধব হাম পরিণাম নিরাশা'- কার, কোন রচনা থেকে পংক্তিটি উদ্ধৃত হয়েছে? মাধব বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কবির এই মন্তব্যের যথার্থাকা আলোচনা করো। উঃ- মিথিলার কবি বিদ্যাপতির 'প্রার্থনা' পদটি থেকে আলোচ্য পংক্তিটি উদ্ধৃত করা হয়েছে। এখানে মাধব বলতে শ্রীকৃ ষ্ণকে বোঝানো হয়েছে। কবি বিদ্যাপতির সারা জীবন ধরে মাধবকে সম্পূর্ণরূপে ভু লে গিয়ে পার্থিব ও ভোগ-সুখে মত্ত থেকেছেন। যার ফলে জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছেন। এতদিন তার কাছে মুখ্য ছিল পার্থিব ও ভোগ — সুখ পরকালের চিন্তা তিনি করেননি। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি উপলব্ধি করেছেন যে- " মাধব, হাম পরিনাম নিরাশা " অর্থাৎ তাঁর পরিণাম নিশ্চিতভাবে নিরাশাজনক শৈশব ও যৌবন এই দুই কালে কবি জীবনের অনেক অংশ অপচয় করেছেন । কিন্তু আমরা জানি মানব জীবনের পূর্ণকর্মশক্তির কাল হলো যৌবনকাল। আর সেই সময়টাতেই কর্মের ফসল ফলাতে হয়। কিন্তু কবি সেই সময় রমণীর সঙ্গে রসরঙ্গ, আনন্দ- স্ফূ তি করে সময় হয়নি মাধবকে শ্বরণ করার। এখন বার্ধক্যের উপনীতি হয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন– " তু য়া বিনু গতি নাহি আরা " আর্থাৎ মাধব ছাড়া তার আর কোনো গতি নেই। কেননা এই পৃথিবীর জ্বালাময় জীবন থেকে রক্ষা করার দায়ীত্ব তাঁরই। পাঠনির্ভ র ব্যাকরণ। ১/ (ক) প্রার্থনা কবিতা থেকে কয়েকটি মৈথিলি শব্দের উল্লেখ করো ৷ উঃ- প্রার্থনা কবিতা থেকে কয়েকটি মেথিলি শব্দ হলো - অব, তোহো, তু য়া, তোহারা, তোহারি ইত্যাদি। খ) প্রার্থনা কবিতায় উল্লেখিত সর্বনাম পদগুলি লেখো ৷ উঃ-প্রার্থনা কবিতার উল্লেখিত সর্বনাম পদগুলি হলো - তু হে, তু হু, তু য়া, হাম, তোহারি, তোমারা | (গ) নিচের শব্দগুলোর গদ্যরূপ লেখো । সমর্পিলু - সমর্পণ করলাম। অব - এখন । জনম - জীবন। নিন্দে - নিদ্রায় । মাতলু - মাতলাম ৷ ভজব - ভজন করলাম ৷ (ঘ) পদ পরিবর্ত ন করো — সমাজ — সামাজিক। শিশু — শৈশব। জন্ম — জন্মত্য ৷ মন — মানসীক ৷ বিধি — বিধান।
  • 4. ঙ) বিশিষ্টার্থক শব্দ প্রয়োগে অর্থপূর্ণ বাক্য রচনা করো । গোবরে পদ্মফু ল— (নীচু জাতে প্রতিভাবান) পাল ওদের মেচো ছেলের নাতী I.S. পাশ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রট হয়েছে। এইজন গোবরে পদ্মফু ল ফু টেছে। খয়ের খাঁ— (তু সা মোদকারী) তোমার মত যদি নেতা মন্ত্রিদের পেছনে পেছনে খয়ের খাঁ হয়ে চলতাম তাহলে আমি ও পাঁচ তালা বাড়ি তৈরি করতাম ৷ চোখের বালি— (অপ্রিয় ব্যক্তি) আমি কি তোমার চোখের বালি ? আমাকে দেখলেই ওরকম রেগে যাও কেন ? টনক নড়া— (চেতনা হওয়া) যাক্ এতদিন পরে তোমার টনক নড়েছে দুবার ফেল করে এবার একটু পড়াশুনায় মন দিয়েছ। ঠোঁট কাটা— (স্পষ্ট ব্যক্তা) তোমার মতো ঠোঁট কাটা আর কেউ নেই, কোন কথা তোমার মুখে আটকায় না। টীকা : মাধব — মাধব শব্দের ব্যৎগত্তিগত অর্থ হচ্ছে- মা অর্থাৎ পৃথিবী আর ধর অর্থাৎ স্বামী । এখানে মাধব হলো মহাপ্রভু শ্রীকৃ ষ্ণ । আর মিথিলার কবি বিদ্যাপতিও মাধব বলে শ্রীকৃ ষ্ণকে বুঝিয়েছিলেন। নিধুবন — বৃন্দাবনে অবস্থিত একটি বন নিধুবন নামে পরিচিত এটি মূলত রাধাকৃ ষ্ণের প্রমোদ বিহারের উদ্যান। জানা যায় যে নাকি রাধাকৃ ষ্ণ ও তার সহস্র সখির সঙ্গে আমোদ-প্রমোদে