SlideShare a Scribd company logo
1 of 13
Download to read offline
সংবাদপত্র
সূচনা : নানা প্রয়োজনে এক দেশের মানুষ অন্য দেশের সংবাদ জানিতে চায়, নিজের দেশেরও নানা সংবাদ সকলকেই
জানিতে হয় । প্রাচীন কালে লোক মারফৎ সংবাদ আদান-প্রদান করা হইত । আধুনিক যুগে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হইবার
পরই সংবাদপত্র বর্ত মান রূপে পৃথিবীর সকল দেশে প্রকাশিত হইতে থাকে
পূর্ব ইতিহাস : চীন দেশেই সর্বপ্রথম সংবাদপত্র বাহির হয়। বাংলাদেশে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র প্রকাশ করেন
শ্রীরামপুরের মিশনারিগণ । তদানীন্তন ভারত সরকারও 'ইন্ডিয়া গেজেট' নামে একটি সংবাদপত্র বাহির করিতেন ।
বাংলাদেশে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারকগণ মাসিক 'দিগ্‌
দর্শন' ও সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’ সংবাদপত্র দুইটি কিছুকাল নিয়মিত
প্রকাশ করিয়াছিলেন । ( বর্ত মান ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক ভাষায় ও ইংরেজি ভাষায় বহু সংবাদপত্র প্রকাশিত
হইয়া থাকে ।
সংবাদপত্রের প্রকারভেদ ও প্রকাশ : মাসিক, দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক প্রভৃ তি নানা প্রকার সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাধারণত: দেশ-বিদেশের সংবাদ প্রচারিত হয় । মাসিক ও পাক্ষিক পত্রিকায় সংবাদের
সহিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ও প্রকাশ করা হয় সংবাদপত্রগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান
হইতে সংবাদ কিনিয়া নিজেদের কাগজে প্রকাশ করে।
উপকারিতা : সংবাদপত্রে রাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধ, খেলাধূলা প্রভৃ তি বিষয়ে নানা প্রকার সংবাদ প্রকাশিত হয়।
কাজেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং নিজের দেশেও কোথায় কী ঘটিতেছে জানিতে হইলে সংবাদপত্র ছাড়া উপায় নেই।
সংবাদপার পাঠে সমকালীন দুনিয়ার চিন্তাধারার সর্বোৎকৃ ষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় | জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূ মিকা
তাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী | সংবাদপত্র অতি সহজে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছায় বলিয়া সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি
ইহাকেই প্রচারের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে ।
নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠ করিলে পৃথিবীর সকল বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানা যায় । প্রতিদিন সকালে সংবাদপত্র
পাঠ করিয়া আমরা নিজের দেশের তো বটেই, দূরবর্তী দেশগুলিরও আগের দিনের ঘটনা জানিতে পারি । একদিন
সংবাদপত্র পাঠ করিতে না পারিলে মনে হয় বর্ত মান দুনিয়া হইতে পিছাইয়া পড়িয়াছি।
অপকারিতা : অনেক বিষয়ের মতো সংবাদপত্রেরও ভালোমন্দ দুই দিক আছে । ইহা জনসাধারণকে যেমন সুপথে
চালিত করিতে পারে তেমনি আবার মিথ্যা সংবাদ নিয়া বিভ্রান্তও করিতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলি নিজস্ব পত্রিকার
সাহায্যে নানা প্রকার অসত্য প্রচার চালায়, দেশের উন্নতি অপেক্ষা দলীয় স্বার্থকেই তাহারা সংবাদপত্রে প্রাধান্য দেয় ।
তাই সংবাদপত্রের মূল আদর্শ হওয়া উচিত নিরপেক্ষতা। কোনো প্রকার স্বার্থ ও দলীয় মতবাদে প্রভাবিত না
হইয়া সত্য সংবাদ জনসমক্ষে তু লিয়া ধরাই আদর্শ সংবাদপত্রের কাজ ।
By: M MAB ® Learning
দৈনন্দিন/প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব
আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান অপরিহার্য । বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা এক- পাও ফেলিতে পারি না । সকালে ঘুম হইতে
উঠিয়াই টু থ-ব্রাস ও পেস্ট আমাদের চাই । কলের জলে হাত মুখ ধুইয়া আমরা যে প্রাতরাশ করি তাহার বেশ কিছুই
কারখানায় তৈরি । সেই সকালেই খবরের কাগজ না ইহলে মুখে খাবার রুচে না। মা গ্যাসের উনুনে খাবার তৈরি
করেন । তার পর আমরা পড়িতে বসি, বই খাতা, কলম, পেন্সিল —সবই বিজ্ঞানের দান । নয়টায় স্নানে যাই,
সেখানেও চারিদিকে বিজ্ঞানের দান সাবান, শাম্পু, চিরুণি, আয়না— সকলই বিজ্ঞানের অবদান ।
স্কুলে যাওয়ার জন্য বাস, অটো বা গাড়ী স্কুলে গিয়াও মুক্তি নাই, স্বয়ংক্রিয় ঘণ্টি, দেওয়াল ঘড়ি ও তাহার বিচিত্র টু ংটাং
শব্দ, ফ্যান, ইলেকট্রিক আলো আরও কত কি । এখন আবার স্কুলে স্কুলে আধুনিক বিশ্বকর্মার অর্চ না বিরাটভাবে শুরু
হইয়াছে—এই বিশ্বকর্মাটি কম্পিউটার কম্পিউটারের অসাধ্য কোন কর্ম নাই। কম্পিউটার মানুষের হাতে অনন্ত শক্তি
আনিয়া দিয়াছে বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানুষ মহাকাশে পাড়ি জমাইয়াছে । নূতন নূতন দুৰ্জ্জেয় তত্ত্ব আবিষ্কার
করিয়াছে । অনেক অনেক গ্রহ নক্ষত্র এখন মানুষের জ্ঞানের আওতায় আসিয়াছে ।
চিকিৎসা, যোগাযোগ—কেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটিয়াছে । বাড়ীতে বসিয়া পৃথিবীর
সকল দেশের মানুষের সঙ্গে মুহূর্তে যোগাযোগ করা যায় । ইন্টারনেটের মাধ্যমে, টেলিফোন যোগাযোগ এখন প্রায়
অতীতের বস্তু হইতে চলিয়াছে । তোমার হাতের লেখা চিঠি তু মি ফ্যাক্সের মাধ্যমে যে কোন যায়গায় এক লহমায়
পাঠাইতে সক্ষম । সমস্ত পৃথিবীটি যেন একটা ছোট্ট গ্রাম—সব মানুষ যেন তোমার পড়শী ।
কিন্তু এই চোখ ধাঁধানো অগ্রগতিও মানুষের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় নাই—বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের
পানীয় জল, ক্ষুধার অন্ন, মাথা গুঁজাবার ঠাঁই, অশিক্ষা, রোগ ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় নাই । ধনী
দেশগুলি সম্পদের সিংহভাগ নিজেদের অধিকারেই রাখিয়া দিয়াছে । তাই বিজ্ঞান স্বার্থপর মানুষের পরিষেবায়ই
নিয়োজিত হইতেছে । তাই বিশ্বজোড়ে দাবি উঠিয়াছে—বিজ্ঞানকে কাহারও কুক্ষিগত করা চলিবে না। বিজ্ঞানের সুফল
সব মানুষের মধ্যে সমভাবে ছড়াইয়া দিতে হইবে ।
By: M MAB ® Learning
আসামের প্রাকৃ তিক সম্পদ
সূচনা : বন আর পাহাড়ে ঘেরা আসামের প্রাকৃ তিক সৌন্দর্য অতু লনীয় । যনভূ মি পাখির গান, ঝরনার কলতান আর
পত্রমমরে মুখর। কিন্তু আসামের প্রকৃ তি শুধু সুন্দরী নয়, সম্পদশালিনীও বটে। আসামের অর্থনৈতিক জীবনে তাই
প্রকৃ তি দান কৃ তজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণীয়।
প্রাকৃ তিক সম্পদের শ্রেণীবিভাগ : আসামের প্রাকৃ তিক সম্পদকে প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়- -বনজ সম্পদ ও
খনিজ সম্পদ। এগুলিকে আবার কৃ ষিজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, প্রাণিজ সম্পদ, জলজ সম্পদ প্রভৃ তি শ্রেণীতে বিন্যস্ত
করা যায় ।
বনজ সম্পদ : আসামের গভীর অরণ্যাঞ্চলে নানা জাতের মূল্যবান কাঠ পাওয়া যায় । লখিমপুর, ডিব্রুগড়,
শিবসাগর, দরং, গোয়ালপাড়া প্রভৃ তি জেলার বনভূ মিতে তিতাচাপা, চাম, গামারি, শাল, শিশু, সেগুন, রবার, ঘৃনা
ইত্যাদি নানা প্রকার মূল্যবান বৃক্ষ জন্মে । এগুলি ছাড়া বাঁশ, বেত, খড় এ রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়।
কামরূপ ও কার্বি আংলং জেলার অরণ্যাঞ্চলে প্রচুর লাক্ষা বৃক্ষ জন্মে । গোয়ালপাড়া জেলার উত্তরে ভু টান পাহাড় ও
দক্ষিণে গারো পাহাড়ের পাদদেশে দুটি বিশাল গহন ও দুর্গম অরণ্য অবস্থিত।
আসামের অরণ্যাঞ্চল নানা প্রকার বন্য পশু-পাখির প্রিয় বাসভূ মি। বন্য পশুর মধ্যে হাতি, গণ্ডার ও বাঘ
বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আসামের প্রত্যেক জেলায়ই মূল্যবান বন্য পশু সংরক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য আছে। শিবসাগর
জেলায় কাজিরাঙ্গার একশৃঙ্গী গণ্ডারের অভয়ারণ্য পৃথিবীবিখ্যাত। আসামের পার্বত্য অঞ্চলে বহু খরস্রোতা নদ-নদী ও
ঝরনা-প্রপাত আছে। এগুলি থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা অসীম । আমামের কোনো কোনো অঞ্চলের প্রধান
জীবিকা হাতি-ধরা । এই রাজ্যের বনভূ মি থেকে নানারকম পশু-পাখি বিদেশে রপ্তানি করা হয় ।
খনিজ সম্পদ : গোটা আসাম রাজ্য খনিজ সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ । এ রাজ্যের খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা, পেট্রোল ও
কেরোসিন উল্লেখযোগ্য । এগুলি ছাড়া চূনাপাথর, অভ্র, প্রাকৃ তিক গ্যাসও পাওয়া যায় । লিডো, মাঘেরিটা, বর গোলাই,
মাকুম, নাজিরা প্রভৃ তি স্থানে কয়লার খনি আছে। ডিব্ৰুগড়, ও শিবসাগর জেলা খনিজ তেলের জন্য প্রসিদ্ধ । ডিগবয়,
নাহারকটিয়া, মরাণ, দুলিয়াজান, রুদ্রসাগর, লাকোরা প্রভৃ তি স্থানে পেট্রোল ও কেরোসিন তেলের কৃ প আছে ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গারো পাহাড় অঞ্চলের ভূ গর্ভে প্রচুর পরিমাণে কয়লা সঞ্চিত রয়েছে ।
উপসংহার : আসামের প্রাকৃ তিক সম্পদ অফু রন্ত হলেও তা এখনো সম্পূর্ণ কাজে লাগানো যায়নি। বিশেষ করে খনিজ
সম্পদ এখনো অধিকাংশ অঞ্চলেই উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে । এর প্রধান কারণ আসামের কোনো কোনো অঞ্চলের
দুর্গমতা এবং সুলভ পরিবহন ব্যবস্থার অভাব । তবু উল্লেখযোগ্য এই যে, গত কয়েক বৎসরে আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে
খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কাজ বিশেষভাবে অগ্রসর হয়েছে । তাই আশা করা যায়, পাতালপুরীর বন্দিনী রাজকন্যাকে
আর বেশিদিন ঘুমিয়ে কাল কাটাতে হবে না ।
By: M MAB ® Learning
আসামের কুটীরশিল্প
সূচনা : কারিগরদের দ্বারা হাতে তৈরি শিল্পকে কুটীরশিল্প বলে। দেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবারে
পুরুষানুক্রমে কুটারশিল্প নির্মিত হইয়া থাকে । হস্তনির্মিত দ্রব্যাদির যে বিশেষ সৌন্দর্য ফু টিয়া উঠে তাহাই ইহাকে
যন্ত্রনির্মিত দ্রব্যের তু লনায় অধিক মর্যাদা দিয়া থাকে। আসাম রাজ্যের কুটারশিল্প সমগ্র ভারতে একটি বিশিষ্ট স্থানের
অধিকারী।
কুটীরশিল্প কেন্দ্র : আসাম রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই কোনো না কোনো প্রকার ফু টার শিল্পের কেন্দ্র রহিয়াছে ।
পুরুষানুক্রমিক দক্ষতার ঐতিহ্যে আসামের কুটারশিল্পের কেন্দ্রগুলি দীর্ঘকাল ধরিয়া সুন্দর সুন্দর শিল্পদ্রব্য নির্মাণ
করিয়া গুলিয়াছে । আসামের লখিমপুর, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, দরং, নগাওঁ, কামরূপ, গোয়ালপাড়া প্রভৃ তি জেলার
গ্রামাঞ্চলে নানাপ্রকার কুটীশিল্প নির্মিত হয় । আসামের কুটার শিল্পের মধ্যে বস্ত্রবয়ন শিল্পই সর্বপ্রধান। এই রাজ্যের
সর্বত্রই অল্প-বিস্তর হস্তচালিত তাঁত শিল্প কেন্দ্র রহিয়াছে । এন্ডি ও মুগার সূতা কাটা, বাঁশ ও বেতের নানা প্রকার
কারুশিল্প, পিতল ও মাটির বাসনপত্র, দা-ছুরি- কাঁচি প্রভৃ তি লৌহজাত দ্রব্যাদি নির্মাণ এই রাজ্যের কুটারশিল্পের
অন্তর্গত ।
কুটীরশিল্পের বিবরণ : আসামের উপত্যকা অঞ্চলের ও পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে মূল্যবান এণ্ডি ও মুগার
রেশমবস্ত্র তৈয়ারি হয়। এই রাজ্যের গ্রামীণ নারীসমাজ সুতাকাটা ও বস্ত্রবহনে বিশেষ দক্ষ। বিশেষত পার্বত্য রমণীরা
বর্ণবহুল বঙ্গবয়নে বিস্ময়কর নৈপুণ্যের অধিকারিণী । লখিমপুর, ডিব্ৰুগড়, মঙ্গলদৈ, শোয়ালকুছি, পলাশবাড়ি,
কোকরাঝাড়, মিকির পাহাড় প্রভৃ তি স্থান এণ্ডি ও মুগার কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ। ইহা ছাড়া বরপেটার হস্তিদন্ত শিল্প,
হাজোর পিতলের বাসনশিল্প, সর্থেবাড়ির কাঁসার বাসনশিল্প বিশেষ প্রসিদ্ধ । যোরহাট জিলার দরঙ্গ অঞ্চলে উৎকৃ ষ্ট
ধরনের দা-কাটারি কুড়াল ইত্যাদি নির্মিত হয় । কাছাড় জেলার কয়েকটি স্থানে ভালো পাটা প্রস্তুত হয় ।
কূটীরশিল্পের স্থান : আসামের জনসমাজে কুটিরশিল্প জীবিকার অন্যতম উপায় । অল্প মূলধন বিনিয়োগ করিয়া ইহাতে
মোটামুটি লাভ হয় বলিয়া বহুপরিবার সম্পূর্ণরূপে ইহার উপর নির্ভ রশীল। দক্ষ শিল্পীদের মর্যাদাও সমাজে উল্লেখযোগ্য
। আসামের কুটারশিল্প সংরক্ষণে সরকারি সহযোগিতা প্রশংসনীয়। সারা ভারতে এবং বহির্বিশ্বে এই রাজ্যের সুদৃশ্য ও
রুচিসম্মত কুটীরশিল্পজাত দ্রব্যাদি ক্রমশ: জনপ্রিয় হইয়া উঠিতেছে । আজকাল অনেকের বাড়িতেই আসামের বিছানার
চাদর, দরজা-জানালার পর্দা, বাঁশের ফু লদানী ও অন্যান্য সৌখীন দ্রব্য দেখিতে পাওয়া যায় ।
উপসংহার : দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্ত নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচিবোধেরও পরিবর্ত ন হয় । যন্ত্রশিল্পের
সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুটারশিল্প ক্রমশঃ পিছনে পড়িতেছে। যন্ত্র অপেক্ষাকৃ ত অল্প সময়ে, অল্প ব্যয়ে অধিক পরিমাণ দ্রব্য
নির্মাণ করিতে পারে । ইহাতে প্রয়োজন মিটিলেও সৌন্দর্যবোধ সব সময় তৃ প্ত হয় না। তাই রুচিশীল সৌন্দর্যপিপাসু
মানুষের নিকট আসামের কুটীরশিল্পের আবেদন ভবিষ্যতেও অক্ষুণ্ণ থাকিবে আশা করা যায়।
By: M MAB ® Learning
আসামের জাতীয় উৎসব/বিহু উৎসব
সূচনা : প্রত্যেক দেশেই এমন এক একটি উৎসব থাকে যাহার মধ্য দিয়া দেশের অধিবাসীদের সামগ্রিক পরিচয় ফু টিয়া
উঠে । এই ধরনের উৎসবকেই জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই দিক হইতে দেখিলে বিহু উৎসবকেই
আসামের জাতীয় উৎসব বলিতে হয় । কারণ এই উৎসবটির মধ্য দিয়াই সমস্ত অসমীয়া জাতির ধর্ম-সংস্কৃতি ও
সামাজিক জীবনের সুন্দর জগটির প্রকাশ ঘটিয়া থাকে ।
উৎসবের কাল : 'বিহু' শব্দটি 'বিষুধ' শব্দের রূপান্তর । প্রতি বৎসর বিষুব সংক্রান্তি অর্থাৎ চৈত্র মাসের সংক্রান্তি দিনে
এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বলিয়া ইহা এই নামে পরিচিত। চৈত্র মাসের বিহু ছাড়া আরো দুইটি বিহু উৎসব প্রচলিত আছে
। পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় ভোগালী বিহু' এবং আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি দিবসে অনুষ্ঠিত হয় 'কাতি বিহু'। চৈত্র
মাসে অনুষ্ঠিত বিহু উৎসবটি 'রঙ্গালী” বিহু নামে পরিচিত এবং ব্যাপকতা ও বর্ণাতো ইহাই আসামের জনসমাজে প্রধান
উৎসবের স্থান অধিকার করিয়াছে।
উৎসবের বিবরণ : ‘রঙ্গালী বিহু চৈত্র সংক্রান্তিতে শুরু হয় এবং বৈশাখের সপ্তম দিবসে সম্পন্ন হয়। 'বঙ্গালী' কথাটির
মধ্যে যে আনন্দময়তার ইঙ্গিত আছে রঙ্গালী বিহুতে তাহারই অবাধ প্রকাশ দেখিতে পাওয়া যায় । বাসন্তী প্রকৃ তির
মনোরম পটভূ মিকায় এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । পত্র পুষ্প বিভূ ষিত প্রকৃ তির আনন্দময়তা আবালবৃদ্ধ নরনারীর হৃদয়ে
সঞ্চারিত হইয়া সকলকে আনন্দে মাতোয়ারা করিয়া তোলে । পুণ্যস্নান, দান-ধ্যান, পূজার্চ না প্রভৃ তি কাজকর্মের মধ্য
দিয়া উৎসবের প্রথম দিনটি অতিবাহিত হয় । গবাদি পশুর প্রতিও এই দিন বিশেষ যত্ন লওয়া হয় । দ্বিতীয় দিন হইতে
নৃত্য সঙ্গীতের মধ্য দিয়া সপ্তাহব্যাপী প্রমোদ উৎসবের সূত্রপাত হয় । নূতন বসন পরিয়া আবালবৃদ্ধবনিতা উৎসব
আঙ্গিনায় সমবেত হয় । বাঁশির সুরে মাদলের আওয়াজে আকাশ-বাতাস মুখর হইয়া উঠে । প্রিয়জনকে 'গামছা উপহার
দেওয়া এই উৎসবের প্রধান অঙ্গ ।
‘কাতি বিহু” বা কঙ্গালী বিহুতে ধনদাত্রী লক্ষ্মীদেবীর নিকট শস্য সম্পদ প্রার্থনা করা হয় । পৌষ সংক্রান্তিতে
অনুষ্ঠিত বিহু উৎসবে আনন্দ ভোজন প্রাধান্য পায়, তাই বোধহয় ইহার নাম ভোগালী বিহু । শস্য ভাণ্ডারের শস্য
সঞ্চয়ের পরে প্রিয়-পরিজনকে ভোজনে পরিতৃ প্ত করিবার আনন্দ লাভ ইহার প্রধান উদ্দেশ্য ।
উৎসবের তাৎপর্য : বিহু উৎসব মূলত: গ্রামীণ মানুষের কৃ তি উৎসব। ইহার মধ্য দিয়া ঋতু র আহান, মূর্তি কার
উর্বরতা প্রার্থনা, শস্য সংগ্রহের অভিলাষ ইত্যাদি সামাজিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হইয়াছে । এগুলিকে কেন্দ্র করিয়া
পারস্পরিক শুভ কামনা ও সামাজিক মিলনের অবকাশ ঘটে । তদুপরি নৃত্যে সঙ্গীতাদিতে শিল্প সংস্কৃতির বিশিষ্ট
পরিচয় পাওয়া যায়। বস্তুত, বিহু উৎসবে আসামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিধৃত
রহিয়াছে।
উপসংহার : কালের পরিবর্ত নে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রীতিনীতির পরিবর্ত ন ঘটে । দেশের উৎসবকলাও এই
পরিবর্ত নের প্রভাব অস্বীকার করিতে পারে না । তাই আসামের জাতীয় উৎসব বিহুর বহিরঙ্গে কোথাও আধুনিকতার
ছাপ পড়িয়াছে কোথাও বা প্রমোদ-অনুষ্ঠানের প্রকৃ তিগত পরিবর্ত ন সাধিত হইয়াছে। কিন্তু প্রকৃ তির ক্রোড়ে লালিত
গ্রামীণ জীবনে বিহু উৎসবের অমলিন আনন্দধারা আগের মতই প্রবহমান।
By: M MAB ® Learning
স্বাবলম্বন
সূচনা : নিজের কাজ নিজে করিবার নামই স্বাবলম্বন। একটি মানুষকে তাহার সারাজীবনে নানা কাজ করিতে হয়,
বহুপ্রকার সমস্যায় পড়িতে হয় । যাহারা নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস রাখিয়া সকল কাজ ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা
করে তাহারাই স্বাবলম্বী ।
স্বাবলম্বনের প্রয়োজন : বিধাতা সকল জীবকেই যথোপযুক্ত দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধি দিয়া এ পৃথিবীতে প্রেরণ করিয়াছেন ।
সকল জীবের মধ্যে মানুষ আবার সকল দিক দিয়াই শ্রেষ্ঠ। মানুষ শুধু খাইয়া পরিয়া থাকিতে পারিলেই সন্তুষ্ট হয় না,
সে সুখী ও সুন্দর জীবন যাপন করিতে চায় । পরিশ্রম না করিলে এই সুখী জীবন লাভ করা যায় না। কাজেই
মানবজীবনই হইল অবিরাম কর্মের জীবন ।
কিন্তু সকল মানুষই নিজ নিজ কাজটু কু করিতে রাজী থাকে না। এ পৃথিবীতে অলস ও কর্মবিমুখ মানুষের সংখ্যা
কম নয় । এই শ্রেণীর লোকেরাও সুখী জীবন যাপন করিতে ইচ্ছুক, কিন্তু সেজন্য খাটিতে রাজী নয় । তাহারা নিজেদের
সকল কাজেই অপরের উপর নির্ভ র করিয়া থাকে। প্রতিটি বিষয়ে অপরের উপর নির্ভ র করিয়া থাকা যে অসম্মান ও
লজ্জার ব্যাপার এই বোধটু কু তাহাদের নাই । কাজেই যাহাদের আত্মমর্যাদাবোধ নাই তাহারা কখনও স্বাবলম্বী হইতে
পারে না।
স্বাবলম্বনে শুধু যে আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশিত হয় তাহা নহে, ইহা মানুষের কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশে
সহায়তা করে । প্রথমে অসুবিধা হইলেও কালক্রমে সকল কাজ করিবার মত শক্তি ও কৌশল ইহাতেই অর্জ ন করা যায়
। পারিব না বলিয়া বসিয়া থাকিলে চিরকালই পরমুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে হয় ।
জীবনে যাহাদের উচ্চাভিলাষ আছে অর্থাৎ উন্নতি করিতে চায় স্বাবলম্বন তাহাদের প্রধান ভিত্তি । নিজে উদ্যোগী
হইয়া উন্নতির জন্য চেষ্টা না করিলে অপর কেহ আসিয়া তাহা করিয়া দিতে পারে না। কথাই আছে, নিদ্রিত সিংহের
মুখে কখনও শিকার আপনি আসিয়া প্রবেশ করে না। কাজেই জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি করিতে হইলে নিজেকেই
উৎসাহ ও উদ্যমসহকারে লাগিয়া পড়িতে হইবে । এমন বহু মনীষী-মহাপুরুষ কর্মবীরের কথা আমরা জানি যাঁহারা
শুধু স্বাবলম্বন বলে জীবনে পাণ্ডিত্য, অর্থ ও খ্যাতি অর্জ ন করিয়াছেন । আবার এমন লোকের কথাও জানি যে নিজের
হাতে একগ্লাস জল পর্যন্ত গড়াইয়া খাইতে চায় না, এমন ছাড়াও আছে যে সকল কাজই গৃহশিক্ষককে দিয়া করাইয়া
লইতে চায় ।
স্বাবলম্বন শিক্ষা : জীবনে উন্নতি করিতে হইলে এবং আত্মমর্যাদাসহকারে মাথা উঁচু করিয়া বাঁচিতে হইলে স্বাবলম্বী
হইতেই হইবে। স্বাবলম্বী হঠাৎ হওয়া যায় না, এজন্য বাল্যকাল হইতেই নিজের কাজ যথাসম্ভব নিজেকে করিবার চেষ্টা
করিতে হয় । শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নহে জাতীয় জীবনের উন্নতির জন্য ও স্বাবলম্বন প্রয়োজন। স্বাবলম্বী হইলেই সকল
কাজে সাফল্য আসিবে এমন নাও হইতে পারে । ইংরেজিতে একটি কথা আছে যাহার অর্থ হইল—যে ব্যক্তি নিজেকে
সাহায্য করে ভগবান স্বয়ং তাহাকে সাহায্য করেন ।
By: M MAB ® Learning
নিয়মানুবর্তি তা
সূচনা : যথাসময়ে নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন অথবা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করিবার নামই নিয়মানুবর্তি তা ।
নিয়মানুবর্তি তার অর্থ হইল কতকগুলি নিয়ম অনুসরণ করিয়া চলা । প্রতিটি মানুষকেই প্রত্যহ নির্দিষ্ট সময়ে
কতকগুলি কাজ করিতে হয় । বয়স্ক মানুষ ঠিক সময়ে অফিসে যায়, ছাত্র যায় বিদ্যালয়ে । এইভাবে প্রত্যেকেই
নিয়মিত কোনো না কোনো কাজ করে । শুধু চাকরি বা লেখাপড়া নয়, দৈনিক আরো কতকগুলি কাজ প্রত্যেককেই
করিতে হয় এবং তাহাও নির্দিষ্ট সমে
নিয়মানুবর্তি তার প্রয়োজন : বিশ্ব জুড়িয়া নিয়মের রাজর চলিতেছে । সূর্যোদয় সূর্যাস্ত, বৎসর মাস, গ্রহ-তারা সকলেই
নিয়মের অধীন । একজন সামাজিক মানুষকে আমৃত্যু নানা কাজ করিতে হয়, অবশ্য সে যদি সুখী ও উন্নত জীবন
কামনা করে । যখনকার যে কাজ তাহা সম্পাদন না করিলে ক্ষতি তো হয়ই বরং সে ক্ষতি আর পূরণেরও সুযোগ
পাওয়া যায় না। কারণ যে সময় চলিয়া যায় তাহা আর ফিরিয়া আসে না। নদীর স্রোতের মতোই সময়ের প্রবাহ
কেবলই সম্মুখে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছে । সুতরাং জীবনের যে সময়টু কু অতিবাহিত হইয়া গেল রাজার রাজত্বের
বিনিময়েও তাহা ফিরিয়া পাওয়া যাইবে না। কাজেই খেয়াল খুশিমত এক সময়ের কাজ ডান্য সময়ে করিলে ক্ষতি যাহা
হইবার তাহা হইবেই।
মনের স্বভাবই এই যে তাহাকে যতই প্রশ্রয় দেওয়া যায় ততই সে পাইয়া বসে । তাই একবার নিয়ম ভাঙিলে