ও খেলাধুলা করে সময় অতিবাহিত করেছেন। আর কবি বিদ্যাপতিও এই নিধুবনে গিয়ে রমনীদের সঙ্গে রসরঙ্গে মত্ত ছিলেন। প্রঃ বিদ্যাপতি কোন বংশের পুত্র ছিলেন ? উঃ ব্রাহ্মণ বংশের। প্রঃ-বিদ্যাপতির পদবি কী? উঃ- ঠাকুর। প্রঃ- ব্রজবুলি ভাষা সম্বন্ধে যা জান লিখো। উঃ- ব্রজবুলি হলো একটি কৃ ত্রিম ভাষা। এই ভাষাটি প্রধানত বাংলা, অসমিয়া, হিন্দি, ওড়িয়া, মৈথিলি এই পাঁচটি ভাষার সংমিশ্রণ। মিথিলার কবি বিদ্যাপতি মূলত এই ভাষায় পদ রচনা করেছিলেন। কবি রাবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই ব্রজবুলি ভাষায় 'ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী' নামক একটি কাব্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ৫/ নিহিতার্থ লেখো :- (ক) তাতল সৈকত বারি বিন্দু সম সুত-মিত-রমণী সমাজে। উঃ- আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির লেখা 'প্রার্থনা ' পদ থেকে নেওয়া হয়েছে। 'তাতল সৈকত বারি বিন্দু সম' বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে উত্তপ্ত বালুকারাশিতে একবিন্দু জল পড়লেই বালু যেমন তাকে শুষে নেয়, তার আর যেমন নিজস্ব সত্তা থাকে না। তেমনই সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্র কবিকে এমনভাবে শুষে নিয়েছে সে তার আর কোন নিজস্ব সত্তা নেই। (খ) তোহে বিসরি মন তাহে সমর্পিলু। উঃ- আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির লেখা 'প্রার্থনা পদ থেকে নেওয়া হয়েছে ৷ মিথিলার কবি বিদ্যাপতির জীবনের অনেক সময় পরিবার পরিজনকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, তাদের মাঝখান থেকে মাধবকে স্বরণ করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, মাধবকে ভজনা করার সময়ও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তিনি মাধবকে সম্পূর্ণভাবে ভু লেগিয়ে সংসায় জগতের মধ্যে নিজেকে সমর্পন করে দিয়েছিলেন ৷ (গ) অতয়ে তোহারি বিশোয়াসা । ডঃ আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির লেখা 'প্রার্থনা' পদ থেকে নেওয়া হয়েছে ৷ কবি বিদ্যাপতির জীবনের অনেক মূল্যবান সময় সংসারের স্ত্রী-পুত্র-মিত্রকে নিয়ে সংসারে অতিবাহিত করেছেন। যার ফলে মাধবকে ভজনা করার সময় তিনি পাননি। এখন তাঁর পরিনামে আকুল নিরাশা ছাড়া আর কোন কিছুই পাওয়ার নেই। এইজন্য কবি মাধবের উপর বিশ্বাস রেখে বলেছিলেন যে মাধব যেন তার উদ্ধার করেন। কেননা তিনি হলেন জগৎত্রাতা এবং দীনের প্রতি দয়াশীল ৷ (ঘ) নিধুবনে রমণী-রসরঙ্গে মাতলু ।
  • 5. উঃ আলোচ্য অংশটি মিথিলার কবি বিদ্যাপতির ‘প্রার্থনা' পদ থেকে নেওয়া হয়েছে ৷ মিথিলার কবি বিদ্যাপতি জীবনের অনেক সময় পরিবার পরিজনকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে তাদের মাজখানে থেকে মাধবকে স্মরণ করতে পারেননি। কবি বিদ্যাপতি যৌবনকালে নিধুবনে গিয়ে রমণীদেরকে নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মত্ত ছিলেন। যার ফলে সেই সময় তিনি মাধবকে ভজনা করার সময় পান নি ৷ কিন্তু আমরা জানি পূর্ণ শক্তির কাল হলো যৌবন কাল। আর সেই সময়টিতে কর্মের ফল ফলতে হয়। কিন্তু বিদ্যাপতি সেই সময়ে নিধুবনে গিয়ে রমণীদের সঙ্গে রসরঙ্গ করে সময় অতিবাহিত করেছিলেন ৷ ____________