কেবলই নিয়ম ভাঙিতে ইচ্ছা হইবে । কাজেই চেষ্টা করিয়া মনকে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত করিতে হয় । একবার নিয়মে
অভান্ত হইয়া গেলে পরে আর এতটু কুও কষ্ট হয় না ।
ব্যক্তিগত ও দলগত জীবনে নিয়মানুবর্তি তার মূল্য খুব বেশি। নিয়ম মানিয়া চলিলে বিদ্যার্জ ন ও অর্থোপার্জ ন
দুইই সহজতর হয় । নিয়মানুবর্তি তা দলগত শক্তি বৃদ্ধি করে। দলের নিয়ম ও দলপতির নির্দেশ মানিয়া চলিলে অতি
বৃহৎ কাজও সহজে সম্পন্ন করা যায়। সৈনাবাহিনী নিয়মানুবর্তি তার সুন্দর উদাহরণ। খোঁজ লইলে দেখা যাইবে
যাঁহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছেন তাহারা নিয়মানুসারে নিজ নিজ কাজ যথাসময়ে করিয়াছেন। ইউরোপীয় জাতিসমূহ
আমাদের অপেক্ষা অনেক বেশি নিয়মানুবর্তী বলিয়াই জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাহারা আজ এত উন্নতি করিতে
পারিয়াছে । সুতরাং ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা পালন করিতে
হইবে ।
উপসংহার: শৈশব হইতেই নিয়মানুবর্তি তা শিক্ষা করা উচিত। একবার নিয়মে অভ্যস্ত হইয়া গেলে সারাজীবন ধরিয়া
তাহা মানিয়া চলা যায়। তাই বালকদের উদ্দেশ্য করিয়া বলা হইয়াছে— পড়িবার সময় পড়িবে, খেলিবার সময় খেলা
করিবে । মূল কথা, ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করা চাই। সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে যাহারা জীবন অতিবাহিত করে
তাহাদের উন্নতি কেহ রোধ: করিতে পারে না ।
By: M MAB ® Learning
মহাপুরুষের জীবনী/স্বামী বিবেকানন্দ
সূচনা : আধুনিক যুগে মানবজাতি যাঁহাদের কর্মে ও চিন্তায় বিশেষরূপে সমৃদ্ধ হইয়াছে ভারতের স্বামী বিবেকানন্দ
তাঁহাদের মধ্যে প্রধান । হিন্দু- সন্ন্যাসীরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াও সকল ধর্মের সকল শ্রেণীর মানুষের কল্যাণের জন্য
তিনি নিজের জ্ঞান ও কর্মশক্তি নিঃশেষে নিয়োগ করিয়াছিলেন ।
জন্ম ও বংশ পরিচয় : স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি কলিকাতার শিমুলিয়া অঞ্চলে সুবিখ্যাত দত্ত
বংশে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁহার পিতা বিশ্বনাথ দত্ত, মাতা ভু বনেশ্বরী দেবী ।
বালাজীবন ও শিক্ষা : বিবেকানন্দের ডাক নাম 'বিলে', ভালো নাম নরেন্দ্রনাথ । বালক নরেন্দ্রনাথ ছিলেন খুবই দূরত্ব,
কিন্তু তাঁহার বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। খেলাধূলা ও শরীর চর্চ ায়ও তিনি আগ্রহী ছিলেন। মাত্র চৌদ্দ বৎসর
বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করিয়া নরেন্দ্রনাথ জেনারেল এসেমব্লিস কলেজে ভর্তি হন। তাঁহার জ্ঞানতৃ ষ্ণা ছিল
অসীম । ঈশ্বর আছেন কি না ইহা জানিবার জন্য প্রথমে তিনি ইউরোপীয় ধর্ম-দর্শন পাঠ করেন। কিন্তু অন্তর কিছুতেই
তৃ প্ত হইল না। ক্রমশ তিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হইয়া উঠিলেন । খ্রিষ্টান ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম তাঁহার কৌতূ হল মিটাইতে পারিল
না। এইরূপ মনের অবস্থা লইয়াই তিনি ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই সময়েই তাঁহার পিতার মৃত্যু
হওয়ায় সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তাঁহার উপরে পড়ে । একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে ঈশ্বর ও জীবনের মূল সত্য জানিবার
আকাঙ্ক্ষা, উভয়ের মধ্যে পড়িয়া নরেন্দ্রনাথ অধীর হইয়া উঠিলেন ।
অতঃপর দক্ষিণেশ্বরের মাতৃ -সাধক শ্রীরামকৃ ষ্ণ পরমহংসদেবের সহিত পরিচিত হইয়া তিনি ঈশ্বর ও জীবনের
পরম সত্য উপলব্ধি করিলেন । ইহার কিছুকাল পরে তিনি রামকৃ ষ্ণদেবের নিকট হইতে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
এবং তখন হইতেই নরেন্দ্রনাথের নাম হয় স্বামী বিবেকানন্দ । সন্ন্যাস গ্রহণের পর বিবেকানন্দ কয়েক বৎসর হিমালয়ে
তপস্যা করিয়া ভারত-পরিক্রমায় বাহির হন।
কর্মজীবন : স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় শিকাগো শহরে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যোগদান করিয়া
হিন্দু ধর্মের চিরন্তন আদর্শ প্রচার করেন । সেদিন তিনি সেই সভায় সমবেত নরনারীকে ভ্রাতা ও ভগ্নী সম্বোধন করিয়া
যে বক্ত
ৃ তা দেন তাহাতেই হিন্দুধর্মের সর্বমানবীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। বহু পাশ্চাত্য নরনারী তাঁহার শিষ্যত্ব গ্রহণ
করেন । তাঁহার পাশ্চাত্য শিষ্যদের মধ্যে মিস্‌
মার্গারেট নোবেল বা ভগিনী নিবেদিতার নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ইহার
পর স্বামীজি পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া আসেন।
বিশ্ববিজয়ী স্বামী বিবেকানন্দ ভারতে আসিয়াই কর্মযজ্ঞের সূচনা করেন । আর্ত মানবতার সেবার জন্য তিনি
বেলুড়ে 'রামকৃ ষ্ণ মিশন' স্থাপন করেন, আলমোড়ায় প্রতিষ্ঠা করিলেন ব্রহ্মচর্যাশ্রম। বিবেকানন্দের নেতৃ ত্বে তাঁহার
সন্ন্যাসী ভ্রাতৃ বৰ্গ মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করিলেন। তিনি মানবসেবাকেই ঈশ্বর পূজা বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন।
তাই শুধু ভারতবাসী নয়, শুধু বিশ্ববাসী নয়, সকল জীবের মধ্যেই তিনি ঈশ্বরকে অনুভব করিতেন :
“বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর । "
মৃত্যু : অবিরত কর্মে নিযুক্ত থাকিবার ফলে স্বামীজির স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে ভাঙিয়া পড়ে। তবু অসীম মানসিক শক্তির
জোরে তিনি কাজ করিয়া যাইতে থাকেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি বিশেষ অসুস্থ হইয়া বেলুড়ে চলিয়া আসেন । এখানেই
১৮০২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই ধ্যানসমাহিত অবস্থায় স্বামী বিবেকানন্দ দেহত্যাগ করেন ।
উপসংহার : মহাপুরুষদের আমরা অমর বলিয়া থাকি এই কারণে যে, তাহাদের দেহ বিনষ্ট হয়, কিন্তু আদর্শ চিরকাল
জীবিত থাকে । স্বামী বিবেকানন্দও এমনি একজন অমর মহামানব।
By: M MAB ® Learning
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ
সূচনা : বিজ্ঞান শব্দের অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান অর্থাৎ যা মানুষকে বিশেষভাবে জানার পথে সঞ্চালিত করে। এককালে
মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান ছিল ক্ষীণ। মানুষ পায়ে হেঁটে চলত। গাছের ছাল পরত। কাচা মাছ, মাংস বা বনের ফলমূল
খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করত। তারপর আগুনের ব্যবহার শিখল। ক্রমে ধাতু র ব্যবহারও শিখতে শুরু করল। ক্রমে জন্তু
পোষা ও চাষাবাদকে আশ্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে লাগল। এভাবে ধাপে ধাপে মানুষ এগিয়ে আজ মহাকাশ
পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হল। বর্ত মান জনজীবনে বিজ্ঞানই একমাত্র অবলম্বন।
বিজ্ঞান আশীর্বাদ : সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হতে শুরু করে রাতের শয্যাগ্রহণের আগ অবধি বিজ্ঞানের সাহায্য না
নিয়ে আমাদের উপায় নেই। বিজ্ঞান আমাদের আশীর্বাদ স্বরূপ। চা পান, খাওয়া দাওয়া, চাল-চলন, পোষাক-পরিচ্ছদ,
পড়া-শোনা ও চিকিৎসা সব কিছুই আজ বিজ্ঞান সম্মত। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ওখন মানুষ আধুনিক সভ্যতায় এসে
পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। ওখন মানুষ উন্নতমানের যানবাহন নিয়ে চলছে। রুচিসম্মত পোষাক পরতে পারছে। সাধারণ
ও কারিগরী শিক্ষা নিচ্ছে, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে কঠিন রোগ-শোক থেকে মুক্তি লাভের পথ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ শক্তি
দিয়ে বড় বড় কল-কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। কৃ ষিকার্যে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে উৎপাদনও বহুগুণ ৰেড়ে
চলেছে। কম্পিউটারের সাহায্যে গাণিতিক সমস্যা সমাধান হচ্ছে। আরও কত কী।
বিজ্ঞান অভিশাপ : বিচার করলে বিজ্ঞানকে আশীর্বাদই বলা যায়। বিজ্ঞানের কিছু অভিশাপ থাকলেও এ অভিশপ্ততার
জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়। বিজ্ঞান একটি নিষ্ক্রিয় শক্তিমাত্র। কিন্তু বিজ্ঞান মানুষের ক্রিয়াকাণ্ডে অভিশাপ হয়ে দাড়াতে
পারে। যেমন- ক্ষেপণাস্ত্র, আনবিক বোমা, ডিনামাইট, আগ্নেয়াস্ত্র প্রভৃ তিকে যদি কোনও অশুভ কাজে ব্যবহার করা হয়,
তবে তা হবে অভিশাপ ও আতঙ্কের বিষয়। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের জন্য আজ প্রকৃ তির পরিবেশের ওপর দারুণ
চাপ হচ্ছে। নেমে আসছে সংকটের অশনি সংকেত। পরিবেশ প্রদূষিত হয়ে জনজীবনে ডেকে আনছে বিপন্নতা।
উপসংহার : প্রকৃ তপক্ষে বিজ্ঞান সম্পূর্ণ নির্দোষ। কিন্তু নিষ্ঠু র মানবাত্মা জনকে দায়ী করেছে। বিজ্ঞানের সুফল এবং
কুফলের রূপকার মানুষই। মানুষ যেদিকে একে চালনার ইচ্ছা করবে সেদিকেই চলবে।
By: M MAB ® Learning
অসমের বন্যা ও তার প্রতিকার
সূচনা : বন্যা হল ভয়াবহ প্রাকৃ তিক দুর্যোগ। অসমের জনজীবনে বন্যা প্রতি বছরই অভিশাপ নিয়ে আসে। বন্যার
সর্বনাশা পরিণাম অবর্ণনীয়। বন্যার সময় মানুষের দুর্দশার অন্ত থাকে না। অথৈ জলে দিগ-দিগন্ত প্লাবিত হয়ে উঠে।
যতদূর দৃষ্টি চলে শুধু জল আর জল, যেন ভাসমান জীবনের এক সকরুণ দৃশ্য।
বন্যার কারণ : আসম পাহাড় পর্বতে পরিবেষ্টিত এক বৃষ্টিবহুল রাজ্য। অসমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির ফলে
নদ-নদীগুলোতে জল মাত্রাতিরিক্ত। হয়ে উভয় তীরে উপচে পড়ে ও প্লাবন দেখা দেয়। উত্তরাঞ্চলের পর্বতশ্রেণির
তু ষারগণিত ঝরণা ধারা নেমে এসে ব্রহ্মপুত্র ও তার শাখা নদীগুলোকে জলমগ্ন করে তোলে। নদী তার জলধারণ
ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে ক্রমে তীরবর্তী অঞ্চলে জলির বিস্তৃতি ঘটে আর তখনই দেখা দেয় বন্যা নামক ভয়াবহ
অভিশাপ।
বন্যার কুফল : বন্যার কুফল বর্ণনাতীত। বন্যার ফলে মানুষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। ঘর বাড়ি নষ্ট হয়। রাস্তাঘাট
আবার মেরামত করারও প্রয়োজন হয়। প্রচুর শসা, চারাগাছ, গরু, মহিষ, ছাগ প্রভৃ তি পশু বিনষ্ট হয়, সঞ্চিত আহার্য
সম্ভার ভেসে যায় এবং অনেক মানুষেরও প্রাণহানি ঘটে। দেশে দুর্ভি ক্ষ দেখা দেয়, এমনকি মহামারী রোগেরও প্রাদুর্ভ াব
হয়। মানুষ নিরাশ্রয়, নিরন্ন ও স্বজনহীন হয়ে পড়ে।
বন্যার সুফল : বন্যার কুফলের তু লনায় সুফল নাই বললেই চলে। তবে বন্যা হলে নদীর তীরবর্তী সমতল অঞ্চলে প্রচুর
পরিমাণে পলিমাটি সিঞ্চিত হয়ে পরবর্তীতে ফসল ভাল হয়। কখনও নিচু স্থান উঁচু হয়ে উঠে।
বন্যার প্রতিকার : বন্যা প্রাকৃ তিক দুর্যোগ। এর প্রতিরোধ করা সহজ কথা নয়। তবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ
প্রচেষ্টা চালালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পার্বত্য অঞ্চলের জলধারা
আটকে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী-নালায় খনন কার্য চালিয়ে আরও গভীর করতে হবে যাতে জলধারণের ক্ষমতা
বৃদ্ধি পায়। নদীর উভয় তীরে শক্ত ও উঁচু বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধের মাটি ধরে রাখবার জন্য প্রকাণ্ড বৃক্ষচারা
রোপণ করে নিতে হবে। নদীতে বিশাল জলাধার নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাতে হবে। সর্বোপরি সরকার
বাহাদুরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বা পরিকল্পনা গ্রহণে প্রতিরোধ করা কিছুটা সম্ভব হতে পারে।
উপসংহার : মানুষ প্রকৃ তির সৃষ্টি। প্রকৃ তির হাতে মানুষ অসহায় মাত্র। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান কখনও প্রকৃ তির ইচ্ছাকে
উপেক্ষা করতে পারে না। বরং মানুষ প্রাকৃ তিক শক্তির উপর ভিত্তি করে আবিষ্কারের কাজ চালাতে পারে। অতএব,
আশা করা যায় যে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে হয়ত একদিন অসম বন্যার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হবে।
By: M MAB ® Learning
পরিবেশ দষণূ/প্রদূষণ ও তার প্রতিকার
সূচনা : আজকের পৃথিবীতে পরিবেশ প্রদূষণ একটা প্রধান সমস্যা। এককালে পৃথিবীর বাতাস ছিল নির্মল, মাটি ছিল
খাঁটি এবং জলও ছিল বিশুদ্ধ। ছিল না যান্ত্রিক কলকারখানা, ছিল না এতটা ঘন জনবসতি। কিন্তু আধুনিক যন্ত্র
সভ্যতার উন্নতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ প্রদূষিত হয়ে জনজীবনে নেমে আসছে মহা সংকট ও চরম বিপর্যয়।
পরিবেশ প্রদূষণের কারণ : বর্ত মান বিজ্ঞানের যুগে দেশে গড়ে উঠছে কলকারখানা ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান।
কলকারখানা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া বাতাসে মিশে বাতাসের নির্মলতা বিনষ্ট করছে। যানবাহনের ধোঁয়া এবং
কারখানার বর্জ ্য পদার্থের দুর্গন্ধ যেন বায়ু প্রদূষণে আরও বিশেষভাবে খোরাক যোগিয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে ওয়েল
রিফাইনিং, সিমেন্ট উৎপাদন, প্লাষ্টিক ও সারশিল্প, ক্যামিকেল প্রসেস এবং পারমাণবিক তেলাওয়তা বায়ুমণ্ডলকে দূষিত
করে চলছে। জঞ্জাল প্রভৃ তি বর্জ ্য পদার্থ বৃষ্টির জলে বাহিত হয়ে নদী- নালা বা পুষ্করিণীর জলের সাথে মিশ্রিত হচ্ছে ও
পবিত্র জল দূষিত করছে। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করার ফলে মানবদেহে বিষক্রিয়ার
সঞ্চারণ ঘটে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃ তিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানুষ
প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে গাছ-পালা বা বনাঞ্চল ধ্বংস করে চলছে। ফলে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশঃ হ্রাস হয়ে
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও চরম উষ্ণায়নে বিশ্বজুড়ে হাহাকার দেখা দিচ্ছে। পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক
মানুষ বংক্রাইটিস, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ প্রভৃ তিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রতিকার : বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিবেশ দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেমন - কলকারখানা উন্মুক্ত জায়গায়
স্থাপন করে নিঃসৃত ধোঁয়া, জঞ্জাল প্রভৃ তি নিয়ন্ত্রণে শিল্প আইন মেনে নিতে হবে। নিষ্কাশিত ধোঁয়া, বর্জ ্য পদার্থ যাতে
সহজে বাতাসে বা জলে মিশে যেতে না পারে, তজ্জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফিলটার, বুরুশ ইত্যাদির ব্যবহার
নিয়মিত করতে হবে। পঁচা-গলা বস্তু মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কলকারখানা
বা যানবাহনে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে গাছপালা রোপণ করে
পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখার মনোবৃত্তি প্রতিটি মানুষের পোষণ করতে হবে।পরিবেশ দূষণমুক্ত করা মানুষের পক্ষে
দুঃসাধ্য নয়।
উপসংহার : পৃথিবীটা সৌন্দর্যের লীলাভূ মি। প্রভু তাঁর অকৃ পণ হাতে সুশোভিত করে জগৎ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু
আমরা বিশ্বের নির্মল পরিবেশকে বিষাদময় করে বসবাসের অনুপযোগী করছি। যন্ত্রসভ্যতার বিষপাম্পে প্রবাহিত হয়ে
জনজীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। আমাদের সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে, পৃথিবী হবে
নিষ্কলুষ; মানব জীবনে ফিরে আসবে পরম তৃ প্তি ও শান্তি।
By: M MAB ® Learning
তোমার প্রিয় লেখক/কবি
ভূ মিকা : কবি অনেক আছেন। প্রত্যেক কবি সাহিত্যিকরা অবশ্যই শ্রদ্ধার পাত্র। ওরাই জাতির পথিকৃ ৎস্বরূপ বরণীয়
এবং চিরস্মরণীয়। তন্মধ্যে কালজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে বেশ পছন্দের। আমি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে প্রিয়
কবি হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য।
জন্ম : ১৮৬৮ সালের পঁচিশে বৈশাখ জোড়াসাঁকুর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। পিতার নাম মহর্ষি
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তাঁর চরিত্রের প্রভাব প্রতিফলিত হয় রবীন্দ্রনাথের
জীবনেও। কলকাতার ধনী ঐতিহ্যবাহী পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হলেও শৈশব থেকে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সহজ, সরল
ও অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত।
শিক্ষা : প্রথমে রবীন্দ্রনাথ ওরিয়েন্টেল সেমিনারীতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন পড়াশুনা করার পর নর্মাল স্কুলে শিক্ষালাভ
করেন। তারপর বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেবিয়ার্স স্কুলেও কিছুদিন পড়াশুনা করেন। তবে স্কুলে জীবনের সীমাবদ্ধ
পরিবেশ রবীন্দ্রনাথকে ধরে রাখতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। তারপর বাড়িতে গৃহশিক্ষকদের কাছে
নানা বিষয়ে পাঠ গ্রহণ করে মাত্র নয় বছর বয়সে কারা চর্চ া শুরু করে দেন।
কাব্য চর্চ া : তখনও বালকত্ব কাটেনি। রবীন্দ্রনাথের রচনা ক্ষমতা দেখে তাঁর শিক্ষকরাও বিস্মিত হন। তেরো বছয়
বয়সে রবীন্দ্রনাথের রচিত কবিতা 'তত্ববোধিনী' পত্রিকায় প্রকাশ পায়। তারপর 'ভারতী' 'সাধনা' প্রভৃ তি কবিতাও
পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ হতে থাকে। এভাবে ছন্দ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রভৃ তিতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার ক্রমশঃ
বিকাশ ঘটে।
রচনা সম্ভার : রবীন্দ্রনাথের রচিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, টিক প্রভৃ তি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং চমকপ্রদ। তাঁর রচিত
কাব্যসমূহের মধ্যে। 'মানসী' 'সোনার তরী' 'গীতাঞ্জলি' 'গীতালী' ও পুরবী প্রধান। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে "বৌ
ঠাকুরাণীর হাট' 'গোরা' 'যোগাযোগ" "ঘরে বাইরে' 'চতু রঙ্গ' প্রভৃ তি। ছোট গল্পের সংকলন হচ্ছে 'গল্পগুচ্ছে' 'রক্তকরবী'
'বিসর্জ ন' প্রভৃ তি। এছাড়া তাঁর রচিত গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, সাধু-সঙ্গীত ও প্রবন্ধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
পুরস্কার : রবীন্দ্রনাথ দেশে-বিদেশে পুরষ্কৃত হন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের তিনি ছিলেন প্রিয় পাত্র।
'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনিই সর্বপ্রথম এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার নোবেল প্রাইজ লাভ
করেন। বিভিন্ন সংগঠনও রবীন্দ্রনাথকে বহুবার সংবর্ধিত করে।
সমাজ সেবা : রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি ছিলেন না, বরং একজন প্রসিদ্ধ সমাজ সেবক ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি
শান্তিনিকেতন নামক আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীনিকেতন নামক কর্মশালা তাঁর বিশেষ অবদান। রবীন্দ্রনাথ
ছিলেন একজন সংবেদনশীল। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার মত মানসিকতাও তাঁর ছিল। সামজিক
কুসংস্কার ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠ।
কবির জীবনাবসান : ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ দিনটি ভারতবাসীর কাছে এক
শোকাবহ দিন। এই দিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের জীবনাবসান ঘটে। কবির বিয়োগে বাংলা সাহিত্যে এক অপূরণীয়
ক্ষতি হল।
By: M MAB ® Learning
আসামের প্রাকৃ তিক সৌন্দর্য
সূচনা : আসাম প্রাকৃ তিক সৌন্দর্যে এক অতু লনীর রাজ্য। প্রকৃ তি যেন তার অকৃ পণ হাতে আসামকে ঢেলে
সাজিয়েছেন। আসামের সৌন্দর্যে অভিভূ ত হয়েছেন কত কবি সাহিত্যিক। বিস্মিত হয়েছেন আসামের শ্যামল সবুজ
সমারোহে অনেক পর্যটকরাও।
প্রাকৃ তিক সৌন্দর্য : পাহাড়, ঝর্ণা, নদ-নদী, অরণ্যাঞ্চলে পরিবেশিত আসাম যেন প্রকৃ তির লীলাভূ মি। সর্বত্র পূর্ণ
যৌবনের উন্মত্ততা। পাহাড়ে রোদের লুকোচুরি, বনে নানা বর্ণের ফু ল, নদীর কুলকুল ধ্বনি, পাতার মর্মর শব্দ, ঝরণার
চঞ্চল নৃত্য, দোয়েল, কোকিলের কলগান ও শ্যামল শস্যের হেলাদোলা এবং পল্লীর আলো বাতাস যেন সরস প্রাণের
জীবন্ত উৎস। শুধু তা নয়, বিশাল প্রান্তর জুড়ে রয়েছে চা-বাগান। চা-বাগানের সারি ও মাঝে মধ্যে আমলকী গাছ যেন
কত নয়নাভিরাম।
নদ-নদী : আসামের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অনেক শাখানদী প্রবাহিত। নদীর উভয় তীরে মানুষের বাস।
এধার-ওধার ডিঙি নিয়ে পাড়ি দেবার দৃশ্যে মন আনন্দে ভরে উঠে।
আসামের বৈচিত্রতা : আসামকে সাত বোনের দেশ বলা হয়। এখানে নানা জাতি, উপজাতির বাস। নানা ভাষা ও
সংস্কৃতির মিলন ক্ষেত্র ই আসাম। হিন্দব দুর্গোৎসব, অসমীয়াদের বিহু এবং মুসলমানদের ঈদ উৎসবের খুশির প্লাবন
মনে দোলা দেবার মত।
ঐতিহাসিক কীর্তি কাহিনী : আসামের বুকে রয়েছে অনেক পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক কীর্তি কাহিনী। নীলাচল পাহাড়ে
দেবী কামাখ্যার মন্দির, তেজপুরের মহাভৈরব, অগ্নিগড়, উমানন্দ, বশিষ্ঠাশ্রম, ভু বনেশ্বরীর ধরল মুকুট, শিবসাগরের
বরপুখুরী, জয়সাগরের দেউল প্রভৃ তি প্রাচীন কীর্তি কাহিনীর অক্ষয় নিদর্শন আজও মানুষের কাছে আকর্ষণীয়।
উপসংহার : আসামের সৌন্দর্য অতু লনীয়। আসামকে যাদুর দেশ বলা হয়। আমরা আসানের মানুষ। এর সৌন্দর্য
অক্ষুন্ন রাখা আমাদের পারম্পরিক দায়িত্ব।
By: M MAB ® Learning

More Related Content

More from M MAB ®

"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® Learning
"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® Learning"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® Learning
"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® LearningM MAB ®
 
Memoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notes
Memoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notesMemoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notes
Memoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notesM MAB ®
 
Magh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notes
Magh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notesMagh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notes
Magh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notesM MAB ®
 
Bioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notes
Bioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notesBioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notes
Bioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notesM MAB ®
 
Essay on Corona virus (COVID-19)
Essay on Corona virus (COVID-19)Essay on Corona virus (COVID-19)
Essay on Corona virus (COVID-19)M MAB ®
 
Organisms and Populations
Organisms and PopulationsOrganisms and Populations
Organisms and PopulationsM MAB ®
 
পদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনা
পদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনাপদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনা
পদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনাM MAB ®
 
Congruence of Triangles
Congruence of TrianglesCongruence of Triangles
Congruence of TrianglesM MAB ®
 
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®M MAB ®
 
প্রার্থনা পদ by M MAB ®
প্রার্থনা পদ by M MAB ®প্রার্থনা পদ by M MAB ®
প্রার্থনা পদ by M MAB ®M MAB ®
 
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®M MAB ®
 
Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®M MAB ®
 
নব্যনীতি
নব্যনীতি নব্যনীতি
নব্যনীতি M MAB ®
 
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®M MAB ®
 
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdfClass 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdfM MAB ®
 
M MAB ® logo
M MAB ® logoM MAB ® logo
M MAB ® logoM MAB ®
 
Ideal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdfIdeal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdfM MAB ®
 

More from M MAB ® (17)

"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® Learning
"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® Learning"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® Learning
"Indigo" AHSEC Class 12 English notes by M MAB ® Learning
 
Memoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notes
Memoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notesMemoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notes
Memoirs of a Chota Sahib AHSEC Class 12 English notes
 
Magh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notes
Magh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notesMagh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notes
Magh Bihu or Maghar Domahi AHSEC Class 12 English notes
 
Bioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notes
Bioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notesBioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notes
Bioresource of Assam AHSEC class 12 Biology notes
 
Essay on Corona virus (COVID-19)
Essay on Corona virus (COVID-19)Essay on Corona virus (COVID-19)
Essay on Corona virus (COVID-19)
 
Organisms and Populations
Organisms and PopulationsOrganisms and Populations
Organisms and Populations
 
পদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনা
পদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনাপদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনা
পদার্থ বিজ্ঞানের বর্ণনা
 
Congruence of Triangles
Congruence of TrianglesCongruence of Triangles
Congruence of Triangles
 
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
Classification of element and periodicity in properties by M MAB ®
 
প্রার্থনা পদ by M MAB ®
প্রার্থনা পদ by M MAB ®প্রার্থনা পদ by M MAB ®
প্রার্থনা পদ by M MAB ®
 
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা by M MAB ®
 
Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®Cell Structure by M MAB ®
Cell Structure by M MAB ®
 
নব্যনীতি
নব্যনীতি নব্যনীতি
নব্যনীতি
 
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
Physical Exercise, Essay Writing by M MAB ®
 
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdfClass 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
Class 10 Parshian ch 3 & 4.pdf
 
M MAB ® logo
M MAB ® logoM MAB ® logo
M MAB ® logo
 
Ideal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdfIdeal General knowledge Class 4.pdf
Ideal General knowledge Class 4.pdf
 

Bengali Essay by M MAB ®

  • 1. সংবাদপত্র সূচনা : নানা প্রয়োজনে এক দেশের মানুষ অন্য দেশের সংবাদ জানিতে চায়, নিজের দেশেরও নানা সংবাদ সকলকেই জানিতে হয় । প্রাচীন কালে লোক মারফৎ সংবাদ আদান-প্রদান করা হইত । আধুনিক যুগে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হইবার পরই সংবাদপত্র বর্ত মান রূপে পৃথিবীর সকল দেশে প্রকাশিত হইতে থাকে পূর্ব ইতিহাস : চীন দেশেই সর্বপ্রথম সংবাদপত্র বাহির হয়। বাংলাদেশে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র প্রকাশ করেন শ্রীরামপুরের মিশনারিগণ । তদানীন্তন ভারত সরকারও 'ইন্ডিয়া গেজেট' নামে একটি সংবাদপত্র বাহির করিতেন । বাংলাদেশে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারকগণ মাসিক 'দিগ্‌ দর্শন' ও সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’ সংবাদপত্র দুইটি কিছুকাল নিয়মিত প্রকাশ করিয়াছিলেন । ( বর্ত মান ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক ভাষায় ও ইংরেজি ভাষায় বহু সংবাদপত্র প্রকাশিত হইয়া থাকে । সংবাদপত্রের প্রকারভেদ ও প্রকাশ : মাসিক, দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক প্রভৃ তি নানা প্রকার সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাধারণত: দেশ-বিদেশের সংবাদ প্রচারিত হয় । মাসিক ও পাক্ষিক পত্রিকায় সংবাদের সহিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ও প্রকাশ করা হয় সংবাদপত্রগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান হইতে সংবাদ কিনিয়া নিজেদের কাগজে প্রকাশ করে। উপকারিতা : সংবাদপত্রে রাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধ, খেলাধূলা প্রভৃ তি বিষয়ে নানা প্রকার সংবাদ প্রকাশিত হয়। কাজেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং নিজের দেশেও কোথায় কী ঘটিতেছে জানিতে হইলে সংবাদপত্র ছাড়া উপায় নেই। সংবাদপার পাঠে সমকালীন দুনিয়ার চিন্তাধারার সর্বোৎকৃ ষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় | জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূ মিকা তাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী | সংবাদপত্র অতি সহজে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছায় বলিয়া সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি ইহাকেই প্রচারের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে । নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠ করিলে পৃথিবীর সকল বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানা যায় । প্রতিদিন সকালে সংবাদপত্র পাঠ করিয়া আমরা নিজের দেশের তো বটেই, দূরবর্তী দেশগুলিরও আগের দিনের ঘটনা জানিতে পারি । একদিন সংবাদপত্র পাঠ করিতে না পারিলে মনে হয় বর্ত মান দুনিয়া হইতে পিছাইয়া পড়িয়াছি। অপকারিতা : অনেক বিষয়ের মতো সংবাদপত্রেরও ভালোমন্দ দুই দিক আছে । ইহা জনসাধারণকে যেমন সুপথে চালিত করিতে পারে তেমনি আবার মিথ্যা সংবাদ নিয়া বিভ্রান্তও করিতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলি নিজস্ব পত্রিকার সাহায্যে নানা প্রকার অসত্য প্রচার চালায়, দেশের উন্নতি অপেক্ষা দলীয় স্বার্থকেই তাহারা সংবাদপত্রে প্রাধান্য দেয় । তাই সংবাদপত্রের মূল আদর্শ হওয়া উচিত নিরপেক্ষতা। কোনো প্রকার স্বার্থ ও দলীয় মতবাদে প্রভাবিত না হইয়া সত্য সংবাদ জনসমক্ষে তু লিয়া ধরাই আদর্শ সংবাদপত্রের কাজ । By: M MAB ® Learning দৈনন্দিন/প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব
  • 2. আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান অপরিহার্য । বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা এক- পাও ফেলিতে পারি না । সকালে ঘুম হইতে উঠিয়াই টু থ-ব্রাস ও পেস্ট আমাদের চাই । কলের জলে হাত মুখ ধুইয়া আমরা যে প্রাতরাশ করি তাহার বেশ কিছুই কারখানায় তৈরি । সেই সকালেই খবরের কাগজ না ইহলে মুখে খাবার রুচে না। মা গ্যাসের উনুনে খাবার তৈরি করেন । তার পর আমরা পড়িতে বসি, বই খাতা, কলম, পেন্সিল —সবই বিজ্ঞানের দান । নয়টায় স্নানে যাই, সেখানেও চারিদিকে বিজ্ঞানের দান সাবান, শাম্পু, চিরুণি, আয়না— সকলই বিজ্ঞানের অবদান । স্কুলে যাওয়ার জন্য বাস, অটো বা গাড়ী স্কুলে গিয়াও মুক্তি নাই, স্বয়ংক্রিয় ঘণ্টি, দেওয়াল ঘড়ি ও তাহার বিচিত্র টু ংটাং শব্দ, ফ্যান, ইলেকট্রিক আলো আরও কত কি । এখন আবার স্কুলে স্কুলে আধুনিক বিশ্বকর্মার অর্চ না বিরাটভাবে শুরু হইয়াছে—এই বিশ্বকর্মাটি কম্পিউটার কম্পিউটারের অসাধ্য কোন কর্ম নাই। কম্পিউটার মানুষের হাতে অনন্ত শক্তি আনিয়া দিয়াছে বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানুষ মহাকাশে পাড়ি জমাইয়াছে । নূতন নূতন দুৰ্জ্জেয় তত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছে । অনেক অনেক গ্রহ নক্ষত্র এখন মানুষের জ্ঞানের আওতায় আসিয়াছে । চিকিৎসা, যোগাযোগ—কেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটিয়াছে । বাড়ীতে বসিয়া পৃথিবীর সকল দেশের মানুষের সঙ্গে মুহূর্তে যোগাযোগ করা যায় । ইন্টারনেটের মাধ্যমে, টেলিফোন যোগাযোগ এখন প্রায় অতীতের বস্তু হইতে চলিয়াছে । তোমার হাতের লেখা চিঠি তু মি ফ্যাক্সের মাধ্যমে যে কোন যায়গায় এক লহমায় পাঠাইতে সক্ষম । সমস্ত পৃথিবীটি যেন একটা ছোট্ট গ্রাম—সব মানুষ যেন তোমার পড়শী । কিন্তু এই চোখ ধাঁধানো অগ্রগতিও মানুষের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় নাই—বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের পানীয় জল, ক্ষুধার অন্ন, মাথা গুঁজাবার ঠাঁই, অশিক্ষা, রোগ ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় নাই । ধনী দেশগুলি সম্পদের সিংহভাগ নিজেদের অধিকারেই রাখিয়া দিয়াছে । তাই বিজ্ঞান স্বার্থপর মানুষের পরিষেবায়ই নিয়োজিত হইতেছে । তাই বিশ্বজোড়ে দাবি উঠিয়াছে—বিজ্ঞানকে কাহারও কুক্ষিগত করা চলিবে না। বিজ্ঞানের সুফল সব মানুষের মধ্যে সমভাবে ছড়াইয়া দিতে হইবে । By: M MAB ® Learning আসামের প্রাকৃ তিক সম্পদ সূচনা : বন আর পাহাড়ে ঘেরা আসামের প্রাকৃ তিক সৌন্দর্য অতু লনীয় । যনভূ মি পাখির গান, ঝরনার কলতান আর পত্রমমরে মুখর। কিন্তু আসামের প্রকৃ তি শুধু সুন্দরী নয়, সম্পদশালিনীও বটে। আসামের অর্থনৈতিক জীবনে তাই প্রকৃ তি দান কৃ তজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণীয়।
  • 3. প্রাকৃ তিক সম্পদের শ্রেণীবিভাগ : আসামের প্রাকৃ তিক সম্পদকে প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়- -বনজ সম্পদ ও খনিজ সম্পদ। এগুলিকে আবার কৃ ষিজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, প্রাণিজ সম্পদ, জলজ সম্পদ প্রভৃ তি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা যায় । বনজ সম্পদ : আসামের গভীর অরণ্যাঞ্চলে নানা জাতের মূল্যবান কাঠ পাওয়া যায় । লখিমপুর, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, দরং, গোয়ালপাড়া প্রভৃ তি জেলার বনভূ মিতে তিতাচাপা, চাম, গামারি, শাল, শিশু, সেগুন, রবার, ঘৃনা ইত্যাদি নানা প্রকার মূল্যবান বৃক্ষ জন্মে । এগুলি ছাড়া বাঁশ, বেত, খড় এ রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়। কামরূপ ও কার্বি আংলং জেলার অরণ্যাঞ্চলে প্রচুর লাক্ষা বৃক্ষ জন্মে । গোয়ালপাড়া জেলার উত্তরে ভু টান পাহাড় ও দক্ষিণে গারো পাহাড়ের পাদদেশে দুটি বিশাল গহন ও দুর্গম অরণ্য অবস্থিত। আসামের অরণ্যাঞ্চল নানা প্রকার বন্য পশু-পাখির প্রিয় বাসভূ মি। বন্য পশুর মধ্যে হাতি, গণ্ডার ও বাঘ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আসামের প্রত্যেক জেলায়ই মূল্যবান বন্য পশু সংরক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য আছে। শিবসাগর জেলায় কাজিরাঙ্গার একশৃঙ্গী গণ্ডারের অভয়ারণ্য পৃথিবীবিখ্যাত। আসামের পার্বত্য অঞ্চলে বহু খরস্রোতা নদ-নদী ও ঝরনা-প্রপাত আছে। এগুলি থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা অসীম । আমামের কোনো কোনো অঞ্চলের প্রধান জীবিকা হাতি-ধরা । এই রাজ্যের বনভূ মি থেকে নানারকম পশু-পাখি বিদেশে রপ্তানি করা হয় । খনিজ সম্পদ : গোটা আসাম রাজ্য খনিজ সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ । এ রাজ্যের খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা, পেট্রোল ও কেরোসিন উল্লেখযোগ্য । এগুলি ছাড়া চূনাপাথর, অভ্র, প্রাকৃ তিক গ্যাসও পাওয়া যায় । লিডো, মাঘেরিটা, বর গোলাই, মাকুম, নাজিরা প্রভৃ তি স্থানে কয়লার খনি আছে। ডিব্ৰুগড়, ও শিবসাগর জেলা খনিজ তেলের জন্য প্রসিদ্ধ । ডিগবয়, নাহারকটিয়া, মরাণ, দুলিয়াজান, রুদ্রসাগর, লাকোরা প্রভৃ তি স্থানে পেট্রোল ও কেরোসিন তেলের কৃ প আছে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গারো পাহাড় অঞ্চলের ভূ গর্ভে প্রচুর পরিমাণে কয়লা সঞ্চিত রয়েছে । উপসংহার : আসামের প্রাকৃ তিক সম্পদ অফু রন্ত হলেও তা এখনো সম্পূর্ণ কাজে লাগানো যায়নি। বিশেষ করে খনিজ সম্পদ এখনো অধিকাংশ অঞ্চলেই উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে । এর প্রধান কারণ আসামের কোনো কোনো অঞ্চলের দুর্গমতা এবং সুলভ পরিবহন ব্যবস্থার অভাব । তবু উল্লেখযোগ্য এই যে, গত কয়েক বৎসরে আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কাজ বিশেষভাবে অগ্রসর হয়েছে । তাই আশা করা যায়, পাতালপুরীর বন্দিনী রাজকন্যাকে আর বেশিদিন ঘুমিয়ে কাল কাটাতে হবে না । By: M MAB ® Learning আসামের কুটীরশিল্প সূচনা : কারিগরদের দ্বারা হাতে তৈরি শিল্পকে কুটীরশিল্প বলে। দেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবারে পুরুষানুক্রমে কুটারশিল্প নির্মিত হইয়া থাকে । হস্তনির্মিত দ্রব্যাদির যে বিশেষ সৌন্দর্য ফু টিয়া উঠে তাহাই ইহাকে যন্ত্রনির্মিত দ্রব্যের তু লনায় অধিক মর্যাদা দিয়া থাকে। আসাম রাজ্যের কুটারশিল্প সমগ্র ভারতে একটি বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী।
  • 4. কুটীরশিল্প কেন্দ্র : আসাম রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই কোনো না কোনো প্রকার ফু টার শিল্পের কেন্দ্র রহিয়াছে । পুরুষানুক্রমিক দক্ষতার ঐতিহ্যে আসামের কুটারশিল্পের কেন্দ্রগুলি দীর্ঘকাল ধরিয়া সুন্দর সুন্দর শিল্পদ্রব্য নির্মাণ করিয়া গুলিয়াছে । আসামের লখিমপুর, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, দরং, নগাওঁ, কামরূপ, গোয়ালপাড়া প্রভৃ তি জেলার গ্রামাঞ্চলে নানাপ্রকার কুটীশিল্প নির্মিত হয় । আসামের কুটার শিল্পের মধ্যে বস্ত্রবয়ন শিল্পই সর্বপ্রধান। এই রাজ্যের সর্বত্রই অল্প-বিস্তর হস্তচালিত তাঁত শিল্প কেন্দ্র রহিয়াছে । এন্ডি ও মুগার সূতা কাটা, বাঁশ ও বেতের নানা প্রকার কারুশিল্প, পিতল ও মাটির বাসনপত্র, দা-ছুরি- কাঁচি প্রভৃ তি লৌহজাত দ্রব্যাদি নির্মাণ এই রাজ্যের কুটারশিল্পের অন্তর্গত । কুটীরশিল্পের বিবরণ : আসামের উপত্যকা অঞ্চলের ও পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে মূল্যবান এণ্ডি ও মুগার রেশমবস্ত্র তৈয়ারি হয়। এই রাজ্যের গ্রামীণ নারীসমাজ সুতাকাটা ও বস্ত্রবহনে বিশেষ দক্ষ। বিশেষত পার্বত্য রমণীরা বর্ণবহুল বঙ্গবয়নে বিস্ময়কর নৈপুণ্যের অধিকারিণী । লখিমপুর, ডিব্ৰুগড়, মঙ্গলদৈ, শোয়ালকুছি, পলাশবাড়ি, কোকরাঝাড়, মিকির পাহাড় প্রভৃ তি স্থান এণ্ডি ও মুগার কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ। ইহা ছাড়া বরপেটার হস্তিদন্ত শিল্প, হাজোর পিতলের বাসনশিল্প, সর্থেবাড়ির কাঁসার বাসনশিল্প বিশেষ প্রসিদ্ধ । যোরহাট জিলার দরঙ্গ অঞ্চলে উৎকৃ ষ্ট ধরনের দা-কাটারি কুড়াল ইত্যাদি নির্মিত হয় । কাছাড় জেলার কয়েকটি স্থানে ভালো পাটা প্রস্তুত হয় । কূটীরশিল্পের স্থান : আসামের জনসমাজে কুটিরশিল্প জীবিকার অন্যতম উপায় । অল্প মূলধন বিনিয়োগ করিয়া ইহাতে মোটামুটি লাভ হয় বলিয়া বহুপরিবার সম্পূর্ণরূপে ইহার উপর নির্ভ রশীল। দক্ষ শিল্পীদের মর্যাদাও সমাজে উল্লেখযোগ্য । আসামের কুটারশিল্প সংরক্ষণে সরকারি সহযোগিতা প্রশংসনীয়। সারা ভারতে এবং বহির্বিশ্বে এই রাজ্যের সুদৃশ্য ও রুচিসম্মত কুটীরশিল্পজাত দ্রব্যাদি ক্রমশ: জনপ্রিয় হইয়া উঠিতেছে । আজকাল অনেকের বাড়িতেই আসামের বিছানার চাদর, দরজা-জানালার পর্দা, বাঁশের ফু লদানী ও অন্যান্য সৌখীন দ্রব্য দেখিতে পাওয়া যায় । উপসংহার : দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্ত নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচিবোধেরও পরিবর্ত ন হয় । যন্ত্রশিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুটারশিল্প ক্রমশঃ পিছনে পড়িতেছে। যন্ত্র অপেক্ষাকৃ ত অল্প সময়ে, অল্প ব্যয়ে অধিক পরিমাণ দ্রব্য নির্মাণ করিতে পারে । ইহাতে প্রয়োজন মিটিলেও সৌন্দর্যবোধ সব সময় তৃ প্ত হয় না। তাই রুচিশীল সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের নিকট আসামের কুটীরশিল্পের আবেদন ভবিষ্যতেও অক্ষুণ্ণ থাকিবে আশা করা যায়। By: M MAB ® Learning আসামের জাতীয় উৎসব/বিহু উৎসব সূচনা : প্রত্যেক দেশেই এমন এক একটি উৎসব থাকে যাহার মধ্য দিয়া দেশের অধিবাসীদের সামগ্রিক পরিচয় ফু টিয়া উঠে । এই ধরনের উৎসবকেই জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই দিক হইতে দেখিলে বিহু উৎসবকেই আসামের জাতীয় উৎসব বলিতে হয় । কারণ এই উৎসবটির মধ্য দিয়াই সমস্ত অসমীয়া জাতির ধর্ম-সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনের সুন্দর জগটির প্রকাশ ঘটিয়া থাকে । উৎসবের কাল : 'বিহু' শব্দটি 'বিষুধ' শব্দের রূপান্তর । প্রতি বৎসর বিষুব সংক্রান্তি অর্থাৎ চৈত্র মাসের সংক্রান্তি দিনে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বলিয়া ইহা এই নামে পরিচিত। চৈত্র মাসের বিহু ছাড়া আরো দুইটি বিহু উৎসব প্রচলিত আছে । পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় ভোগালী বিহু' এবং আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি দিবসে অনুষ্ঠিত হয় 'কাতি বিহু'। চৈত্র
  • 5. মাসে অনুষ্ঠিত বিহু উৎসবটি 'রঙ্গালী” বিহু নামে পরিচিত এবং ব্যাপকতা ও বর্ণাতো ইহাই আসামের জনসমাজে প্রধান উৎসবের স্থান অধিকার করিয়াছে। উৎসবের বিবরণ : ‘রঙ্গালী বিহু চৈত্র সংক্রান্তিতে শুরু হয় এবং বৈশাখের সপ্তম দিবসে সম্পন্ন হয়। 'বঙ্গালী' কথাটির মধ্যে যে আনন্দময়তার ইঙ্গিত আছে রঙ্গালী বিহুতে তাহারই অবাধ প্রকাশ দেখিতে পাওয়া যায় । বাসন্তী প্রকৃ তির মনোরম পটভূ মিকায় এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । পত্র পুষ্প বিভূ ষিত প্রকৃ তির আনন্দময়তা আবালবৃদ্ধ নরনারীর হৃদয়ে সঞ্চারিত হইয়া সকলকে আনন্দে মাতোয়ারা করিয়া তোলে । পুণ্যস্নান, দান-ধ্যান, পূজার্চ না প্রভৃ তি কাজকর্মের মধ্য দিয়া উৎসবের প্রথম দিনটি অতিবাহিত হয় । গবাদি পশুর প্রতিও এই দিন বিশেষ যত্ন লওয়া হয় । দ্বিতীয় দিন হইতে নৃত্য সঙ্গীতের মধ্য দিয়া সপ্তাহব্যাপী প্রমোদ উৎসবের সূত্রপাত হয় । নূতন বসন পরিয়া আবালবৃদ্ধবনিতা উৎসব আঙ্গিনায় সমবেত হয় । বাঁশির সুরে মাদলের আওয়াজে আকাশ-বাতাস মুখর হইয়া উঠে । প্রিয়জনকে 'গামছা উপহার দেওয়া এই উৎসবের প্রধান অঙ্গ । ‘কাতি বিহু” বা কঙ্গালী বিহুতে ধনদাত্রী লক্ষ্মীদেবীর নিকট শস্য সম্পদ প্রার্থনা করা হয় । পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত বিহু উৎসবে আনন্দ ভোজন প্রাধান্য পায়, তাই বোধহয় ইহার নাম ভোগালী বিহু । শস্য ভাণ্ডারের শস্য সঞ্চয়ের পরে প্রিয়-পরিজনকে ভোজনে পরিতৃ প্ত করিবার আনন্দ লাভ ইহার প্রধান উদ্দেশ্য । উৎসবের তাৎপর্য : বিহু উৎসব মূলত: গ্রামীণ মানুষের কৃ তি উৎসব। ইহার মধ্য দিয়া ঋতু র আহান, মূর্তি কার উর্বরতা প্রার্থনা, শস্য সংগ্রহের অভিলাষ ইত্যাদি সামাজিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হইয়াছে । এগুলিকে কেন্দ্র করিয়া পারস্পরিক শুভ কামনা ও সামাজিক মিলনের অবকাশ ঘটে । তদুপরি নৃত্যে সঙ্গীতাদিতে শিল্প সংস্কৃতির বিশিষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। বস্তুত, বিহু উৎসবে আসামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিধৃত রহিয়াছে। উপসংহার : কালের পরিবর্ত নে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রীতিনীতির পরিবর্ত ন ঘটে । দেশের উৎসবকলাও এই পরিবর্ত নের প্রভাব অস্বীকার করিতে পারে না । তাই আসামের জাতীয় উৎসব বিহুর বহিরঙ্গে কোথাও আধুনিকতার ছাপ পড়িয়াছে কোথাও বা প্রমোদ-অনুষ্ঠানের প্রকৃ তিগত পরিবর্ত ন সাধিত হইয়াছে। কিন্তু প্রকৃ তির ক্রোড়ে লালিত গ্রামীণ জীবনে বিহু উৎসবের অমলিন আনন্দধারা আগের মতই প্রবহমান। By: M MAB ® Learning স্বাবলম্বন সূচনা : নিজের কাজ নিজে করিবার নামই স্বাবলম্বন। একটি মানুষকে তাহার সারাজীবনে নানা কাজ করিতে হয়, বহুপ্রকার সমস্যায় পড়িতে হয় । যাহারা নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস রাখিয়া সকল কাজ ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে তাহারাই স্বাবলম্বী । স্বাবলম্বনের প্রয়োজন : বিধাতা সকল জীবকেই যথোপযুক্ত দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধি দিয়া এ পৃথিবীতে প্রেরণ করিয়াছেন । সকল জীবের মধ্যে মানুষ আবার সকল দিক দিয়াই শ্রেষ্ঠ। মানুষ শুধু খাইয়া পরিয়া থাকিতে পারিলেই সন্তুষ্ট হয় না, সে সুখী ও সুন্দর জীবন যাপন করিতে চায় । পরিশ্রম না করিলে এই সুখী জীবন লাভ করা যায় না। কাজেই মানবজীবনই হইল অবিরাম কর্মের জীবন ।
  • 6. কিন্তু সকল মানুষই নিজ নিজ কাজটু কু করিতে রাজী থাকে না। এ পৃথিবীতে অলস ও কর্মবিমুখ মানুষের সংখ্যা কম নয় । এই শ্রেণীর লোকেরাও সুখী জীবন যাপন করিতে ইচ্ছুক, কিন্তু সেজন্য খাটিতে রাজী নয় । তাহারা নিজেদের সকল কাজেই অপরের উপর নির্ভ র করিয়া থাকে। প্রতিটি বিষয়ে অপরের উপর নির্ভ র করিয়া থাকা যে অসম্মান ও লজ্জার ব্যাপার এই বোধটু কু তাহাদের নাই । কাজেই যাহাদের আত্মমর্যাদাবোধ নাই তাহারা কখনও স্বাবলম্বী হইতে পারে না। স্বাবলম্বনে শুধু যে আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশিত হয় তাহা নহে, ইহা মানুষের কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশে সহায়তা করে । প্রথমে অসুবিধা হইলেও কালক্রমে সকল কাজ করিবার মত শক্তি ও কৌশল ইহাতেই অর্জ ন করা যায় । পারিব না বলিয়া বসিয়া থাকিলে চিরকালই পরমুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে হয় । জীবনে যাহাদের উচ্চাভিলাষ আছে অর্থাৎ উন্নতি করিতে চায় স্বাবলম্বন তাহাদের প্রধান ভিত্তি । নিজে উদ্যোগী হইয়া উন্নতির জন্য চেষ্টা না করিলে অপর কেহ আসিয়া তাহা করিয়া দিতে পারে না। কথাই আছে, নিদ্রিত সিংহের মুখে কখনও শিকার আপনি আসিয়া প্রবেশ করে না। কাজেই জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি করিতে হইলে নিজেকেই উৎসাহ ও উদ্যমসহকারে লাগিয়া পড়িতে হইবে । এমন বহু মনীষী-মহাপুরুষ কর্মবীরের কথা আমরা জানি যাঁহারা শুধু স্বাবলম্বন বলে জীবনে পাণ্ডিত্য, অর্থ ও খ্যাতি অর্জ ন করিয়াছেন । আবার এমন লোকের কথাও জানি যে নিজের হাতে একগ্লাস জল পর্যন্ত গড়াইয়া খাইতে চায় না, এমন ছাড়াও আছে যে সকল কাজই গৃহশিক্ষককে দিয়া করাইয়া লইতে চায় । স্বাবলম্বন শিক্ষা : জীবনে উন্নতি করিতে হইলে এবং আত্মমর্যাদাসহকারে মাথা উঁচু করিয়া বাঁচিতে হইলে স্বাবলম্বী হইতেই হইবে। স্বাবলম্বী হঠাৎ হওয়া যায় না, এজন্য বাল্যকাল হইতেই নিজের কাজ যথাসম্ভব নিজেকে করিবার চেষ্টা করিতে হয় । শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নহে জাতীয় জীবনের উন্নতির জন্য ও স্বাবলম্বন প্রয়োজন। স্বাবলম্বী হইলেই সকল কাজে সাফল্য আসিবে এমন নাও হইতে পারে । ইংরেজিতে একটি কথা আছে যাহার অর্থ হইল—যে ব্যক্তি নিজেকে সাহায্য করে ভগবান স্বয়ং তাহাকে সাহায্য করেন । By: M MAB ® Learning নিয়মানুবর্তি তা সূচনা : যথাসময়ে নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন অথবা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করিবার নামই নিয়মানুবর্তি তা । নিয়মানুবর্তি তার অর্থ হইল কতকগুলি নিয়ম অনুসরণ করিয়া চলা । প্রতিটি মানুষকেই প্রত্যহ নির্দিষ্ট সময়ে কতকগুলি কাজ করিতে হয় । বয়স্ক মানুষ ঠিক সময়ে অফিসে যায়, ছাত্র যায় বিদ্যালয়ে । এইভাবে প্রত্যেকেই নিয়মিত কোনো না কোনো কাজ করে । শুধু চাকরি বা লেখাপড়া নয়, দৈনিক আরো কতকগুলি কাজ প্রত্যেককেই করিতে হয় এবং তাহাও নির্দিষ্ট সমে নিয়মানুবর্তি তার প্রয়োজন : বিশ্ব জুড়িয়া নিয়মের রাজর চলিতেছে । সূর্যোদয় সূর্যাস্ত, বৎসর মাস, গ্রহ-তারা সকলেই নিয়মের অধীন । একজন সামাজিক মানুষকে আমৃত্যু নানা কাজ করিতে হয়, অবশ্য সে যদি সুখী ও উন্নত জীবন
  • 7. কামনা করে । যখনকার যে কাজ তাহা সম্পাদন না করিলে ক্ষতি তো হয়ই বরং সে ক্ষতি আর পূরণেরও সুযোগ পাওয়া যায় না। কারণ যে সময় চলিয়া যায় তাহা আর ফিরিয়া আসে না। নদীর স্রোতের মতোই সময়ের প্রবাহ কেবলই সম্মুখে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছে । সুতরাং জীবনের যে সময়টু কু অতিবাহিত হইয়া গেল রাজার রাজত্বের বিনিময়েও তাহা ফিরিয়া পাওয়া যাইবে না। কাজেই খেয়াল খুশিমত এক সময়ের কাজ ডান্য সময়ে করিলে ক্ষতি যাহা হইবার তাহা হইবেই। মনের স্বভাবই এই যে তাহাকে যতই প্রশ্রয় দেওয়া যায় ততই সে পাইয়া বসে । তাই একবার নিয়ম ভাঙিলে কেবলই নিয়ম ভাঙিতে ইচ্ছা হইবে । কাজেই চেষ্টা করিয়া মনকে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত করিতে হয় । একবার নিয়মে অভান্ত হইয়া গেলে পরে আর এতটু কুও কষ্ট হয় না । ব্যক্তিগত ও দলগত জীবনে নিয়মানুবর্তি তার মূল্য খুব বেশি। নিয়ম মানিয়া চলিলে বিদ্যার্জ ন ও অর্থোপার্জ ন দুইই সহজতর হয় । নিয়মানুবর্তি তা দলগত শক্তি বৃদ্ধি করে। দলের নিয়ম ও দলপতির নির্দেশ মানিয়া চলিলে অতি বৃহৎ কাজও সহজে সম্পন্ন করা যায়। সৈনাবাহিনী নিয়মানুবর্তি তার সুন্দর উদাহরণ। খোঁজ লইলে দেখা যাইবে যাঁহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছেন তাহারা নিয়মানুসারে নিজ নিজ কাজ যথাসময়ে করিয়াছেন। ইউরোপীয় জাতিসমূহ আমাদের অপেক্ষা অনেক বেশি নিয়মানুবর্তী বলিয়াই জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাহারা আজ এত উন্নতি করিতে পারিয়াছে । সুতরাং ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা পালন করিতে হইবে । উপসংহার: শৈশব হইতেই নিয়মানুবর্তি তা শিক্ষা করা উচিত। একবার নিয়মে অভ্যস্ত হইয়া গেলে সারাজীবন ধরিয়া তাহা মানিয়া চলা যায়। তাই বালকদের উদ্দেশ্য করিয়া বলা হইয়াছে— পড়িবার সময় পড়িবে, খেলিবার সময় খেলা করিবে । মূল কথা, ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করা চাই। সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে যাহারা জীবন অতিবাহিত করে তাহাদের উন্নতি কেহ রোধ: করিতে পারে না । By: M MAB ® Learning মহাপুরুষের জীবনী/স্বামী বিবেকানন্দ সূচনা : আধুনিক যুগে মানবজাতি যাঁহাদের কর্মে ও চিন্তায় বিশেষরূপে সমৃদ্ধ হইয়াছে ভারতের স্বামী বিবেকানন্দ তাঁহাদের মধ্যে প্রধান । হিন্দু- সন্ন্যাসীরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াও সকল ধর্মের সকল শ্রেণীর মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি নিজের জ্ঞান ও কর্মশক্তি নিঃশেষে নিয়োগ করিয়াছিলেন । জন্ম ও বংশ পরিচয় : স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি কলিকাতার শিমুলিয়া অঞ্চলে সুবিখ্যাত দত্ত বংশে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁহার পিতা বিশ্বনাথ দত্ত, মাতা ভু বনেশ্বরী দেবী ।
  • 8. বালাজীবন ও শিক্ষা : বিবেকানন্দের ডাক নাম 'বিলে', ভালো নাম নরেন্দ্রনাথ । বালক নরেন্দ্রনাথ ছিলেন খুবই দূরত্ব, কিন্তু তাঁহার বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। খেলাধূলা ও শরীর চর্চ ায়ও তিনি আগ্রহী ছিলেন। মাত্র চৌদ্দ বৎসর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করিয়া নরেন্দ্রনাথ জেনারেল এসেমব্লিস কলেজে ভর্তি হন। তাঁহার জ্ঞানতৃ ষ্ণা ছিল অসীম । ঈশ্বর আছেন কি না ইহা জানিবার জন্য প্রথমে তিনি ইউরোপীয় ধর্ম-দর্শন পাঠ করেন। কিন্তু অন্তর কিছুতেই তৃ প্ত হইল না। ক্রমশ তিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হইয়া উঠিলেন । খ্রিষ্টান ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম তাঁহার কৌতূ হল মিটাইতে পারিল না। এইরূপ মনের অবস্থা লইয়াই তিনি ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই সময়েই তাঁহার পিতার মৃত্যু হওয়ায় সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তাঁহার উপরে পড়ে । একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে ঈশ্বর ও জীবনের মূল সত্য জানিবার আকাঙ্ক্ষা, উভয়ের মধ্যে পড়িয়া নরেন্দ্রনাথ অধীর হইয়া উঠিলেন । অতঃপর দক্ষিণেশ্বরের মাতৃ -সাধক শ্রীরামকৃ ষ্ণ পরমহংসদেবের সহিত পরিচিত হইয়া তিনি ঈশ্বর ও জীবনের পরম সত্য উপলব্ধি করিলেন । ইহার কিছুকাল পরে তিনি রামকৃ ষ্ণদেবের নিকট হইতে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এবং তখন হইতেই নরেন্দ্রনাথের নাম হয় স্বামী বিবেকানন্দ । সন্ন্যাস গ্রহণের পর বিবেকানন্দ কয়েক বৎসর হিমালয়ে তপস্যা করিয়া ভারত-পরিক্রমায় বাহির হন। কর্মজীবন : স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় শিকাগো শহরে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যোগদান করিয়া হিন্দু ধর্মের চিরন্তন আদর্শ প্রচার করেন । সেদিন তিনি সেই সভায় সমবেত নরনারীকে ভ্রাতা ও ভগ্নী সম্বোধন করিয়া যে বক্ত ৃ তা দেন তাহাতেই হিন্দুধর্মের সর্বমানবীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। বহু পাশ্চাত্য নরনারী তাঁহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । তাঁহার পাশ্চাত্য শিষ্যদের মধ্যে মিস্‌ মার্গারেট নোবেল বা ভগিনী নিবেদিতার নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ইহার পর স্বামীজি পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া আসেন। বিশ্ববিজয়ী স্বামী বিবেকানন্দ ভারতে আসিয়াই কর্মযজ্ঞের সূচনা করেন । আর্ত মানবতার সেবার জন্য তিনি বেলুড়ে 'রামকৃ ষ্ণ মিশন' স্থাপন করেন, আলমোড়ায় প্রতিষ্ঠা করিলেন ব্রহ্মচর্যাশ্রম। বিবেকানন্দের নেতৃ ত্বে তাঁহার সন্ন্যাসী ভ্রাতৃ বৰ্গ মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করিলেন। তিনি মানবসেবাকেই ঈশ্বর পূজা বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাই শুধু ভারতবাসী নয়, শুধু বিশ্ববাসী নয়, সকল জীবের মধ্যেই তিনি ঈশ্বরকে অনুভব করিতেন : “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর । " মৃত্যু : অবিরত কর্মে নিযুক্ত থাকিবার ফলে স্বামীজির স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে ভাঙিয়া পড়ে। তবু অসীম মানসিক শক্তির জোরে তিনি কাজ করিয়া যাইতে থাকেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি বিশেষ অসুস্থ হইয়া বেলুড়ে চলিয়া আসেন । এখানেই ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই ধ্যানসমাহিত অবস্থায় স্বামী বিবেকানন্দ দেহত্যাগ করেন । উপসংহার : মহাপুরুষদের আমরা অমর বলিয়া থাকি এই কারণে যে, তাহাদের দেহ বিনষ্ট হয়, কিন্তু আদর্শ চিরকাল জীবিত থাকে । স্বামী বিবেকানন্দও এমনি একজন অমর মহামানব। By: M MAB ® Learning বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ সূচনা : বিজ্ঞান শব্দের অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান অর্থাৎ যা মানুষকে বিশেষভাবে জানার পথে সঞ্চালিত করে। এককালে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান ছিল ক্ষীণ। মানুষ পায়ে হেঁটে চলত। গাছের ছাল পরত। কাচা মাছ, মাংস বা বনের ফলমূল খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করত। তারপর আগুনের ব্যবহার শিখল। ক্রমে ধাতু র ব্যবহারও শিখতে শুরু করল। ক্রমে জন্তু পোষা ও চাষাবাদকে আশ্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে লাগল। এভাবে ধাপে ধাপে মানুষ এগিয়ে আজ মহাকাশ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হল। বর্ত মান জনজীবনে বিজ্ঞানই একমাত্র অবলম্বন। বিজ্ঞান আশীর্বাদ : সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হতে শুরু করে রাতের শয্যাগ্রহণের আগ অবধি বিজ্ঞানের সাহায্য না নিয়ে আমাদের উপায় নেই। বিজ্ঞান আমাদের আশীর্বাদ স্বরূপ। চা পান, খাওয়া দাওয়া, চাল-চলন, পোষাক-পরিচ্ছদ, পড়া-শোনা ও চিকিৎসা সব কিছুই আজ বিজ্ঞান সম্মত। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ওখন মানুষ আধুনিক সভ্যতায় এসে
  • 9. পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। ওখন মানুষ উন্নতমানের যানবাহন নিয়ে চলছে। রুচিসম্মত পোষাক পরতে পারছে। সাধারণ ও কারিগরী শিক্ষা নিচ্ছে, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে কঠিন রোগ-শোক থেকে মুক্তি লাভের পথ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে বড় বড় কল-কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। কৃ ষিকার্যে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে উৎপাদনও বহুগুণ ৰেড়ে চলেছে। কম্পিউটারের সাহায্যে গাণিতিক সমস্যা সমাধান হচ্ছে। আরও কত কী। বিজ্ঞান অভিশাপ : বিচার করলে বিজ্ঞানকে আশীর্বাদই বলা যায়। বিজ্ঞানের কিছু অভিশাপ থাকলেও এ অভিশপ্ততার জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়। বিজ্ঞান একটি নিষ্ক্রিয় শক্তিমাত্র। কিন্তু বিজ্ঞান মানুষের ক্রিয়াকাণ্ডে অভিশাপ হয়ে দাড়াতে পারে। যেমন- ক্ষেপণাস্ত্র, আনবিক বোমা, ডিনামাইট, আগ্নেয়াস্ত্র প্রভৃ তিকে যদি কোনও অশুভ কাজে ব্যবহার করা হয়, তবে তা হবে অভিশাপ ও আতঙ্কের বিষয়। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের জন্য আজ প্রকৃ তির পরিবেশের ওপর দারুণ চাপ হচ্ছে। নেমে আসছে সংকটের অশনি সংকেত। পরিবেশ প্রদূষিত হয়ে জনজীবনে ডেকে আনছে বিপন্নতা। উপসংহার : প্রকৃ তপক্ষে বিজ্ঞান সম্পূর্ণ নির্দোষ। কিন্তু নিষ্ঠু র মানবাত্মা জনকে দায়ী করেছে। বিজ্ঞানের সুফল এবং কুফলের রূপকার মানুষই। মানুষ যেদিকে একে চালনার ইচ্ছা করবে সেদিকেই চলবে। By: M MAB ® Learning অসমের বন্যা ও তার প্রতিকার সূচনা : বন্যা হল ভয়াবহ প্রাকৃ তিক দুর্যোগ। অসমের জনজীবনে বন্যা প্রতি বছরই অভিশাপ নিয়ে আসে। বন্যার সর্বনাশা পরিণাম অবর্ণনীয়। বন্যার সময় মানুষের দুর্দশার অন্ত থাকে না। অথৈ জলে দিগ-দিগন্ত প্লাবিত হয়ে উঠে। যতদূর দৃষ্টি চলে শুধু জল আর জল, যেন ভাসমান জীবনের এক সকরুণ দৃশ্য। বন্যার কারণ : আসম পাহাড় পর্বতে পরিবেষ্টিত এক বৃষ্টিবহুল রাজ্য। অসমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির ফলে নদ-নদীগুলোতে জল মাত্রাতিরিক্ত। হয়ে উভয় তীরে উপচে পড়ে ও প্লাবন দেখা দেয়। উত্তরাঞ্চলের পর্বতশ্রেণির তু ষারগণিত ঝরণা ধারা নেমে এসে ব্রহ্মপুত্র ও তার শাখা নদীগুলোকে জলমগ্ন করে তোলে। নদী তার জলধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে ক্রমে তীরবর্তী অঞ্চলে জলির বিস্তৃতি ঘটে আর তখনই দেখা দেয় বন্যা নামক ভয়াবহ অভিশাপ। বন্যার কুফল : বন্যার কুফল বর্ণনাতীত। বন্যার ফলে মানুষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। ঘর বাড়ি নষ্ট হয়। রাস্তাঘাট আবার মেরামত করারও প্রয়োজন হয়। প্রচুর শসা, চারাগাছ, গরু, মহিষ, ছাগ প্রভৃ তি পশু বিনষ্ট হয়, সঞ্চিত আহার্য
  • 10. সম্ভার ভেসে যায় এবং অনেক মানুষেরও প্রাণহানি ঘটে। দেশে দুর্ভি ক্ষ দেখা দেয়, এমনকি মহামারী রোগেরও প্রাদুর্ভ াব হয়। মানুষ নিরাশ্রয়, নিরন্ন ও স্বজনহীন হয়ে পড়ে। বন্যার সুফল : বন্যার কুফলের তু লনায় সুফল নাই বললেই চলে। তবে বন্যা হলে নদীর তীরবর্তী সমতল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি সিঞ্চিত হয়ে পরবর্তীতে ফসল ভাল হয়। কখনও নিচু স্থান উঁচু হয়ে উঠে। বন্যার প্রতিকার : বন্যা প্রাকৃ তিক দুর্যোগ। এর প্রতিরোধ করা সহজ কথা নয়। তবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথ প্রচেষ্টা চালালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পার্বত্য অঞ্চলের জলধারা আটকে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী-নালায় খনন কার্য চালিয়ে আরও গভীর করতে হবে যাতে জলধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নদীর উভয় তীরে শক্ত ও উঁচু বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধের মাটি ধরে রাখবার জন্য প্রকাণ্ড বৃক্ষচারা রোপণ করে নিতে হবে। নদীতে বিশাল জলাধার নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাতে হবে। সর্বোপরি সরকার বাহাদুরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বা পরিকল্পনা গ্রহণে প্রতিরোধ করা কিছুটা সম্ভব হতে পারে। উপসংহার : মানুষ প্রকৃ তির সৃষ্টি। প্রকৃ তির হাতে মানুষ অসহায় মাত্র। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান কখনও প্রকৃ তির ইচ্ছাকে উপেক্ষা করতে পারে না। বরং মানুষ প্রাকৃ তিক শক্তির উপর ভিত্তি করে আবিষ্কারের কাজ চালাতে পারে। অতএব, আশা করা যায় যে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে হয়ত একদিন অসম বন্যার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হবে। By: M MAB ® Learning পরিবেশ দষণূ/প্রদূষণ ও তার প্রতিকার সূচনা : আজকের পৃথিবীতে পরিবেশ প্রদূষণ একটা প্রধান সমস্যা। এককালে পৃথিবীর বাতাস ছিল নির্মল, মাটি ছিল খাঁটি এবং জলও ছিল বিশুদ্ধ। ছিল না যান্ত্রিক কলকারখানা, ছিল না এতটা ঘন জনবসতি। কিন্তু আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার উন্নতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ প্রদূষিত হয়ে জনজীবনে নেমে আসছে মহা সংকট ও চরম বিপর্যয়। পরিবেশ প্রদূষণের কারণ : বর্ত মান বিজ্ঞানের যুগে দেশে গড়ে উঠছে কলকারখানা ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। কলকারখানা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া বাতাসে মিশে বাতাসের নির্মলতা বিনষ্ট করছে। যানবাহনের ধোঁয়া এবং কারখানার বর্জ ্য পদার্থের দুর্গন্ধ যেন বায়ু প্রদূষণে আরও বিশেষভাবে খোরাক যোগিয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে ওয়েল রিফাইনিং, সিমেন্ট উৎপাদন, প্লাষ্টিক ও সারশিল্প, ক্যামিকেল প্রসেস এবং পারমাণবিক তেলাওয়তা বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে চলছে। জঞ্জাল প্রভৃ তি বর্জ ্য পদার্থ বৃষ্টির জলে বাহিত হয়ে নদী- নালা বা পুষ্করিণীর জলের সাথে মিশ্রিত হচ্ছে ও পবিত্র জল দূষিত করছে। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করার ফলে মানবদেহে বিষক্রিয়ার সঞ্চারণ ঘটে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃ তিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানুষ প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে গাছ-পালা বা বনাঞ্চল ধ্বংস করে চলছে। ফলে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশঃ হ্রাস হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও চরম উষ্ণায়নে বিশ্বজুড়ে হাহাকার দেখা দিচ্ছে। পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষ বংক্রাইটিস, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ প্রভৃ তিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
  • 11. প্রতিকার : বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিবেশ দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেমন - কলকারখানা উন্মুক্ত জায়গায় স্থাপন করে নিঃসৃত ধোঁয়া, জঞ্জাল প্রভৃ তি নিয়ন্ত্রণে শিল্প আইন মেনে নিতে হবে। নিষ্কাশিত ধোঁয়া, বর্জ ্য পদার্থ যাতে সহজে বাতাসে বা জলে মিশে যেতে না পারে, তজ্জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফিলটার, বুরুশ ইত্যাদির ব্যবহার নিয়মিত করতে হবে। পঁচা-গলা বস্তু মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কলকারখানা বা যানবাহনে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে গাছপালা রোপণ করে পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখার মনোবৃত্তি প্রতিটি মানুষের পোষণ করতে হবে।পরিবেশ দূষণমুক্ত করা মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য নয়। উপসংহার : পৃথিবীটা সৌন্দর্যের লীলাভূ মি। প্রভু তাঁর অকৃ পণ হাতে সুশোভিত করে জগৎ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আমরা বিশ্বের নির্মল পরিবেশকে বিষাদময় করে বসবাসের অনুপযোগী করছি। যন্ত্রসভ্যতার বিষপাম্পে প্রবাহিত হয়ে জনজীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। আমাদের সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে, পৃথিবী হবে নিষ্কলুষ; মানব জীবনে ফিরে আসবে পরম তৃ প্তি ও শান্তি। By: M MAB ® Learning তোমার প্রিয় লেখক/কবি ভূ মিকা : কবি অনেক আছেন। প্রত্যেক কবি সাহিত্যিকরা অবশ্যই শ্রদ্ধার পাত্র। ওরাই জাতির পথিকৃ ৎস্বরূপ বরণীয় এবং চিরস্মরণীয়। তন্মধ্যে কালজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে বেশ পছন্দের। আমি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে প্রিয় কবি হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য। জন্ম : ১৮৬৮ সালের পঁচিশে বৈশাখ জোড়াসাঁকুর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তাঁর চরিত্রের প্রভাব প্রতিফলিত হয় রবীন্দ্রনাথের জীবনেও। কলকাতার ধনী ঐতিহ্যবাহী পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হলেও শৈশব থেকে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত। শিক্ষা : প্রথমে রবীন্দ্রনাথ ওরিয়েন্টেল সেমিনারীতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন পড়াশুনা করার পর নর্মাল স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। তারপর বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেবিয়ার্স স্কুলেও কিছুদিন পড়াশুনা করেন। তবে স্কুলে জীবনের সীমাবদ্ধ পরিবেশ রবীন্দ্রনাথকে ধরে রাখতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। তারপর বাড়িতে গৃহশিক্ষকদের কাছে নানা বিষয়ে পাঠ গ্রহণ করে মাত্র নয় বছর বয়সে কারা চর্চ া শুরু করে দেন। কাব্য চর্চ া : তখনও বালকত্ব কাটেনি। রবীন্দ্রনাথের রচনা ক্ষমতা দেখে তাঁর শিক্ষকরাও বিস্মিত হন। তেরো বছয় বয়সে রবীন্দ্রনাথের রচিত কবিতা 'তত্ববোধিনী' পত্রিকায় প্রকাশ পায়। তারপর 'ভারতী' 'সাধনা' প্রভৃ তি কবিতাও
  • 12. পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ হতে থাকে। এভাবে ছন্দ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রভৃ তিতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার ক্রমশঃ বিকাশ ঘটে। রচনা সম্ভার : রবীন্দ্রনাথের রচিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, টিক প্রভৃ তি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং চমকপ্রদ। তাঁর রচিত কাব্যসমূহের মধ্যে। 'মানসী' 'সোনার তরী' 'গীতাঞ্জলি' 'গীতালী' ও পুরবী প্রধান। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে "বৌ ঠাকুরাণীর হাট' 'গোরা' 'যোগাযোগ" "ঘরে বাইরে' 'চতু রঙ্গ' প্রভৃ তি। ছোট গল্পের সংকলন হচ্ছে 'গল্পগুচ্ছে' 'রক্তকরবী' 'বিসর্জ ন' প্রভৃ তি। এছাড়া তাঁর রচিত গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, সাধু-সঙ্গীত ও প্রবন্ধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পুরস্কার : রবীন্দ্রনাথ দেশে-বিদেশে পুরষ্কৃত হন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের তিনি ছিলেন প্রিয় পাত্র। 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনিই সর্বপ্রথম এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার নোবেল প্রাইজ লাভ করেন। বিভিন্ন সংগঠনও রবীন্দ্রনাথকে বহুবার সংবর্ধিত করে। সমাজ সেবা : রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি ছিলেন না, বরং একজন প্রসিদ্ধ সমাজ সেবক ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি শান্তিনিকেতন নামক আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীনিকেতন নামক কর্মশালা তাঁর বিশেষ অবদান। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন সংবেদনশীল। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার মত মানসিকতাও তাঁর ছিল। সামজিক কুসংস্কার ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠ। কবির জীবনাবসান : ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ দিনটি ভারতবাসীর কাছে এক শোকাবহ দিন। এই দিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের জীবনাবসান ঘটে। কবির বিয়োগে বাংলা সাহিত্যে এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। By: M MAB ® Learning আসামের প্রাকৃ তিক সৌন্দর্য সূচনা : আসাম প্রাকৃ তিক সৌন্দর্যে এক অতু লনীর রাজ্য। প্রকৃ তি যেন তার অকৃ পণ হাতে আসামকে ঢেলে সাজিয়েছেন। আসামের সৌন্দর্যে অভিভূ ত হয়েছেন কত কবি সাহিত্যিক। বিস্মিত হয়েছেন আসামের শ্যামল সবুজ সমারোহে অনেক পর্যটকরাও। প্রাকৃ তিক সৌন্দর্য : পাহাড়, ঝর্ণা, নদ-নদী, অরণ্যাঞ্চলে পরিবেশিত আসাম যেন প্রকৃ তির লীলাভূ মি। সর্বত্র পূর্ণ যৌবনের উন্মত্ততা। পাহাড়ে রোদের লুকোচুরি, বনে নানা বর্ণের ফু ল, নদীর কুলকুল ধ্বনি, পাতার মর্মর শব্দ, ঝরণার চঞ্চল নৃত্য, দোয়েল, কোকিলের কলগান ও শ্যামল শস্যের হেলাদোলা এবং পল্লীর আলো বাতাস যেন সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস। শুধু তা নয়, বিশাল প্রান্তর জুড়ে রয়েছে চা-বাগান। চা-বাগানের সারি ও মাঝে মধ্যে আমলকী গাছ যেন কত নয়নাভিরাম। নদ-নদী : আসামের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অনেক শাখানদী প্রবাহিত। নদীর উভয় তীরে মানুষের বাস। এধার-ওধার ডিঙি নিয়ে পাড়ি দেবার দৃশ্যে মন আনন্দে ভরে উঠে। আসামের বৈচিত্রতা : আসামকে সাত বোনের দেশ বলা হয়। এখানে নানা জাতি, উপজাতির বাস। নানা ভাষা ও সংস্কৃতির মিলন ক্ষেত্র ই আসাম। হিন্দব দুর্গোৎসব, অসমীয়াদের বিহু এবং মুসলমানদের ঈদ উৎসবের খুশির প্লাবন মনে দোলা দেবার মত।
  • 13. ঐতিহাসিক কীর্তি কাহিনী : আসামের বুকে রয়েছে অনেক পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক কীর্তি কাহিনী। নীলাচল পাহাড়ে দেবী কামাখ্যার মন্দির, তেজপুরের মহাভৈরব, অগ্নিগড়, উমানন্দ, বশিষ্ঠাশ্রম, ভু বনেশ্বরীর ধরল মুকুট, শিবসাগরের বরপুখুরী, জয়সাগরের দেউল প্রভৃ তি প্রাচীন কীর্তি কাহিনীর অক্ষয় নিদর্শন আজও মানুষের কাছে আকর্ষণীয়। উপসংহার : আসামের সৌন্দর্য অতু লনীয়। আসামকে যাদুর দেশ বলা হয়। আমরা আসানের মানুষ। এর সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখা আমাদের পারম্পরিক দায়িত্ব। By: M MAB ® Learning